মমতার বক্তব্যের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযোগ প্রমাণিত
৩৬৫ দিন। তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে। ঝাড়গ্রামের জনসভা থেকে মমতা রীতিমতো আক্ষেপের সঙ্গে বলেছিলেন কিভাবে বাংলায় রামকৃষ্ণ মিশন এবং ভারত সেবাশ্রমের কিছু সাধু মহারাজ গেরুয়া বসন পরে ভাজপার তাঁবেদারি করছেন তাদের হয়ে ভোট চেয়ে। মমতার বক্তব্যের মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যেই পুরুলিয়ায় নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী প্রচারের মঞ্চে গ্যাঁট হয়ে বসে থাকতে দেখা গেল ভারত সেবাশ্রমের এক সাধু মহারাজকে। আর ভারত সেবাশ্রম এর সাধু মহারাজকে পাশে বসিয়েই আগাগোড়া মোদি জ্ঞান দিয়ে গেলেন ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে মিশিয়ে কতখানি খারাপ কাজ করে চলেছেন মমতা।
যোগী আদিত্যনাথ এর উত্তরপ্রদেশের যেখানে গেরুয়া বসন পরে ধর্মের নামে রাজনীতি করাটাই নতুন ফ্যাশন হিসেবে চালু করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি বাংলাতেও সেই ফ্যাশন চালু করার মরিয়া চেষ্টায় নেমে পড়েছেন নরেন্দ্র মোদী নিজেও। তাই পুরুলিয়ায় গ্যাংগারা ময়দানে ভারতীয় জনতা পার্টির লোকসভা প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর নির্বাচনী প্রচারে মোদির মঞ্চে গেরুয়া বসন পরে আগাগোড়া বসে থাকলেন ভারত সেবাশ্রম সংঘের প্রধান নিত্যসুধানন্দ মহারাজ। তাও আবার ভাজপার বিদায়ী সাংসদ তথা এবারের লোকসভা প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর পাশের চেয়ারেই।
কি বলেছিলেন মমতা
গতকাল শনিবার হুগলির গোঘাটের সভা থেকে ভারত সেবাশ্রম সংঘ ও রামকৃষ্ণ মিশনের একাংশের সমালোচনা করে মমতা তাদের বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগ তোলেন। মমতা বলেন, আমি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেই বলছি, ওঁরা অনেক মানুষের কাজ করেন। হ্যাঁ, কেউ কেউ করে না। সব সাধু তো সমান হয় না। আমাদের মধ্যেও কি আমরা সবাই সমান? এই যে বহরমপুরে একজন মহরাজ আছেন, কার্তিক মহারাজ। ভারত সেবাশ্রম সংঘকে আমি খুব শ্রদ্ধা করতাম। আমার শ্রদ্ধার্থের তালিকায় তারা দীর্ঘ দিন ধরে আছে। কিন্তু যে লোকটা বলে, তৃণমূল কংগ্রেসের এজেন্ট বসতে দেব না, সেই লোকটাকে আমি সাধু বলে মনে করি না। কারণ, তিনি ডাইরেক্ট পলিটিক্স করে দেশটার সর্বনাশ করছেন। আমি আইডেন্টিফাই করেছি, কে কে করেছেন। ইসকনেরও একটি মন্দির আছে, মিশন আছে। এরকম একটা দুটো তো থাকবেই। দিল্লি থেকে নির্দেশ আসে, বলে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য বলো। কেন করবে সাধু সন্তরা এ কাজ? রামকৃষ্ণ মিশনকে সবাই শ্রদ্ধা করে। ওদের কাছে একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। তাদের আমি ভালোবাসতে পারি, দীক্ষা নিতে পারি, কিন্তু রামকৃষ্ণ মিশন ভোট দেয় না কোনও দিন। এটা আমি জানি। তাহলে আমি অন্যকে কেন ভোট দিতে বলব?
গোঘাটের সভা মমতা আরও বলেন, আসানসোলে একটা রামকৃষ্ণ মিশন আছে। রামকৃষ্ণ মিশনকে আমি কী হেল্প করিনি? সিপিএম যখন খাবার বন্ধ করে দিয়েছিল, আপনাদের অস্তিত্ব নিয়ে স্বাধিকার নিয়ে আমি কিন্তু পুরো সমর্থন দিয়েছিলাম। সিপিএম আপনাদের কাজ পর্যন্ত করতে দিত না। ইস্কনেও ৭০০ একর জমি দিয়েছি ইস্কন শহর করবার জন্য। ইস্কনেরও একটি মন্দির আছে, মিশন আছে। এরকম একটা দুটো তো থাকবেই। দিল্লি থেকে নির্দেশ আসে, বলে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য বলো। কেন করবে সাধু সন্তরা একাজ?
মমতাকে আক্রমণ মোদির
বাংলায় গেরুয়া বসন পরিহিত রামকৃষ্ণ মিশন এবং ভারত সেবাশ্রমের গুটি কয়েক সাধু সন্ন্যাসীকে যেভাবে নিজেদের এজেন্ট বানিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভাজপা রাজনীতি করছিল মমতার বক্তব্যে তা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় আজ পুরুলিয়ার জনসভা মঞ্চ থেকে রীতিমতো মরিয়া হয়ে মমতাকে আক্রমণ করেন নরেন্দ্র মোদি। মোদি বলেন, যে তৃণমূল সরকার নির্বাচনের সময় বাংলার মানুষকে ভয় দেখিয়েছিল এবং হুমকি দিয়েছিল, তারা এবার সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছে। আজ দেশে এবং বিশ্বে ইসকন, রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সংঘ সেবা ও নৈতিকতার জন্য পরিচিত, কিন্তু আজ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে তাদের হুমকি দিচ্ছেন, খোলা মঞ্চ থেকে সতর্ক করছেন। সারা বিশ্বে এই মিশনের সাথে যুক্ত লক্ষ লক্ষ অনুসারী রয়েছে এবং তাদের একমাত্র লক্ষ্য জনগণের সেবা করা। কিন্তু বাংলার সরকার তাঁর দিকে আঙুল তুলেছে এবং হুমকি দিচ্ছে। এত সাহস! শুধু তাদের ভোট ব্যাংককে খুশি করার জন্য।
ভারত সেবাশ্রমের গোপন লালিত ভাজপেয় প্রেম
দীর্ঘকাল ধরে ভারত সেবাশ্রমের একশ্রেণীর সাধু মহারাজ এবং সন্ন্যাসীর যে গোপন লালিত ভাজপেয় প্রীতি ছিল, তার অনুসারী হয়েই এবারের লোকসভা নির্বাচনেও ভাজপেয় রাজনীতিকে সমর্থন করার জন্য মমতার বিরোধিতায় মাঠে নেমে পড়েছেন কয়েকজন সাধুসন্ত। যাদের মধ্যে অন্যতম অবশ্যই কার্তিক মহারাজ। যার ভাজপেয় প্রীতি মমতা প্রকাশ্যে এনে দেওয়ার পরে তাঁর সমর্থনে মাঠে নেমে পড়তে হয়েছে নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে শুভেন্দু অধিকারীকেও।