লাঠিখেলা, গদা নিয়ে স্টান্ট প্রচার নয়,নিরাপত্তারক্ষী ছাড়াই বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন কীর্তি আজাদ
ইন্দ্রনীল সাহা। দুর্গাপুর। ৩৬৫দিন। গায়ে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি, পাজামা। মাথায় জড়ানো হলদেটে সুতির কাপড়। পায়ে সাধারণ চামড়ার চটি। চোখ মুখ যেন ঝকঝক করছে। চেহারায় ক্লান্তির লেশমাত্র নেই। দেখে কে বলবে, মধ্যরাতে নির্বাচনী বৈঠক সেরে বাড়ি ফিরেছেন। মাত্র কয়েক ঘন্টার ঘুম। আবার ভোর হতেই দুর্গাপুরের ৪৪ ডিগ্রির গরম মাথায় নিয়ে প্রায় ১০০ কিলোমিটারের পথ পেরিয়ে এসেছেন। গত এক মাস ধরে এভাবেই তিনি দুর্গাপুরের প্রত্যন্ত এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। কীর্তি আজাদ নিজেকে ফিট প্রমাণ করার জন্য মাঠে-ঘাটে সিআরপিএফ পরিবেষ্টিত হয়ে গদা কাঁধে ঘুরতে হয় না কিংবা লাঠিও খেলতে হয় না। তিনি আদতে একজন স্পোর্টসম্যান। ৮৩ এর বিশ্বকাপের ভারতীয় ক্রিকেট দলের সদস্য। ফলে শারীরিক ও মানসিকভাবে তিনি কতটা সবল তা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। অসাধারণ কথা বলতে পারেন। যদিও তাকে লোক জমাতে নিয়ম করে কুকথা বলতে হয় না। ব্রাহ্মণ পরিবারের ছেলে কীর্তির ধর্ম নিয়ে অগাধ জ্ঞান রয়েছে। মোদি শাহের মতো বিভেদের ধর্ম নয়, তার উদার হিন্দু ধর্ম শেখায় সকলকে সংঘবদ্ধ করতে। কীর্তি অত্যন্ত সজ্জন এক ব্যক্তি। বাড়ির রাজনৈতিক পরিবেশে তার বেড়ে ওঠা, মানুষের সঙ্গে মেলামেশা। তাই যে কারুর কাঁধে হাত রেখে কথা বললেই তার আন্তরিকতা ছুঁয়ে যায়। পজিটিভ ভাইভস অপরকে চাঙ্গা করে দেয়। এবার সেই কীর্তি বলছেন দুর্গাপুর কে আজাদ করব। ‘ম্যায় আজাদ হু, হাম আজাদ হ্যায়’। সোমবার মন্তেশ্বর বিধানসভার মাঝেরগ্রামে ভোর থেকেই ভিড় জমছিল। কেন না কীর্তির গ্রামে আসার খবর রাতেই এসে পৌঁছেছিল। ফলে সূর্যের দাপট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাস্তার মোড়ের ভিড়টাও বাড়তে থাকে। জনগণের ভিড় দেখেই ড্রাইভারকে থামিয়ে দিতে বলেন কীর্তি। গাড়ির থেকে নেমে সোজা তৃণমূলের কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই এক নিমিষে ভিড়ের মধ্যে মিশে গেলেন। দেখে খানিকটা অবাকই হলাম। কারণ একবারের জন্য মনে হল না বর্ধমান দুর্গাপুরের তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদ এই গ্রামে প্রথমবার এসেছেন। বরং মনে হল মাঝেরগ্রামের মানুষদের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের পরিচয়। একজন বললেন, দাদার সিকিউরিটি কোথায়? জবাবে গাড়ির ড্রাইভার বললেন, দাদার তো কোন সিকিউরিটি নেই। গত এক মাস ধরে তো দলের কর্মীদের নিয়ে ঘুরছেন। যারা সিআরপিএফ নিয়ে গ্রামের রাস্তায় ঘুরে কীর্তি আজাদকে কুকথা বলে বহিরাগত তকমা সেটে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। দুর্গাপুরের মানুষ কীর্তিকে যেভাবে আপন করে নিয়েছে তাতেই ভাজপার বহিরাগত তত্ত্বকে কীর্তি হাঁকিয়ে মাঠের বাইরে ফেলে দিয়েছেন। কীর্তির রোড শোয়ে কেউ ফুল ছুঁড়ে স্বাগত জানালেন আবার কেউ পরিয়ে দিলেন রজনীর মালা। রোড শোয়ের ফাঁকেই বাড়ির দাওয়াতে বসে মহিলাদের সঙ্গে কথা বললেন তিনি। রাজ্য সরকারের লক্ষ্মীর ভান্ডারের সুবিধা পাচ্ছেন কিনা তারও খোঁজ নিলেন। মাঝেরগ্রামে একদা বর্ধমানের দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএম নেতা ও রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য বিনয় চৌধুরীর বাড়ি ছিল। যদিও এখন গ্রামে একটিও লাল ঝান্ডা দূরবীন দিয়েও চোখে পড়ল না। একদা লালদুর্গ মাঝেরগ্রামের দাঁড়িয়েই সিপিএম ও ভাজপাকে হটানোর ডাক দিলেন কীর্তি। গ্রামের সরু রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলল তৃণমূল প্রার্থীর প্রচার। রাস্তার দুধারে তখন শুধু মাত্র গ্রামবাসীদের ভিড়। প্রত্যেকেই হাত তুলে সমর্থন জানাচ্ছেন তাদের ঘরের ছেলেকে। খানিকটা পথ যেতেই মাঝেই পরল পঞ্চদূর্গার মন্দির। সেখানে বেশ কিছুক্ষন পুজোপাট সেরে বেরোলেন কীর্তি। বেরিয়ে তৃণমূল প্রার্থী স্পষ্ট বললেন, ছাগলে কিনা খায় পাগলে…। মানুষটার কথা বলার কোনও ধরণ নেই। সেই মানুষ বিজেপি এবং আরএসএসের হয়। যারা মিথ্যে কথা বলে, হিন্দু ধর্মের নামে মানুষকে বোকা বানায়, উস্কানি দেয়। যে পাগল হয় তাকে বারবার বুঝিয়ে কোনো লাভ হয় না। দিলীপ ঘোষ ও তার দল বিজেপি হিন্দু ধর্মের নামে ভারতের মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ ছড়াচ্ছে। দুর্গাপুরের মানুষ লোকসভার ভোটে তার জবাব দিয়ে বিজেপিকে বুঝিয়ে দেবে। নিজের বক্তব্য শেষ করেই আবারও হুডখোলা জিপে চড়ে এগিয়ে যেতে লাগল কীর্তি। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক মাঝ বয়সি লোক বললেন, ‘এবার দুর্গাপুর সত্যিই বলবে হাম আজাদ হ্যায়’।