বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী হাজী নজরুল বললেন সন্দেশখালিতে তো বটেই, ৭ বিধানসভাতেই জিতব
রিপোর্ট সৌগত মণ্ডল ছবি সৌরভ দে। ৩৬৫ দিন। সন্দেশখালির মহিলাদের ধর্ষিতা এবং নির্যাতিতা। -বলে গোটা দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরার যে চক্রান্ত বিজেপি আর সিপিএম মিলে করেছে তার জবাব দেবে আমাদের মেয়েরা। বিজেপি যেভাবে বাংলার মহিলাদের সম্মানহানি করেছে শুধুমাত্র ভোটের জন্য তার জবাব মিলবে বসিরহাটের ভোটের ফলাফলে। ভারতীয় জনতা পার্টির প্রায় সকলেই সন্দেশখালিকে ইস্যু বানানোর মরিয়া। চেষ্টায় ঝাঁপিয়ে পড়লেও বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে জয়ের ব্যাপারে এতটাই আশাবাদী হাজী নুরুল ইসলাম।
সন্দেশখালি ভাজপা মন্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়ালের বক্তব্য সহ স্টিং অপারেশনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরেই গিয়েছিলাম হাজী নুরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে। প্রচন্ড গরমে নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়ে বিশাল এলাকার একপ্রান্ত থেকেআরেক প্রান্ত ছুটে বেড়াতে গিয়ে কয়েকদিন আগেই হিট ওয়েভে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাকে। সঙ্গী সাথীরা বা জেলার প্রথম সারির তৃণমূল নেতারাও তাঁকে বারে বারে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে বললেও ঘরে বসে থাকতে রাজি নন বসিরহাটের ভূমিপুত্র লড়াকু নুরুল ইসলাম।
প্রশ্ন ২০০৯ সালে সকলকে চমকে দিয়ে টানা আট বারের বিজয়ী সিপিএমকে হারিয়েছিলেন আপনি। তার থেকে এবারের লড়াই কি আরো কঠিন?
হাজী নুরুল ইসলাম ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে যখন বসিরহাট কেন্দ্র থেকে দিদি আমায় প্রার্থী করেছিলেন সেই লড়াই ছিল অনেক বেশি কঠিন। এবারে বসিরহাট লোকসভার লড়াই তো অনেক সহজ। ব্রিগেডের মঞ্চে দিদি আমার নাম প্রার্থী ঘোষণা করার পর মুহূর্ত থেকেই আমি জানি এখানে আমি জিতব।
প্রশ্ন এবারের লোকসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণার অনেক আগে থেকেই গোটা দেশের নজরে রয়েছে আপনারলোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সন্দেশখালি। প্রধানমন্ত্রী ছুটে আসছেন, ভাজপার কেন্দ্রীয় নেতারা। ছুটে আসছেন, তারপরেও সন্দেশখালি বা বসিরহাটে জয় নিয়ে এত। আত্মবিশ্বাস পাচ্ছেন কোথা থেকে?
হাজী নজরুল ইসলাম এটাই তো সব থেকে বেশি সুবিধে হয়েছে। ২০০৯ সালে যখন তৃণমূলের টিকিট বসিরহাট কেন্দ্র থেকে লড়াই করে ছিলাম তখন ক্ষমতায় ছিল। সিপিএম। আর তারপরে আমি পাঁচ বছর সাংসদ থেকে যত। কাজ করেছি তা বসিরহাটের প্রত্যেকটা মানুষ জানে। ২০১১ সালে ও যখন দিদি মুখ্যমন্ত্রী হলেন তারপর থেকে রাজ্য জুড়ে যে বিপুল উন্নয়নের কাজ করেছে তাতে আমল বদলে গিয়েছে বসিরহাট থেকে শুরু করে গোটা এলাকা। এখন তো মানুষের কাছে উন্নয়নের খতিয়ান দিয়ে ভোট পাওয়া যাবে। অবশ্য বসিরহাটের মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাওয়ার দরকারই হচ্ছে না। সকলেই বলছেন আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। প্রধানমন্ত্রী আসুন আর যিনি আসুন - তাঁদের দলের প্রার্থী ভোটে লড়াই করছে প্রচারিত আসতে হবেই। তবে যত বেশি নেতারা আসবে ততই মানুষের কাছেআরও স্পষ্ট হয়ে যাবে গত ১৩ বছরে দিদি এই এলাকার কতখ ানি উন্নয়ন করেছে আর যে নেতারা বাইরে থেকে এসে এখ ানে এত বক্তব্য রাখছে তাদের এলাকার উন্নয়নের ছবি সামনে রাখলেই সামনে এসে যাচ্ছে সত্যিটা।
- বাংলা কথা গোটা দেশের প্রায় সমস্ত সর্বভারতীয় সংবাদ
- মাধ্যমের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার সমস্ত কেন্দ্রীয় এজেন্সি
- এবং সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দল যেখানে টার্গেট করেছে
- এত সহজে জয়ের আত্মবিশ্বাসের জন্য রয়েছে নিজের
- সাংগঠনিক দক্ষতার উপরে প্রবল আস্থা। নিজেই জানিয়ে
- দিলেন তার এই আত্মবিশ্বাসের রহস্য। হাজী বলেন আমি
- বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি। ক্ষমতায় থাকিআর
না থাকি এলাকার মানুষ জানে এখানেই যখন প্রয়োজন আমাকে পাওয়া যায়। বসিরহাট লোকসভার সাতটা। বিধানসভার প্রত্যেকটা পাড়া আমি চিনি, আর প্রত্যেক পাড়ার বাচ্চারা পর্যন্ত চেনে আমাকে। অন্যদিকে বিরোধীদের মধ্যে। বিজেপির রেখা পাত্র সন্দেশখালিতে নিজের পাত্র পাড়ার * বাইরে কিছু চেনেন না। সিপিএমের নিরাপদ সরদারকে তো।
* বিধানসভা ভোটেই তাঁর এলাকার মানুষ ছুঁড়ে ফেলে • দিয়েছেন অন্য বিধানসভার মানুষ কেন ভোট দিতে যাবে যখন তাঁর নিজের এলাকার লোক ভোট দেয় নি?
