৩৬৫ দিন। ফের সেই ক্রোনোলজি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি কেন হঠাৎ করে লোকসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর থেকে বাংলায় অতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং হঠাৎ করে পুরনো একের পর এক মামলা ফাইল খুলে বের করে তৃণমূলের নেতাকর্মী এবং বুথ স্তরের নেতাদের গ্রেপ্তার করা শুরু করেছে তার সপক্ষে একের পর এক তথ্য প্রমাণ ফাঁস করে ভাজপা এবং কেন্দ্রীয় এজেন্সির আঁতাতের ক্রোনোলজি বলে দাবি করল তৃণমূল।
২৬ মার্চ কলকাতার নিউটাউনে ডিএলএফ আবাসনে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিং এজেন্সির পুলিশ সুপার পদমর্যাদার আধিকারিকের ফ্ল্যাটে প্রায় এক ঘন্টার বৈঠক হয় শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ঠ ভাজপা নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির। আর সেখানেই বাংলার কোন তৃণমূল নেতাদের বাড়িতে এনআইএ হানা দেবে তার তালিকা দেওয়া হয় বলে দাবি কুণালের। শুধু তাই নয়, একটি সাদা প্যাকেটও এনআইয়ের ওই অফিসারকে দেন বিজেপি নেতা। সেই প্যাকেটে টাকা ছিল কি না তা পুলিশের কাছে তদন্তের দাবি জানিয়েছে তৃণমূলের মুখপাত্র।
৬ এপ্রিল ভোররাতে শুভেন্দু অধিকারীর নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে হঠাৎ করেই প্রায় দু বছরের পুরনো মামলার তদন্তের অজুহাতে তৃণমূলের নেতাদের গ্রেপ্তার করতে হাজির হয়ে গেল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এন আই এর টিম। সাধারণ গ্রামবাসীরা কিছু জানার আগেই ভাজপা এবং এনআইএ দাবি করল তাদের উপরে নাকি তৃণমূল নেতাদের মদতে হামলা চালিয়েছে গ্রামবাসীরা।
তবে এই দুই ঘটনা যে একেবারে বিচ্ছিন্ন নয় বরং ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং সম্পূর্ণভাবে পূর্বপরিকল্পিত, সেই অভিযোগের স্বপক্ষে আজ তৃণমূল ভবনে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য প্রমাণ প্রকাশ্যে আনেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং তৃণমূলের দলীয় মুখপাত্র কুনাল ঘোষ।
কি অভিযোগ তৃণমূলের
পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে এন আই এর তদন্তকারীদের ওপরে গ্রামবাসীরা হামলা করেছে বলে অভিযোগ তুলে ভাজপা যখন দেশ জুড়ে সরব হয়েছে সেই সময়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ এবং ভাজপা নেতারা বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই ভূপতিনগর অপারেশন নিয়ে গোপন আঁতাত করেছিলেন বলে অভিযোগ তৃণমূলের। এমনকি, বিজেপির কাছ থেকে টাকা নিয়ে ২০২২ সালের পুরনো মামলার তদন্তে গিয়ে দুই তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও দাবি করলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এবং চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তৃণমূল দাবি করেছে এনআইএ-এর এসপি ধনরাম সিংহের বাড়িতে বৈঠক করেছেন ভাজপা নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি।
তৃণমূলের অভিযোগ, নিউটাউনে এনআইএ-এর এসপি ধনরাম সিংহের বাড়ির ভিজিটর বুকে জিকে তিওয়ারির নাম। ধনরাম সিংয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। জে জিরো সিক্স সিক্স ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন। গিয়েছিলেন সন্ধ্যা সাড়ে ছটায়। ছিলেন সন্ধ্যা সাতটা বাইশ মিনিট পর্যন্ত।
তৃণমূলের দলীয় মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ধনরাম সিং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অত্যন্ত আস্থাভাজন। এই ভদ্রলোকের সরাসরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছাকাছি সম্পর্ক আছে। হোম মিনিষ্ট্রি জড়িত। এটা পুরোপুরি বিজেপি ও এনআইএ-এর পরিকল্পিত চক্রান্ত। ধনরাম সিং ও জিতেন তিওয়ারির বিরুদ্ধে অবিলম্বে এফআইআর করে তদন্ত শুরু করুক রাজ্য পুলিশ। রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করছি এফআইআর করা হোক এদের বিরুদ্ধে। নির্বাচন কমিশন কি কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না? পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে