ভাজপারভোটের বিজ্ঞাপন কমিশনের নিয়ম চুলোয় যাক
৩৬৫ দিন। সনাতন বিরোধী তৃণমূল। এমন বক্তব্য সহকারে বাংলার বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠা জুড়ে আজ বিজ্ঞাপন দিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। যেখানে রীতিমতো ৯ দফা অভিযোগ করে ভাজপা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে তারা কতখানি বাংলা এবং বাঙালি প্রেমী এবং সর্বোপরি তারা নাকি সনাতন হিন্দুত্ব ধর্মের ধারক এবং বাহক। একনজরে যদি দেখে নেওয়া যাক ১। গত ১৩ বছরে স্বামী বিবেকানন্দ শ্রীরামকৃষ্ণের এই বাংলায় বারবার
সম্মানহানি হয়েছে সনাতন ধর্মের।
আমাদের উত্তর
ভাজপা কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দের অপমানের যে প্রসঙ্গ তুলে ধরেছে বা দাবি করেছে তা সর্বৈব মিথ্যে। ২০১১ সালের মে মাসে বাংলার ক্ষমতায় আসার পর সেই ভাবে বিবেকানন্দকে নিয়ে সাংস্কৃতিক গবেষণা এবং চর্চা কেন্দ্র না থাকায় ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে রাজ্য মন্ত্রিসভার ক্যাবিনেট বৈঠকে আলোচনার ভিত্তিতে রাজারহাট নিউটাউনের ৫ একর জমি তুলে দেন রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে। যেখানে গড়ে উঠেছে বিশ্বের বৃহত্তম স্বামী বিবেকানন্দের জীবন দর্শন এবং ইতিহাস গবেষণা কেন্দ্র বিবেক তীর্থ।
২। ভোট রাজনীতির কারণে এই বাংলায় পিছিয়ে যায় মা দুর্গার বিসর্জন। আমাদের উত্তর মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে প্রথমে কলকাতার দুর্গাপুজো গুলোকে নিয়ে এবং গত কয়েক বছর ধরে বাংলার সেরা দুর্গাপূজা গুলোকে নিয়ে প্রতিমা গুলিকে নিয়ে শুরু করেছেন এক অভূতপূর্ব দুর্গাপূজা কার্নিভাল। বিশ্বের প্রথম ১০ সেরা উৎসবের মধ্যে নাম লিখিয়ে ফেলেছে কলকাতার দুর্গাপূজা কার্নিভাল। ইউনেস্কো পর্যন্ত এগিয়ে এসেছে আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক হেরিটেজ স্বীকৃতি দিতে কলকাতার দুর্গা পূজাকে।
৩। বাগদেবীর আরাধনাতেও দেওয়া হয় বাধা।
আমাদের উত্তর সাম্প্রতিকতম অর্থাৎ গত বছরের হিসেব পরিসংখ্যান অনুযায়ী সরস্বতী পুজোয় বাংলার স্কুল কলেজ বাড়ি ক্লাব মিলিয়ে পুজো
হয়েছিল প্রায় ১৯ লক্ষ সরস্বতী প্রতিমার।
৪। এ রাজ্যে রাম মন্দিরকে বলা হয় অপবিত্র এবং জয় শ্রীরাম ধ্বনিকে গালাগালি তকমা দেওয়া হয়।
৫। শ্রী রামের মূর্তিকে শো-পিসের সঙ্গে তুলনা করার মত ঘটনার সাক্ষী থাকে এই বঙ্গভূমি।
৬। রামনবমীর মিছিলে হামলা এ রাজ্যে সামান্য ঘটনা।
৪, ৫ এবং ৬ নম্বর বক্তব্যের উত্তর প্রথমত বাংলায় রাম মন্দিরকে অপবিত্র অথবা জয় শ্রীরাম ধোনিকে গালাগালি তকমা দেওয়ার যে অভিযোগ ভারতীয় জনতা পার্টি করেছে তা সর্বৈব মিথ্যা। বাংলায় সঙ্গে সর্ব ধর্ম সমন্বয় পদযাত্রা করেছেন মমতা নিজে।
দ্বিতীয়তঃ রামচন্দ্রের মূর্তিকে শোপিস বলা অথবা জয় শ্রীরাম ধোনিকে গালাগালি বলার নজির আজ পর্যন্ত মমতা অথবা তৃণমূলের পক্ষ থেকে কোনদিনও করা হয়নি। তবে হ্যাঁ যারা নিজেদেরকে চরম নাস্তিক বলে দাবি করে সেই সমস্ত কমিউনিস্টরা অথবা প্রগতিশীল সমাজবাদী যারা তারা কোনদিন রামচন্দ্রকে ভগবানের আসনে বসাতে প্রস্তুত নন।