* প্রশ্নঃ সন্দেশখালিতে মহিলাদের উপরে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। তার প্রেক্ষিতে দেশ জুড়ে যে সমস্ত সমালোচনা হচ্ছে তার জবাব কিভাবে দিচ্ছেন?
হাজী নুরুল ইসলাম দেখুন পাপ বাপকেও ছাড়ে না। সন্দেশখালিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করার জন্য সিপিএম আর বিজেপির কয়েকটা নেতা যে ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পেতেছিল তা ওদের নিজেদের লোকেরাই ফাঁস করে দিয়েছে। সেই ভিডিও সকলেই টিভিতে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখে নিয়েছে এর মধ্যেই। আমাদের নতুন করে কিছু বলতে হবে না। বিজেপি আর সিপিএম সন্দেশখ ালীর মানুষকে নিয়ে রাজনীতির ব্যবসা করার জন্য যে ষড়যন্ত্র করেছিল তা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পরে এখন নিজেরাই মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাবে কোন মুখে তাই বুঝতে পারছে না।
পরিসংখ্যান বলে, সন্দেশখালি, বাদুড়িয়া, হাড়োয়া, - মিনাখাঁ, হিঙ্গলগঞ্জ, বসিরহাট উত্তর ও বসিরহাট দক্ষিণ- এই ৭ বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে বসিরহাট লোকসভা। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি। একুশের বিধানসভা ভোটের নিরিখে দেখলে, ৭ বিধানসভাতেই জিতেছে তৃণমূল। হাড়োয়ার বিধায়ক হওয়ার আগে ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রথমবার সাংসদ পদে বসেছিলেন হাজি নুরুল ইসলাম। ২০১৯ লোকসভা। ভোটে নুসরাত জাহান এখান থেকে তৃণমূলের টিকিটের জিৎ এর সংসদ হলেও এবারে আর তাঁর উপরে আস্থা -রাখতে পারেননি মমতা।
সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক তথা এবারে বসিরহাট কেন্দ্র থেকে সিপিএম প্রার্থী নিরাপদ সরদার এবং ভাজপার বসিরহাট লোকসভার প্রার্থী রেখা পাত্র বারে বারে অভিযোগ করে চলেছেন সন্দেশখালি সংলগ্ন বিধানসভা কেন্দ্রগুলিকে নিয়ে যে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র সেখ ানকার তৃণমূল নাকি মহিলাদের ভোট পাবে না। তার প্রেক্ষিতে বসিরহাটের প্রাক্তন সাংসদ হাজী নুরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, সাংগঠনিক দিক থেকে কিভাবে মহিলা সংক্রান্ত অভিযোগের জবাব দেবেন?
হাজী নুরুল ইসলাম বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে মহিলাদের যত রকম উন্নয়ন হয়েছে গোটা দেশে স্বাধীনতার পর থেকে কোন রাজ্যে তেমন হয়নি। দিদি লক্ষীর ভান্ডার দিয়েছে। স্বাস্থ্য সাথী দিয়েছে বাড়ির মহিলাদের নামে, কন্যাশ্রী দিয়েছে স্কুলের মেয়েদের জন্য। আর দিদির আমলেই বাংলায় মেয়েরা সবথেকে বেশি নিরাপদ। তাই দিদির আমলে বাংলার মেয়েরা অত্যাচারিত বলে মিথ্যে কথা বিজেপি রটালেও তা বাংলার মানুষ কোন ভাবে বিশ্বাস করবে না। আর বিজেপি এবং সিপিএমের মিথ্যে কথার মুখোশ খুলে দিতে প্রত্যেক বুথে ৫ জন করে মহিলা কর্মী প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে যাবেন তাদের সমস্ত প্রশ্নের জবাব দিতে। দিদি যে বঙ্গ জননী বাহিনী তৈরি করে দিয়েছিলেন বাংলার নারী শক্তির প্রতীক হিসেবে সেই বঙ্গ জননী বাহিনীর মেয়েরাই নিজের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিয়েছে বিজেপি সিপিএমের কৃৎসার জবাব দেওয়ার জন্য।