প. মেদিনীপুরে মমতার বক্তব্য, দেব জিতলে আমার উপহার ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান
অশোককুমার মণ্ডল। পশ্চিম মেদিনীপুর। ৩৬৫ দিন। ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে ৪২ ডিগ্রি তাপপ্রবাহে একের পর এক জনসভা। আর ভিড়ে ঠাসা সেই জনসভা থেকে ভাজপাকে হারানোর ডাক দিলেন মমতা। আজ পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলায় ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূলপ্রার্থী দেব ওরফে দীপক অধিকারীর সমর্থনে সভা করলেন মমতা। সভামঞ্চ থেকে দেবের ভূয়সী প্রশংসা করতে দেখা যায় মমতাকে। মমতা বলেন, দেব আমাকে বলেছিল দিদি আমাকে ছেড়ে দাও। আমি বলেছিলাম ছাড়ব না। আজ মত ঘাটাল ও পশ্চিম মেদিনীপুর এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের জন্য রাজ্যের খরচেই ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান তৈরির উপহার দেওয়ার ঘোষণা করার পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের রায় ২৬০০০ চাকরি বাতিল নিয়ে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ করেন মমতা।
কী বললেন মমতা
মানুষ খেকো বাঘ দেখেছেন, চাকরি খেকো মানুষ দেখে ছেন? চাকরি খেকো বিজেপি দেখেছেন? চাকরি থেকো সিপিএম দেখেছেন? চাকরি খেকো রাম বাম শ্যাম দেখেছেন? চাকরি খেকো বিজেপি সিপিএমকে চিনে নিন।
চক্রান্ত করে চাকরি খেয়েছে। ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের পিছনে রয়েছে বড় চক্রান্ত।
১২ শতাংশ সুদ সহ গোটা জীবনের বেতনের টাকা ফেরত দিতে বলেছে। এটা কি মগের মুলুক নাকি! পারবেন যদি আপনার সারা জীবনের টাকা ফেরত দিতে বলা হয় দিতে?
২৬ হাজার চাকরি খেয়ে নিল? এইভাবে চাকরি খাওয়া যায়। তারা তো শ্রমটা দিয়েছে। আপনারা কী চান আরএসএস-কে স্কুলের দায়িত্ব দিতে?
বিচারব্যবস্থার প্রতি আমার শ্রদ্ধা রয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্র আজ কাঁদছে। সংশ্লিষ্টদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে অনেক চাকরি বাতিল করা হয়েছে। এখন স্কুলগুলো কীভাবে চলবে? মনে হচ্ছে কিছু লোক তাদের নির্বাচনী দায়িত্বের অংশ হিসাবে চান না যাতে কেবল কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির সাথে যুক্ত ব্যক্তিরাই এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকে। তিনি বলেন, একজন আইনজীবী হিসেবে আমি কিছু আইনি বিষয় সম্পর্কে অবগত। আমি পুনরাবৃত্তি করছি যে কিছু ভুল ছিল যা এর আমরা সংশোধন করব। কিন্তু কাজ হারানো প্রায় ২৬ এক হাজার মানুষের পরিবারের সদস্যরা এখন অনাহারে – থাকবেন।
আমরা চাকরি দিচ্ছি ওরা চাকরি কাড়ছে। মেদিনীপুরের গদ্দার বোমা ফাটাবে বলে ২৬ হাজার ছেলে মেয়ের চাকরি খেয়ে নিল। যেন মগের মুলক। আমাদের দপ্তর সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। কোন কাজে ভুল হলে সংশোধন করতে বললে করে নেওয়া যায়। সবাই সঠিক কাজ করতে পারে না। মানুষের অধিকার আছে ভুল করার। তাই বলে বোমা ফাটাবে বলে ২৬০০০ চাকরি কেড়ে – নিতে পারি না। এত বড় সাহস!
উনি বিজেপিতে গেলেন কেন? টাকার রক্ষা করতে হবে, না হলে ইডি, সিবিআই লেগে যাবে। তাই নিজেকে বাঁচানোর জন্য গিয়েছেন। সব থেকে বেশি গদ্দারী যে করেছে সে ওই মেদিনীপুরের মীরজাফর। লোডশেডিং করে ভোট দখল করা, গুন্ডামি করে টাকা দিয়ে ভোট দখ ল করা বুঝে নেব। আসলে ওরা বুঝতে পেরেছে সবাই চাকরি পেলে বিজেপি উঠে যাবে। তাই চাকরি বন্ধ করছে।
১০ লক্ষ চাকরি রেডি করে রেখেছি। বিজেপি, সিপিআইএম-এর জন্য করতে পারছি না। ভুলে যাচ্ছে আমরা বিচার পাওয়ার জন্য বিচারালয়ের জন্য আসায় থাকি। কত কেস বছরের পর বছর পড়ে আছে। বিজেপির জন্য আমার প্রশ্ন কেউ পেয়েছে ১৫ লাখ টাকা?
