মোদীর কথায় চিড়ে ভিজল না, 19 এর থেকে ভোট হুড়হুড় করে কমছে
গৌতম লাহিড়ী । নয়াদিল্লি ।
৩৬৫ দিন। লোকসভা ভোটের দ্বিতীয় পর্যায়েও মোদীর কথায় ‘হিন্দু চিড়ে’ ভিজলো না। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের থেকে প্রায় দশ সতাংশ ভোট কমে যাওয়ায় ত্রিশংকু লোকসভার পথেই এগুণোর ইঙ্গিত মিলছে। উগ্র মুসলিম বিরোধি বিশোদগারের ফল হয়েছে হিতে বিপরীত। যেসব রাজ্যে বিরোধিদের মধ্যে মুসলিম ভোট বিভাজনের উল্লাসে বিজেপি তা থৈ তা থৈ নাচছিল, উল্টে সুসংহত মুসলিম ভোট বিজেপি বিরোধি শকতো প্রার্থীর ঝোলায় উপুড় হয়ে পড়েছে। ১৩ টি রাজ্যে ভোট হলো। কোন রাজ্যে ভোটের হার ২০১৯ কে ছাড়াতে পারলো না। কৌতূহল তৈরি হয়েছে। মোদী কি নীরবে এসব মেনে নেবেন?
অনেকের ধারণা শেষ পাঁচ দফার আগে ‘ভয়ংকর ‘কিছু করে বসতে পারেন। আতিপাতি করে খুঁজছেন। অনেকটা ‘খাচেছন কিন্তু গিলছেন না’ গোছের। কেউ বলছেন এবার ভাষণ দিতে এসে ভ্যাঁ করে কেঁদে দিতে পারেন। যদি কোনো হাওয়া তোলা যায়।
ভোট পর্ব শুরু হওয়ার আগে ‘প্রচন্ড অপরিপক্ক কিশোররা’ বিজেপির হয়ে ঢাক পিটালেন। দুদফার ভোটের পরে তারা কোথায়? বরং যোগেন্দ্র যাদবের মতো বিশ্লেষকরা বলছেন খোদ গোবলয়ের রাজধানী উত্তরপ্রদেশে আসন বাড়াতো দূরের কথা, উল্টে কমতে চলেছে। উনি জোর গলায় বলছেন, বিস্বাস না হলে নিজেরা মাঠে ঘাটে ঘুরে দেখে আসুন। এমনকি পঞ্চাশের নীচে নেমে যাবে বিজেপি আশির মধ্যে। এমনটা হলে ৪০০ থুড়ি ৩৭০। তা নয়। ২৭২ হবে তো?
আসলে লোকসভা ভোটের দিন ঘোষণার আগেই যেভাবে লোকসভার শেষ অধিবেশনে সংসদ ভবনে দাঁড়িয়ে ভবনের অধিবেশন কক্ষে দাঁড়িয়ে আব কি বার ৪০০ পার বলে যে স্লোগান তুলেছিলেন তাতে আতঙ্কে পড়ে গিয়েছে দেশের অধিকাংশ মানুষ। যারা ২০১৪ অথবা ২০১৯ সালেও মোদিকে ভরসাযোগ্য মনে করে ভোট দিয়েছিলেন ভাজপাকে তাদেরও মনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে এবারে মোদীফের ক্ষমতায় ফিরে এলে রাতারাতি গেরুয়াকরণ হয়ে যাবে গোটা দেশের। রাতারাতি হয়তো বা সংসদের প্রথম অধিবেশনে নোট বাতিলের মতো বাতিল হয়ে যাবে সংবিধান। ঘোষণা করা হবে গোটা দেশে মাছ মাংস এবং ডিম খাওয়ার নিষিদ্ধ করা হলো। কারণ কয়েকদিন আগেই মোদী নিজেই প্রকাশ্য জনসভা থেকে বলেছেন শ্রাবণ মাসে যারা মাছ-মাংস খায় তারা হিন্দুত্ব বিরোধী এবং দেশ বিরোধী মুঘল।