এটা আমাদের দাবি। ভূপতিনগরে এনআইএ কী কাণ্ড করছেন তা দেখতে পাচ্ছেন। একদিকে তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের ডিস্টার্ব করা হচ্ছে, এবার বুথ কর্মীদের ডিসটার্ব করা শুরু হল। সন্দেশখালির পর বলা হয়েছিল লোকাল থানাকে জানাতে। ওরা আগে ঢুকে গেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন বিজেপির কথায় এনআইএ এ সব করছেন। বিজেপির নির্দেশে এ সব করছেন। এনআইএ আধিকারিকের বাড়িতে বিজেপি নেতারা বৈঠক করেছে। ২৬ মার্চ ২০২৪ তারিখে এনআইএ-এর এসপি ধনরাম সিংয়ের বাড়িতে যান বিজেপি নেতৃত্ব। সন্ধ্যায় বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি গিয়েছিলেন।
তবে শুধুমাত্র মৌখিক অভিযোগ নয় কুনাল ঘোষ সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং ভাজপার উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন আমার অভিযোগ যদি কেউ এটা মানতে না চান ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ভিডিয়ো রিলিজ় করে দেব। দেখিয়ে দেব, এনআইএর এসপির বাড়িতে ঢুকছেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি।
পাশাপাশি, টাকার লেনদেন হয়েছিল কি না, তারও তদন্ত হোক। এবং ওই দিন জিতেনের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন দেখা হোক। কুণাল বলেন, সে দিন আর কোথায় কোথায় জিতেন ফোন করেছিলেন, সেটাও তদন্ত করা হোক। ধনরামের মতো অফিসারেরা বিজেপির কাছ থেকে টাকা নিয়ে এনআইএর হয়ে তদন্ত করছে। অবিলম্বে ধনরামকে বাংলা থেকে দূর করে দিতে হবে। চৈত্র মাস চলছে। শুধু এনআইএ-রটা দিলাম। বৈশাখ পড়বে, কেন্দ্রীয় সংস্থার আরও দুই অফিসারের গল্প দেব।
পাশাপাশি রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ধনরাম সিং ও জিতেন তিওয়ারির বিরুদ্ধে অবিলম্বে এফআইআর করে তদন্ত শুরু করুক রাজ্য পুলিশ। এখন নির্বাচনের আচরণ বিধি চালু হয়ে গেছে। তদন্ত করতে এখন সময় বেছে নেওয়া হল! ভোর চারটের সময় বাড়িতে ঢুকে পড়লেন। আর একটা টিম ৫.৪৫ মিনিটে থানায় পাঠালেন! এটা চক্রান্ত। এনআইএ চক্রান্ত করছে। জিতেন্দ্র তিওয়ারি নিজের ঠিকানা দিয়েছেন ক্যামাক স্ট্রিটের, যেখানে তার মেয়ে থাকেন। ওখানে গিয়ে একঘণ্টা ছিলেন, কী আলোচনা থাকতে পারে! মহিলাদের ওপর অত্যাচার করেছে। মহিলারা প্রতিরোধ করবে, প্রতিরোধ করবে। দশজনের প্রতিনিধি দল যাবেন। নির্বাচন কমিশনের কাছে সময় চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ব্যবস্থা নিক নির্বাচন কমিশন
তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন অবিলম্বে আদর্শ আচরন বিধি ভঙ্গের অভিযোগের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে কেন্দ্রের কেয়ারটেকার সরকারে ক্ষমতাসীন ভাজপা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ব্যবহার করছে বলে যে তথ্য প্রমাণ প্রকাশে এসেছে তার ভিত্তিতে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, নির্বাচন কমিশন কি কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না? পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, এটা আমাদের দাবি। তদন্তের নামে মহিলাদের ওপর অশালীন আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আজ যারা তৃণমূল কংগ্রেসকে ভয় পায়, তারা এমন খোলা মাঠে খেলার সুযোগ তৈরি করে। কেন ধনরাম সিংকে বাংলা থেকে দূর করা হবে না!
তীব্র প্রতিবাদ অভিষেকের
লোকসভা ভোটের প্রক্রিয়া চলাকালীন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এন আই এর পুলিশ সুপার পদমর্যাদার আধিকারিকের সঙ্গে সরাসরি ভাজপা নেতার এই গোপন বৈঠকে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে বিরোধীদের উপরে প্রতিশোধ নেওয়ার চক্রান্ত ফাঁস হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে তৃণমূল
গোটা দেশে জাতীয় নির্বাচন কমিশন যখন আদর্শ আচরন বিধি চালু করে রেখেছে সেই সময় এইভাবে সরাসরি কেন্দ্রীয় এজেন্সির আধিকারিকদের সঙ্গে ভাজপা নেতাদের বৈঠকের ঘটনায় সাংবিধানিক সংকটের অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টে জরুরি ভিত্তিতে মামলা দায়ের করতে চলেছে তৃণমূল।