বিজেপি দেশটাকে বিক্রি করে দিয়েছে। মনুষ্যত্ব বিক্রি করে দিয়েছে। এনআরসি নিয়ে এসেছে। সিএএ নিয়ে এসেছে। ইউনিফর্ম সিভিল কোড নিয়ে এসেছে। কিন্তু আমরা লড়াই করে যাব। লক্ষীর ভান্ডার নিয়ে ট্যাঁ ফোঁ করবে না। বলছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করবে, কাঁচকলা খাও। পেট ঠান্ডা থাকবে। ওটা তোমাদের টাকা নয়, মা-বোনেদের টাকা। আত্মসম্মানের টাকা। হাত দিয়ে দেখুক, মায়েদের হাতা-ঝান্ডার খেলা দেখেছেন? বটি দিয়ে তরকারি কাটার খেলা দেখেছেন?
ভয় দেখাচ্ছে ভোটের পরে এনআইএ করব আরে তুই থাকবি না তো ভোটের পরে এন আই এ কোথা থেকে দিবি? আবার বলছে ভোটের পরে এনআইএ দিয়ে দেবে। আরে তুই থাকবি না, এনআইএ কী দিবি?
বিজেপি এবারে ক্ষমতায় আসছে না এটা জেনে রাখুন। তাই ঘাবড়ে গেছে। ঘাবড়ে গেছে বলে পাগলের মত যা খুশি করে বেড়াচ্ছে।
চারদিকে মাংসের দোকান বন্ধ ডিমের দোকান বন্ধ মাছের দোকান বন্ধ। আরে ভাই মানুষ কি খাবে না খাবে সে কি বিজেপি ঠিক করে দেবে!
কঙ্কাল কান্ড মনে আছে তো? লালগড়ে নেতাইয়ে। কেটে হলদি নদীর জলে ফেলে দিত। সারেঙ্গা তে কত খুন করেছে?
আমার ভুল যে আমি বলেছিলাম বদলা নয় বদল চাই। তার জন্য রবীন্দ্র সংগীত চালানো শুরু করেছিলাম। বাংলায় বিজেপির দুটো চোখ একটা কংগ্রেস একটা সিপিএম।
আমি ইন্ডিয়া জোট তৈরি করেছিলাম তার জন্য আমি গর্বিত। নামও আমি ঠিক করেছিলাম তার জন্য আমি গর্বিত।
শুধু ভোটের সময় নয়, আমি ওকে দেখেছি ঘাটালের এ বন্যার সময় ও মানুষকে রান্নাবান্না করে খাওয়ায়। ও কোভিডের সময়ও ভাল সার্ভিস দিয়েছে। আমরা ডেবরায় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল করে দিয়েছি। দেব জিতলে, জুন জিতলে, ঝাড়গ্রাম জিতলে আমি উপহার দেব ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান।
উন্নয়নে অনেক এগিয়ে বাংলা। উন্নয়নে বাংলার সঙ্গে পৃথিবীর কেউ পারবে না। পৃথিবীর সেরা বাংলা। ৬৭টা প্রকল্প আমরা চালাই। ছোট থেকে বড়, জন্ম থেকে মৃত্যু। ওরা সবাইকে চোর বলে নিজেরা জগৎ বিখ্যাত চোর। যে ভাবে ভারতবর্ষে ইলেকশন চলছে তাতে সারা পৃথিবী বলছে লজ্জা লজ্জা লজ্জা।
আমরা ৪৩ লক্ষ বাড়ি এই ১২ বছরে করে দিয়েছি। ১১ লক্ষ লোকের বাড়ির লিস্ট এখনও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পরে আছে। কিন্তু করে দেয়নি। ৩৫০ টা কেন্দ্রীয় টিম এসেছে। তদন্ত করেছে। রিপোর্ট চেয়েছে। কিন্তু, বলছে পরে ঘর দেব। কিন্তু, বাংলার মানুষ মাথা নত করে। না। এই বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১১ লক্ষ মানুষের বাড়ি প্রথম কিস্তির টাকা দিয়ে দেব। আরও তিন চার মাসের মধ্যে দ্বিতীয় কিস্তি মোট ১ লক্ষ ২০ টাকা করে দিয়ে দেব। ঘর নিজেরা তৈরি করে নেবেন। বাংলার বাড়ি। কারও দয়া পেতে হবে না। দয়া চাইতে হবে না। তামিলনাড়ুতে ৪০ লোকসভা কেন্দ্র, আমাদের এখানে ৪২। সেখানে একদিনে ভোট হলে আমাদের এখানে দুমাস ধরে কেন? নির্বাচন কমিশন হিসাব দিতে পারবে অন্য রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী কত আর আমাদের রাজ্যে এত কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন? আসল লক্ষ্য বাংলাকেদখল করা। কি এমন করেছেন যে ভোট চাইছেন বিজেপি নেতারা? শুনেছি কেশিয়াড়িতে আরএসএস এর বড় স্কুল রয়েছে।. অনেক সম্পত্তি করেছে ওরা। আগে ভাবতাম আরএসএস মানে ত্যাগী। ভালো লোক ছিল। আজ ভোগ করতে করতে এমন ভোগী হয়েছে ত্যাগ ছেড়ে ভোগকে আশ্রয় করছে ওরা। যার জন্য বিজেপি এত নোংরামি করছে, নোংরা খেলা খেলছে।