মহারাষ্ট্রে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্তমানে অজিত পাওয়ারের সঙ্গে এনডিএস শিবিরে যোগ দেওয়া ৬ গণের মত প্রবীণ নেতাও আজ স্বীকার করে নিয়েছেন, প্রথম দুই দফার ভোট যেভাবে ভাজপা তথা এনডিএ-র বিরুদ্ধে পড়ছে বলে মনে হচ্ছে তাতে মহারাষ্ট্রে আগামী দিনে ক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব হবে না। কেন্দ্রের মোদি সরকার যেভাবে রাজ্যপাল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে মাঠে নামিয়ে রাতারাতি মহারাষ্ট্রের মানুষের আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা প্রয়াত বাল থ্যাকারের তৈরি করা শিবসেনার উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে তাঁর ছেলে উদ্ধব ঠাকরেকে, তা হয়তো আখেরে লাভজনক হবে উদ্ধব ঠাকরের জন্যই।
উত্তরপ্রদেশে সব থেকে কম ভোট পড়লো হেমা মালিনীর মথুরা কেন্দ্রে। মাত্র ৪৬ শতাংশ। ‘বাসন্তি’ ছেড়েই ধানু ভাগলো। উনি হেলিকপ্টারে এসে মাঠে গিয়ে ধান কাটতে গিয়েছিলেন। ছবিটা ভাইরাল হলো। তাতেও জাঠ কিষাণের মন গললো না। মীরাঠে বিজেরি তিনবারের ঠাকুর সাংসদকে বাদ দিয়ে রামায়ণের অরূণ ‘রাম’ গোভিলকে মনোনয়ন দিলেন। একে রাম মন্দির তার উপর স্বয়ং শ্রীরাম। বনবাসেও রামচন্দ্রকে এতো কষ্ট করতে হয়নি, যতটা টিভির রামকে করতে হলো। অনেকেই ভোট দিলেও বলতে চান না, কাকে ভোট দিলেন? পুরানো এক মোদী ভকতোকে ফোন করে জানলাম, তিনি রামচন্দ্রকে ভোট দেননি। তাঁর মতো অনেকেই দেননি। বলছেন এই রাম তো বহিরাগত। বোম্বে থেকে এসেছে।
যেমন আমরোহা কেন্দ্রে ভোট পড়লো টেনেটুনে ৬৩ শতাংশ। এখানে দশ লক্ষ হিন্দু ভোটার। আটলক্ষ মুসলিম। সকল হিন্দুরা অভিমান করে বেরোলেন না। কিন্তু মুসলিম মহিলাদের দীর্ঘ লাইন কে না দেখেছে। কিছু টিভি ট্যানেল সেই ছবি দেখিয়ে হিন্দুদের উত্তেজিত করতে চেয়েছিল। ঐ যে বললাম- চিঁড়ে ভেজেনি। বিজেপির অন্যতম ধনী প্রার্থী মহেশ শর্মা। এক বিশাল হাসপাতাল চেনের মালিক। এলাকার গুঞ্জর দের জমি দখল করে বেসরকারি হাসপাতাল বানাচিছলেন। গ্রামবাসীরা বিরোধ করছিল।
উনি বলে বসলেন- আমার গুজ্জর ভোট দরকার নেই। সেই মন্তব্য উত্তরপ্রদেশের গুজ্জরদের গ্রামে গ্রামে ভাইরাল। সাধারণত গুজ্জররা মায়াবতীকে ভোট দিতো। এবার বিজেপির শর্মাকে শিক্ষা দিতে সকলেই ‘সাইকেল’ চিহেন ভোট দিয়ে দিলো। ভোট ভাগাভাগির গল্পটা গল্পই হয়ে রইলো। ভোটের ফল ভবিষ্যতবাণী করা যায় না। পরিস্থিতি টা বোঝা প্রয়োজন। বোঝা প্রয়োজন কেন ‘বিস্বগুরু’ কে বলতে হচছে ‘বিদেশি শকতি ‘তাঁকে হারাতে চায়। এই দশ বছরে বিশ্ব ঘুরে নাকি ভারতের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল করেছেন। সেসব কি মাঠেই মারা গেলো? অপেক্ষা করতে হবে ৪ জুনের জন্য।