৭। চৈতন্য মহাপ্রভুর ভূমিতে শ্রী রামচন্দ্র বহিরাগত বা বিপিএল এর তকমা পান।
আমাদের উত্তর নবদ্বীপ এবং মায়াপুরকে কেন্দ্র করে মমতা বিশাল জমি সরকারি উদ্যোগে ইসকনের হাতে তুলে দিয়েছেন বিশ্বের বৃহত্তম বিষ্ণু মন্দির তৈরির জন্য। যেখানে চর্চা হবে হিন্দু ধর্মের। যেখানে চর্চা হবে বৈষ্ণব শাস্ত্রের।
৮। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রায়িত প্রচলিত ভারত মাতার পুজোরও সমালোচনা করেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী।
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারত মাতার যে ছবি এঁকেছিলেন তা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই বরাবর থেকেছে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। বিগত প্রায় এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে অবনীন্দ্রনাথের চিত্রায়িত ভারত মাতার মূর্তি ধর্মীয়ভাবে এবং সামাজিকভাবে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে বারে বারে। আজ পর্যন্ত মমতা এই প্রসঙ্গে কোন মন্তব্য করেন নি।
৯। সরস্বতীর মন্ত্র থেকে চণ্ডীপাঠ অবলীলায় মন্ত্রের ভুল উচ্চারণ করে চলেন মুখ্যমন্ত্রী।
উচ্চারণ নিয়ে তা ঠিক না ভুল, এই প্রশ্ন তোলা রীতিমতো বাতুলতা নরেন্দ্র মোদী অথবা অমিত শাহের মত ভাজপা নেতাদের পক্ষে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন সামনেই। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময় হঠাৎ করে রাতারাতি বাঙালি সাজতে গিয়ে আর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের আদর্শে নিজেকে অনুপ্রাণিত দেখাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছিলেন ক্ষ্মখোল গাঁড় খোলক্ষ্ম। যেখানে বলার কথা ছিল খোল দ্বার খোল… তারা নাকি এসেছেন মমতা চণ্ডীপাঠ বা সরস্বতী বন্দনার মন্ত্র ভুল উচ্চারণ করেন কিনা তার ভুল শুধরে দিতে!
যে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা মতো ভোটারদের লোক দেখাতে গিয়ে হঠাৎ করে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে ঢুকে দাবি করেছিলেন বিভূতিভূষণ বহুত বড়া কন্ট্রাক্টর থে!
যে দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে খাস কলকাতা শহরের রাজপথে তার মিছিল থেকে উন্মত্ত ভাজপা নেতা ও সমর্থকরা ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিয়েছিল বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি। এই দলের নেতারা যত উচ্চারণ সাহিত্য ও সংস্কৃতি শিল্প এইসব বিষয় কম কথাবার্তা বলেন তত ভালো। তা তো ভালো সমাজের পক্ষে। ততটাই মঙ্গল নক্ষত্র মন্ডলীর অথবা হিন্দু ধর্মে উল্লেখিত ৩৩ কোটি দেবতার। তবে সব থেকে মঙ্গল ভারতীয় জনতা পার্টির নিজের।
না হলে কবে আবার মোদির মতো খোল দ্বার খোল বলতে গিয়ে আরো কি কি খুলে যাবে তার ঠিক নেই …