বহরমপুরে মমতা
৩৬৫ দিন। বহরমপুরে তৃণমূল প্রার্থী বড়ঞাতে ইউসুফ পাঠানের প্রচার সভা থেকে কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরীর তীব্র সমালোচনা করলেন তৃণমূল সভানেত্রী মমতা। পাশাপাশি ভারতীয় জনতা পার্টি যেখানে কম ভোট করেছে সেখানেই অদ্ভুতভাবে ভোটের হার বেঁধে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের নির্বাচন কমিশনকে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করার কথা জানালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা। একইসঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক দল গুলিকেও ইভিএম মেশিন এবং কাউন্টিং সেন্টার পাহারা দেওয়ার আবেদন জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন বহরমপুরের আগে মালদা দক্ষিণ কেন্দ্রে ফারাক্কায় তৃণমূল প্রার্থী শাহনাজ আলী রায়হানের সমর্থনে সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্সের গদ্দার
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যাকে আপনারা বলতেন ঘরের ছেলে, আমাদের গালি দেওয়া ছাড়া কোন কাজ করেনি। তার নাম বলতে আমার ভালো লাগেনা। আমি গদ্দারের নাম বলি না, সে ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্সের একটা বড় গদ্দার। সকালবেলায় বিজেপির পা ধরে, বিকেল বেলায় সিপিএমের পা ধরে। কংগ্রেসের টিকিটে জিতে লোকসভায় গিয়ে বিরোধী দলনেতা। নেতা না আতা তা আমরা জানিনা। নেতা হয় মানুষের ছাতা। আপনি নেতা না মানুষের ছাতা, কোন কাজটা করেছেন? মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে দাঁড়িয়েছে কে? বহরমপুর কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থীর বন্ধু মোঃ সেলিম। এবার মুসলিম গন্ধ পেয়েছে। ভাবছে সংখ্যালঘু ভোট টাকে যদি ভাগ করে দিতে পারি। বিজেপি যা করে সিপিএমও তাই করে এখানে। আপনাদের শপথ নিতে হবে। ওকে জেতাবেন না, অধীর কেও জেতাবেন না। মোদিকে বিদায় দিতে গেলে যে জেনে রাখবেন তৃণমূল একমাত্র দল। আমাদের লোকেরা সংসদে লড়াই করে।’ বিজেপির মুখে অধীরের নাম নেই বহরমপুরের সভায় ভারতীয় জনতা পার্টির সভাপতি জেপি নাড্ডা একবারের জন্যেও অধীর চৌধুরী সমালোচনা করেননি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিজেপি সভাপতি নাড্ডাবাবু এলেন বহরমপুরে পরশুদিন। তিনি একবারও উনার নামও মুখে আনলেন না। তার কারণ বিজেপির সবচেয়ে বড় সমর্থক যে তিনি কংগ্রেসের প্রার্থী। আমার লজ্জা হয়, আমার নিজের দিকে তাকিয়ে মনে হয় ধিক ধিক ধিক।’
হিজ মাস্টার ভয়েস
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ইলেকশন কমিশন আমার মাথায় থাক মহাগুরু আমাদের। বিশ্ব গুরুকে সমর্থন করার জন্য স্পিকটি নট করে বসে আছেন আপনাকে অনেক স্যালুট। হিজ মাস্টার ভয়েস সাহেব।’ যেখানে বিজেপির কম ভোট, সেখানে কমিশন ভোট বাড়িয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘যেখানে যেখানে বিজেপির কম পোল হয়েছিল, সেখানে ৫.৭৫ শতাংশ ভোট সেইসব জায়গায় হঠাৎ করে ভোটটা বাড়িয়ে দিয়েছে, নির্বাচন কমিশন। একটা নোটিশ জারি করেছে। নাগরিকদের সন্দেহ দূর করার জন্য ইভিএম মেশিনের চিপ কারা তৈরি করেছে,? ভোটের শতাংশ বাড়লো কি করে? প্রথম দফায় কত কী ছিল? দ্বিতীয় দফায় কি ছিল? কত ভোটার ছিল কত মেশিন ব্যবহার করা হয়েছিল? এটা আমরা জানতে চাই। হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া মানে প্রায় ১৯ লক্ষ ভোটার মেশিন মিসিং আছে অনেক দিন ধরে।’
বিজেপি রাজ্যগুলো নিজের ভোট বাড়ানোর জন্য ইভিএম মেশিন ঢোকাচ্ছে
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিজেপি রাজ্যগুলো নিজেদের ভোট বাড়ানোর জন্য নিজেদের ভোটের মেশিন ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। এটা আমার সন্দেহ, নির্বাচন কমিশনকে বলবো মানুষের সন্দেহ দূর করুন। বিজেপি কমিশন হয়ে বসে থেকে কোন লাভ নেই, আপনাকে নিরপেক্ষ কমিশন হিসেবে কাজ করাতে চায় ভারতবর্ষের জনগণ। তাই আসল সত্যিটা কি এটা জানাতে হবে মানুষকে মানুষ জানতে চায়। সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে অনুরোধ করবো ইভিএম মেশিন এবং কাউন্টিং সেন্টারের দিকে বিশেষ নজর দিন। আমাদের পার্টির পক্ষ থেকে আমরা নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিচ্ছি।’
