৩৬৫ দিন। রাজভবনের মত যে কোন রাজ্যের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অসহায় মহিলা কর্মীকে দিনের পর দিন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে খোদ রাজ্যপালের বিরুদ্ধে। বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস নিজেকে মোদির অনুপ্রেরণায় রাম ভক্ত বলে দিনে রাত দাবী করলেও রাজভবনে তার রাম রাজ্যে এক মহিলা কর্মীকে স্থায়ী চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে একাধিকবার শ্লীলতাহানির যে অভিযোগ উঠেছে তারপরে তদন্তে সহযোগিতা করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা না করে এবার কার্যত আতঙ্কে রাজভবনের দরজা বন্ধ করে দিলেন রাজ্যপাল। পাশাপাশি প্রকাশ্যে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে যে কুকীর্তির অভিযোগ উঠেছে তা ফাস করে দেওয়ার অপরাধে অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে রাজভবনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত বাংলার রাজ্যপাল। অন্যদিকে বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন যে অস্থায়ী যুবতী কর্মী, তাঁর একটি ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে ইতিমধ্যেই। যেখ ানে ওই মহিলাকে মোবাইলে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। তিনি বলছেন, স্যার, আজ আমি যদি প্রতিবাদ না করি, তাহলে ভবিষ্যতে অন্য কোন মেয়ের সঙ্গেও এই ধরনের ঘটনা ঘটবে।
মেঘালয়ের রাজ্যপালকে দেখে অনুপ্রাণিত?
যদিও বাংলার রাজ্যপাল হওয়ার আগে সিভি আনন্দ মোদি সরকারের দাক্ষিণ্যে যে মেঘালয় সরকারের উপদেষ্টা পদে বসেছিলেন, সেখানকার রাজভবনেও ভাজপা ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন আরএসএস নেতাকে রাজ্যপাল বানানোর পরে তিনি মেঘালয়ের রাজভবনকে কার্যত মধুচক্রে পরিণত করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। পরে যদিও মেঘালয় রাজভবনে কর্মরত অন্তত ৮০ জন মহিলা কর্মীসহ শতাধিক রাজভবনের কর্মী লিখিতভাবে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং মেঘালয়ের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমার কাছে অভিযোগ জানানোর পরে কার্যত ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল মেঘালয়ের রাজ্যপালকে।
কিঘটেছিল মেঘালয় রাজভবনে
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেই যেভাবে এক লহোমায় দেশের প্রায় সমস্ত রাজ্যের রাজ্যপালকে রাতারাতি ছাঁটাই করে ভাজপা এবং আরএসএস নেতাদের সমস্ত রাজ্যের রাজভবনে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন মোদী এবং অমিত শাহ সেভাবেই মেঘালয় এবং অরুণাচল প্রদেশের যুগ্ম দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছিল ভি সম্মুগানাথনকে।
২০১৫ সালের মে মাসের মেঘালয়ের রাজ্যপাল পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের অন্যতম প্রথম সারির নেতা হিসেবে মোহন ভাগবতের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত তিনি। দীর্ঘদিন সংঘের কাজ করেছেন নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। কিন্তু ছন্দ কেটে যায় মেঘালয়ের রাজভবনে যোগ দেওয়ার পরেই।
শিলংয়ের একটি স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল যে, এক চাকরীপ্রার্থীর সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময়ে অশালীন আচরণ করেছেন তিনি। অবশ্য ওই ঘটনার জন্য পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। সম্মুগানাথনও ঘটনাটি অস্বীকার করেছিলেন। রাজ্যপাল ভবনকে ইয়ং লেডিস ক্লাব বা অল্পবয়সী মহিলাদের ক্লাবে পরিণত করেছেন রাজ্যপাল। পদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করছেন তিনি। তাঁর নির্দেশেই রাজভবনে মেয়েদের প্রবেশ অবাধ হয়ে গেছে। অনেক মহিলা রাজ্যপালের বেডরুমেও চলে যাচ্ছেন! এই মর্মে মেঘালয়ের রাজ্যপাল সমুগানাথনের বিরুদ্ধে রাজ্যপাল ভবনের শতাধিক কর্মী চিঠি লেখেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে। এই ঘটনায় মেঘালয় জুড়ে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হওয়ার পাশাপাশি দেশ জুড়ে তীব্র নিন্দা শুরু হওয়ায় তড়িঘড়ি পদত্যাগ করে মেঘালয় থেকে লেজ গুটিয়ে পালাতে হয়েছিল যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ভাজপা ঘনিষ্ঠ মেঘালয়ের তৎকালীন রাজ্যপালকে। যদিও রাজ্যপালের সাংবিধানিক রক্ষাকবচ কাজে লাগিয়ে মোদি সরকারের বদান্যতায় জেলযাত্রা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি।
বাংলার রাজভবনেও মেঘালয়ের কলঙ্ক
সিভি আনন্দ বোস বাংলার রাজ্যপাল হওয়ার ঠিক আগে ছিলেন। মেঘালয় সরকারের উপদেষ্টা পদে। ভারতের সংবিধানের ইতিহাসের কলঙ্কজনক যে অধ্যায় মেঘালয়ের রাজ্যপাল রাজভবনে বসে লিখেছিলেন, সেই কলঙ্কের ছায়া এবারে পড়ল বাংলার রাজভবনেও। রাজভবনের অস্থায়ী এক মহিলা কর্মী গতকাল সন্ধ্যেবেলার কলকাতা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান তাঁর স্থায়ী চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার তাকে যৌন হেনস্থা করেছেন বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
তদন্ত থেকে বাঁচতে রাজভবনের মুক্তাঞ্চলে রাজ্যপাল
বাংলার রাজ্যপাল হয়ে আসার পর থেকে সিভি আনন্দ বোস প্রতিনিয়ত যেখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার নীতিবাক্য আউড়ে গিয়েছেন তার নিজের বিরুদ্ধে এবারে এক মহিলা রাজভবনের মধ্যেই যৌন হেনস্থা করার অভিযোগ আনার পরে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য তদন্তের মুখোমুখি না হয়ে কলকাতা পুলিশ বা রাজ্য পুলিশের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন রাজভবন চত্বরে। যদিও তা থেকে প্রশ্ন উঠেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা যেহেতু রাজ্য পুলিশের দায়িত্বে সেখানে তার বিরুদ্ধে গুরুতর যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও রাজভবন চত্বরে কলকাতা পুলিশ রাজ্য পুলিশ ঢুকতে পারবে না কেন? রাজভবন কি শুধুমাত্র ভাজপা নেতা এবং যৌন কেলেঙ্কারির নায়কদের বিচরণের মুক্তাঞ্চল?
এমনকি রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা এই যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ প্রকাশে আনায় রাজভবনে ঢোকাই নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন চন্দ্রিমা। কলকাতার পাশাপাশি দার্জিলিং এবং ব্যারাকপুরেও রয়েছে রাজভবন। চন্দ্রিমার প্রবেশাধিকার সেখানেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকী চন্দ্রিমা কোনও অনুষ্ঠানে থাকলে সেখানেও রাজ্যপাল যাবেন না বলে জানানো হয়েছে।