বনগাঁয় ভাজপার কফিনে শেষ পেরেক পুঁতবে ক্যা
সায়ন্তী অধিকারী। অশোকনগর, বনগাঁ। ৩৬৫ দিন। মোদির ভাষণ আর বাংলায় দিদি রেশন। তৃণমূল-কংগ্রেসের এটাই এখন চাবিকাঠি লোকসভা ভোটে বনগাঁ কেন্দ্র পুনরুদ্ধারের। কারণ ২০১৯ তৃণমূল-কংগ্রেস নিজের জমি ধরে রাখ তে না পারলেও ২০২৪ এর নির্বাচনে সেই ভুল আর হবে না। এতটাই আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল। কারণ অনেকগুলিই রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম সিএএ। এই নিয়ে বেশ সংকিত বনগাঁ এবং হাবড়া-অশোকনগরের মতুয়ারা। প্রথমবারের মতো এই রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনে ‘ডবল ফিঙ্গারে’ পৌঁছায় বিজেপি। তৃণমূলকে বেশ কড়া টক্কর দিয়েছিল তারা। আর সেই জয়ের নেপথ্যে অন্যতম ‘ফ্যাক্টর’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল ‘মতুয়া ভোট’। আর সেই মতুয়াদের গড় হল বনগাঁ। এই আসন থেকে ২০১৯ সালে মুখোমুখি হয়েছিলেন ঠাকুরবাড়ির দুই সদস্য। তবে গতবার এখানে বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন শান্তনু ঠাকুর। তবে এরপরে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বাংলায় নিজেদের ম্যাজিক ধরে রাখতে পারেনি বিজেপি। এই আবহে ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে বিজেপির নয়া হাতিয়ার ‘সিএএ’। তবে এই হাতিয়ার ‘বুমেরাং’ হয়ে পদ্ম শিবিরকেই আঘাত আনবে। এমনটাই বলছে তৃণমূল। মানুষের ভয়ে কিভাবে কাটবে তাঁদের সাংসদ শান্তনু ঠাকুরই এখনও সিএএ এর ওয়েবসাইটে নিজের পরিচয় নতিভুক্ত করেনি। তাহলে মানুষকে কি বলবে?তিনি নিজে কি কারণে করেননি? এমনটাই প্রশ্ন তুলেছেন অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী। বনগাঁয় লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাসের প্রচারে গিয়েই এমনটা বলেছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তাঁর কাছে জিজ্ঞেস করায় তিনি আরও বলেন, হাবড়া-অশোকনগরের অনেকটা জায়গা জুড়েই মতুয়ারা বাস করেন। তাঁদের অবস্থা আমি জানি। কতটা ভয় আছেন তাঁরা। শান্তনু ঠাকুর নিজেই ওই পোর্টালে নিজের নামের নথিভুক্ত করেননি। তাহলে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন কেন? এরই সঙ্গে বনগাঁ সীমান্তে গরুপাচার প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে নারায়ণ গোস্বামী বলেন, বিএসএফ কেন্দ্রের অধীনে। তাহলে কিভাবে তাঁদের এড়িয়ে গরু পাচার হচ্ছে? ওদের কে কেনও প্রশ্ন করছে না? একই কথাই বলেছেন বনগাঁর তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস। কত ভোটে বিদায়ী সাংসদ শান্তনু ঠাকুরকে হারাতে পারবেন? এই প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, মানুষের ভালোবাসা আমার সঙ্গে সব সময় আছে।আর জেতার কথা যদি বলেন, আমি জিতে গেছি।নতুন করে কিছু করার নেই। ২০১৯ এর ভুল আর হবে না।২০২৪ এ মেকআপ হয়ে যাবে। ২ লক্ষ ভোটে শান্তনু ঠাকুর হারবে। এর আগেও এক কর্মীসভায় শান্তনু ঠাকুরকে নিশানা করে বিশ্বজিৎ দাস বলেছেন, ইছামতী নদী সংস্কারের জন্য শান্তনু ঠাকুর ১০০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছিলেন এবং সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য একটি ড্রেজিং মেশিনও পেয়েছিলেন। ১০ দিনের মধ্যেই সেই কাজ শেষ হয়ে যায় এবং তাতে ৫০ কোটি টাকাও খরচ হয়নি। বাকি টাকা শান্তনু ঠাকুর নিজেই আত্মসাৎ করেছেন। তাঁর কথায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি বাগদা পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের প্রকল্পটি অনুমোদন করেছিলেন। কিন্তু, শান্তনু ঠাকুর সেই প্রকল্প রূপায়নেও ব্যর্থ হয়েছেন। যদি তিনি ও তাঁর দল, মতুয়া সম্প্রদায়কে -এতই ভালোবাসেন, তাহলে মতুয়াদের জন্য একটি স্কুল পর্যন্ত নির্মাণ করলেন না কেন? আর এখন ওঁরা নির্মমভাবে সিএএ কার্যকর করছেন। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিশ্বজিৎ-এর দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার কেবলমাত্র জাতি, ধর্ম ও সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে মানুষে-মানুষে বিভেদ তৈরি করতে চাইছে। তাঁরা ১০০ দিনের কাজ ও আবাস যোজনার আওতায় অসংখ্য মানুষকে তাঁদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত রেখেছে। অথচ, প্রবল আর্থিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী ১০০ দিনের কাজের বঞ্চিত শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি মেটানোর ব্যবস্থা করেছেন এবং তিনি বঞ্চিত দরিদ্র উপভোক্তাদের তাঁদের প্রাপ্য বাড়িও তৈরি করে দেবেন।।ফলে মানুষ তাঁকে চেনে এবং জানে। আর মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও চেনেন। লক্ষীর ভান্ডার হোক কিংবা স্বাস্থ্য-সাথী সব কিছুতেই মানুষের ভালোর জন্য একমাত্র তিনিই আছেন। এই কথা লোকে বুঝে গেছে।