রাত্রিবেলা অপারেশন চলছে
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘রাত্রিবেলা যেখানে অপজিশন পার্টি দুর্বল, সেখ ানে তালাটা ভেঙে দিচ্ছে। মেশিন বদলে দিয়ে সেখানে বিজেপিকে ভোট দেওয়া মেশিন পাল্টে দিচ্ছে।’ পাঠান কে জেতান মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি পাঠান কে নিয়ে এসেছি অনেক বড় মুখ করে। পাঠান কে জেতান। না যেতালে বিজেপির আরেকটি গদ্দার তৈরি করবেন। বদলাতে চান তো। এবার বহরমপুরে ইউসুফ পাঠানকে নিয়ে নতুন ভোর আসবেই। নতুন আলো আপনারা দেখবেন।’
বিজেপি পচা জুলুমবাজির দল
তিনি বলেন, ‘জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খেলো বিজেপি দলটা। বিজেপির মত একটা পঁচা জুলুমবাজি রাজনৈতিক দল, তাদের চান তারা আবার ক্ষমতায় আসুক। একমাত্র তৃণমূলই পারে লড়াই করে নতুন একটা সরকার মানুষকে উপহার দিতে।’
বিজেপির কথায় তিন মাস ধরে নির্বাচন হচ্ছে
মুখ্যমন্ত্রী কমিশনের সমালোচনা করে বলেন, ‘বিজেপির কথায় তিন মাস ধরে নির্বাচন হচ্ছে। বিজেপির নেতারা আরাম করে করে আসছেন, একটা করে করে মিটিং করছেন। কোনদিন তিনটে মিটিং করবেন, ছদিন বিশ্রাম নেবেন। তামিলনাড়ুতে একদিনের ভোট হয়ে গেল। কেরলে ভোট হয়ে গেল। আর যত হিংসুটেপনা হচ্ছে এই বাংলায়। ৩১ শে আগস্ট থেকে এই যে ঝড় হল মধ্যরাত থেকে তারপর থেকে আমার আর বাড়ি ফেরা হয়নি। আমার আজকে রোদ্দুর টা বেশি লেগে গেছে। কারণ আমি এক মাস ধরে বাইরে আছি।’
সেন্ট্রাল ফোর্স রাস্তা আটকালে আমাদের জানান
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনার রাস্তা যদি সেন্ট্রাল ফোর্স আটকায়, সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ কে ফোন করবেন। আমাদের জানাবেন। আপনাকে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে ভোট দিতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। যদি সেন্ট্রাল ফোর্স দিয়ে গায়ের জোরে বর্ডার এরিয়ায় ভোট করতে চায় মা বোনেরা রুখে দাঁড়াবেন।’ চার্লি বাবু
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘উনি চার্লি বাবু হয়ে দূরদর্শনকে পর্যন্ত গেরুয়া বানিয়ে দিয়েছেন। কত দিনের দূরদর্শন, গেরুয়া দর্শন করে দিয়েছে। ট্রেন লাইনগুলোকে গেরুয়া রং করে দিয়েছে। শিল্পপতিদের বলছে নতুন বাড়ি তৈরি করলে গেরুয়া করে দাও। আর্মি কোয়াটার গেরুয়া করে দিচ্ছে।’
চাকরি দিতে গেলেই আটকে দিচ্ছে
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমার দশ লক্ষ চাকরি করে রয়েছে। চাকরি দিতে গেলেই ফলস মামলা করে আটকে দিচ্ছে।’
বিড়ি হাসপাতাল
ফরাক্কার জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন করে তোমরা বিড়ি মালিকরা যারা আছেন, নতুন করে আর হাসপাতাল করে দাও। বিড়ি শ্রমিকরা আগে কিছুই পেতেন না। এখনো যা পাচ্ছেন তা যথেষ্ট নয়। এটা সবটাই প্রাইভেট ইন্ডাস্ট্রি। নির্বাচনের পরে আমি শ্রম মন্ত্রী কে বলব একটা মিটিং করতে।’
ফরাক্কায় জল ড্রেসিং করছে না কেন্দ্র
মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ‘আজকে ফরাক্কায় মিটিং করছি। তখন কেন্দ্রীয় সরকার বলেছিল ৭০০ কোটি টাকা দেবে বাংলাকে। পুনর্বাসন প্যাকেজের জন্য। একটা পয়সা দেয়নি। ফরাক্কার জলটা ড্রেজিং পর্যন্ত করা হয় না। ফলে জল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমনকি শুকনোর সময় জল পাওয়া যাচ্ছে না। বন্যায় যখন সব ভেসে যায়, ফরাক্কা কে বলতে বলতে আমাদের মুখ ব্যথা হয়ে যায়। ফারাক্কা
ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ কোন কথা শোনে না। স্থানীয় বিধায়ক, প্রাক্তন
বিধায়কদের বলবো এটা নিয়ে বড় আন্দোলন করতে।’
মোদি বাবুর ফলস গ্যারান্টি
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মোদী বাবুর গ্যারান্টি, পাইপলাইনে সবার বাড়িতে গ্যাস পৌঁছে যাবে। এখনো জল পৌঁছালো না গ্যাস পৌঁছে যাবে? জল তো আমরা দিচ্ছি। ৭৫ শতাংশ টাকা রাজ্য সরকারের।’