প্রথম দফার পর থেকেই আস্তে আস্তে ৪০০ পারের স্লোগান ভ্যানিশ
৩৬৫ দিন। লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগে লোকসভার শেষ অধিবেশনে শেষ দিনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নজিরবিহীন ভাবে লোকসভার অধিবেশন কক্ষেই স্লোগান তুলেছিলেন আব কি বার ৪০০ পার। রীতিমতো পাটিগণিতের অংকের মত হিসেব কষে বলে দিয়েছিলেন এবারের নির্বাচনে ভাজপা নাকি একাই পাবে ৩৭০ আসনের বেশি আর এনডিএ জোট পাবে সামগ্রিকভাবে ৪০০ আসনের বেশি। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে ১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পরে কংগ্রেস ছাড়া এমন নজির আর কোন দলের নেই।
কিন্তু মোদি কোথা থেকে ৪০০ আসনে জিতবেন এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল তারপর থেকেই। উত্তর পূর্ব ভারতের অধিকাংশ রাজ্য যেখানে ভাজপা প্রার্থী দিতে পারেনি অথবা দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ রাজ্য যেখানে ভাজপা খাতা খুলতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়ে গিয়েছে তারপরেও ৪০০ আসনের স্বপ্ন দেখিয়ে মোদী দলের নেতাদের চাঙ্গা করার চেষ্টা চালালেও স্বপ্নভঙ্গ হয়ে যায় উনিশে এপ্রিল প্রথম দফার ভোট গ্রহণের দিনেই। বাংলায় এসে মুখে কুলুপ মোদির প্রথম দফার ভোট গ্রহণের পরে আজ বাংলায় তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণের শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই মালদহে নির্বাচনী জনসভা করলেও মোদির মুখে একবারের জন্যও শোনা গেল না আব কি বার ৪০০ পার স্লোগান। আগডুম বাগডুম বিভিন্ন বক্তব্য রাখলেও যে ঔদ্ধত্যের সঙ্গে সংসদে দাঁড়িয়ে ৪০০ আসনের বেশি লোকসভা কেন্দ্রে জয়ের হুংকার দিয়েছিলেন মোদি সেই হুংকার স্তিমিত হয়ে মোদির গলায় উঠে এলো পুনর্জন্মের থিওরি।
কেন পিছু হটলেন মোদি
প্রথম”ফোর ভোট গ্রহণ করবে বাংলার যে তিন আসনে ভোট গ্রহণ হয়েছে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তার প্রত্যেকটিতেই জিতেছিল ভাজপা। কিন্তু এবারে অমিত শাহের ডেপুটি নিশীথ প্রামাণিক থেকে শুরু করে আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ির মতো নিশ্চিত আসন গুলিতেও জয় আসছে না বলে মোদির কাছে রিপোর্ট দিয়েছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি। অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশের যে আসন গুলিতে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জয় পেয়েছিল ভারতীয় জনতা পার্টি তার প্রত্যেকটিতেই শোচনীয় পরিস্থিতির শিকার হয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বুথে দলের এজেন্ট বসাতে পারেনি ভারতীয় জনতা পার্টি। অশনি সংকেত উত্তর-পূর্ব ভারত ভারতের লোকসভায় ৫৪৩ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৪০০ আসনের বেশি জয় পেতে গেলে শুধুমাত্র গরুকে মা বলে পূজো করা গোবলয়ের গোটাচার এক রাজ্যে অধিকাংশ আসনে জয় পাওয়া যে যথেষ্ট নয় তা নরেন্দ্র মোদী নিজেও খুব ভালোভাবে জানেন। তার জন্য প্রয়োজন দাক্ষিণাত্য বিজয় এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে একচেটিয়া জয়। কিন্তু উত্তর-পূর্ব ভারতে মনিপুর নাগাল্যান্ড সহ অধিকাংশ জায়গাতেই কোন প্রার্থী দিতে পারেনি ভারতীয় জনতা পার্টি।
সুপার ফ্লপ রাম মন্দির ইস্যু
লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে রাম মন্দির উদ্বোধন এবং রামলালার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে গোটা দেশ জুড়ে উগ্র হিন্দুত্বের উন্মাদনা জাগিয়ে তুলবেন বলে আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু সেই পরিকল্পনা মাঠে মারা গিয়েছে গোটা দেশের মানুষ এমনকি কর্তার ভাঁজ বা সমর্থকেরও উগ্র হিন্দুত্বের ইসুকে ছুড়ে ফেলে দেওয়ায়। তাই প্রথম দফার ভোট গ্রহণের পর থেকে কোন নির্বাচনী প্রচারে মোদির মুখে শোনা যায়নি রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার কৃতিত্বের কথা।