সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়, নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর ভোট প্রচারের অধিকার কাড়া যায় না
৩৬৫ দিন। নয়াদিল্লি। প্রায় দেড় মাস আগে গ্রেফতার করে হেফাজতে রাখলেও দিল্লি আবগারি দুর্নীতি মামলায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণ পেশ করতে পারেনি ইডি। সংবিধান অনুযায়ী ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষণা তাঁকে আগামী ১ জুন পর্যন্ত অন্তর্বতী জামিন মঞ্জুর করছে সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্রের কেয়ারটেকার ভাজপা সরকার ও তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও এমন নির্দেশ দিলো দেশের সর্বোচ্চ আদালত। প্রায় ৪৯ দিন পর অন্তর্বর্তী জামিন পেলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আগামী ১ জুন পর্যন্ত তাঁর অন্তর্বতী জামিন মঞ্জুর করেছে সুপ্রিম কোর্ট। ২ জুন তাঁকে আবারও আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে তাঁকে। আদালত অবশ্য এদিন স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, জামিনে মুক্ত হলেও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি কোনও কাজ করতে পারবেন না। দিল্লির লেফটেন্যান্ট জেনারেলের অনুমতি ছাড়া তিনি কোনও সরকারি কাজে নিজেকে যুক্ত রাখ তে পারবেন না। ভিসা, পাসপোর্ট তদন্তকারী আধিকারিকের কাছে জমা রাখতে হবে। ইডির অনুমতি ছাড়া দেশ ছাড়তে পারবেন না কেজরিওয়াল।
পুরনো মামলায় ভোট ঘোষণা হতে গ্রেফতার কেন
চলতি সপ্তাহের সোমবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের জানিয়ে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট বর্তমান পরিস্থিতিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে অন্তর্বতী জামিন দিতে ইচ্ছুক। তার বিরোধিতায় গতকাল হঠাৎ করেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সহ দিল্লির শাসক দল আম আদমি পার্টির বিরুদ্ধেও কয়েক হাজার কোটি টাকার আবগারি দুর্নীতি মামলায় যুক্ত থাকার অভিযোগ করে চার্জশিট জমা দেয় সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু এক রাতের মধ্যে চার্জশিট তৈরি করে সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া সত্ত্বেও আজ বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সিকে তীব্র ভর্ৎসনা করে বলেন, ২০২২ সালের অগাস্ট মাসে যেখানে ইসিআইআর বা লিখিত অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট, সেখানে মাঝখানে প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় কোন তদন্ত না করে লোকসভা ভোটের দিন ঘোষণা হতেই তড়িঘড়ি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করার কি প্রয়োজন ছিল?
বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি সনজিৎ খান্নার এই ভর্ৎসনার মুখে পড়ে মোদি সরকারের প্রতিনিধিত্ব করতে আসা দেশের চলে সেটার জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, আপনি যদি একদিনের জন্য অরবিন্দ কেজরিওয়ালদের মতো দুর্নীতিগ্রস্ত একজন মুখ্যমন্ত্রীকে শুধুমাত্র প্রচারের জন্য জামিন দেন তাহলে দেশের ইতিহাসে কলঙ্কিত হবে। সলিসিটর জেনারেলের এমন বক্তব্য শোনার পরে রীতিমতো ক্ষোভের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত বলেন ইসিআইআর নথিভুক্ত করার পরে দেড় বছর পরে যদি আপনাদের কেন্দ্রীয় এজেন্সি তদন্ত না করতে পারে অথবা গ্রেফতার না করে তাহলে সুপ্রিম কোর্ট ২১ দিনের জন্য অন্তর্বতী জামিন দিলে কোন ক্ষতি হবে না। কোন মামলার প্রেক্ষিতে কি ব্যবস্থা নিতে হয় সেটা আপনার থেকে সুপ্রিম কোর্ট অনেক ভালো বোঝে। প্রসঙ্গত, দিল্লির ৭ আসনে আগামী ২৫ মে লোকসভা নির্বাচনের ষষ্ঠ দফায় ভোট হবে। গত মঙ্গলবার এই মামলার আবেদনের শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, কেজরিওয়াল দিল্লির নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী। এবং তিনি স্বভাবগত অপরাধী নন। একটি রাজনৈতিক দলের সর্বাধ্যক্ষ হিসেবে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দলের পাশে দাঁড়ানো জরুরি। বিশেষত তিনি কোনও সন্ত্রাসবাদী বা দাগি অপরাধী নন। তাহলে তাঁর জামিনের ব্যাপারে আপত্তি কীসের!
ভোটের মাঝেই চূড়ান্ত রায়ের সম্ভাবনা
অন্যদিকে আগামী ২ জুন অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে সুপ্রিমকোর্টের কাছে আত্মসমর্পণ করে জেলে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও আম আদমি পার্টির পক্ষ থেকে আইনজীবী কপিল সিব্বল সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন জানান চারজন যেহেতু লোকসভা ভোটের ফলাফল প্রকাশ হবে তারপরে আত্মসমর্পণের কোন দিন স্থির করতে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে জানিয়ে দেয় নির্বাচনের ফলাফল কবে বেরোবে তার উপরে নির্ভর করে সুপ্রিম কোর্ট অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে অন্তর্বতী জামিন মঞ্জুর করছে না। এই জামিন দেওয়া হচ্ছে প্রথমত তিনি যাতে নির্বাচনে প্রচারে অংশ নিতে পারেন এবং দ্বিতীয়তঃ এখনো পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় এজেন্সি কোন তথ্য প্রমাণ আদালতের কাছে পেশ করতে পারেনি তার জন্য। এর পাশাপাশি তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিচারপতি সঞ্জীব খান্না কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে জানিয়ে দেন আগামী সপ্তাহের মধ্যেই আমরা এই মামলার শুনানি সম্পন্ন করে রায় ঘোষণা করতে পারি। আপনারা কিন্তু প্রস্তুত থাকবেন।
স্বাগত জানালেন মমতা
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে সুপ্রিম কোর্ট অন্তর্বতী জামিনে মুক্তি দিচ্ছে জানার পরেই মমতা নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে লেখেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত অরবিন্দ কেজরিওয়াল অন্তর্বতী জামিনে মুক্তি পাচ্ছে। বর্তমান লোকসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে এটা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।