আসানসোলে মমতা
৩৬৫ দিন। এখানকার যিনি প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা, যিনি সারাদেশে একটা নাম। যাকে সবাই সম্মান করে যার ভারতরত্ন পাওয়া উচিত ছিল। ওনার এবং অমিতাভ বচ্চনের। আমি এখনো জোর গলায় বলি। তাদের কোনদিন এই সরকার সম্মান দেয় নি। কিন্তু আমি সম্মান দিয়ে বাংলায় নিয়ে এসেছি। শত্রুগ্ন সিনহা তো দু বছর মাত্র সময় পেয়েছেন। কালীপুজো হোক দুর্গাপূজা হোক যে কোন পূজোয় শত্রুগ্ন সিনহা আসেন আসানসোলে। তাই ওনাকে সমর্থন করাটা আমাদের কর্তব্য’, তৃণমূলের সুপারস্টার প্রার্থী শত্রুগ্ন সিনহাকে ভারতরত্ন দেওয়ার দাবিতে আসানসোলের কুলটির জনসভা থেকে সরব হলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এছাড়াও যেভাবে ২৬০০০ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাকরি কলমের খোঁচায় খেয়েছে বিজেপি সেই কারণে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিজেপি প্রার্থীকে প্রত্যেক শিক্ষক শিক্ষিকাদের একাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার আবেদন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কেন আপনারা ২৬০০০ শিক্ষক শিক্ষিকাদের চাকরি খেয়ে নিলেন। মানুষের জীবনে আগুন লাগবে আর আপনাদের মস্তি বাড়বে। আমরা পুরো ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষক শিক্ষিকাদের সঙ্গে আছি। যিনি শত্রুঘ্ন সিনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন উনার অনেক টাকা। উনি অনেক টাকা খরচ করবেন। আপনি ১৫ লাখ টাকা করে আমাদের ব্যাংক একাউন্টে দিয়ে দিন। এর থেকে কমে হবে না।’ একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘বিজেপির এবারের প্রার্থী বদলে গেল। বর্ধমানের যিনি প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি অনেক খরচ করেছিলেন। পরের পাঁচ বছর আর আসেনি। অনেক কষ্ট করে এখানকার সিটটা ম্যানেজ করেছেন। যখন শিখ সম্প্রদায়ের পুলিশকে খালিস্তানি বলে গালাগালি দিল, সংখ্যালঘুদের পাকিস্তানি বলে গালাগালি দিল আপনি একবারও প্রতিবাদ করেন নি কেন? ১০০ দিনের কাজে যখন শ্রমিকরা ময়না পাচ্ছিল না, আপনি আমাদের এমপিদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বলেছিলেন? শ্রমিকদের মাইনে দাও। প্রতিদিন মিথ্যে কথা বলে প্রচার করছেন। যিনি শত্রুঘ্ন সিনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন আমি জানি আগেরবার তিনি কোন ওষুধের কারণে জিতেছিলেন। এবারও সেই ওষুধই তিনি এপ্লাই করবেন। কাউকে এক কাউকে দুই, ওনাকে বলুন ১৫ লাখ টাকা করে দিতে হবে নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন।’
রানীগঞ্জে ধ্বস
এদিন মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার ভাষায় বলেন, ‘আজকে ৩০ হাজার মানুষ রানীগঞ্জে ধ্বস কবলিত। বারবার বলা সত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার যে কাজটা শুরু করেছিল সেটা বন্ধ করে দিয়েছে। আগামী দিন যদি কোন বিপদ হয় আমিই ইপিএল, কোল ইন্ডিয়া কেউ ছাড়বো না এবং বিজেপি নেতাদেরও ছাড়বো না। তাও আমরা অনেক বাড়ির তৈরি করে রেখেছি। যারা আসতে চান তারা আসতে পারেন।
চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘আমি যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম তখন চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ এর অনেক কোচ বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। যেন আগামী দিনে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে। আজকে তো রেল ডিপার্টমেন্টেই তুলে দেওয়া হয়েছে। বাজেট হয় না, অর্ডারও হয় না শুনেছি টেন্ডার করে বিক্রি করে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। এখানে এগারোটা কয়লা খনিকেও বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। কেউ পেনশন পান না আপনারা। শুধু আমাদের রাজ্য আমরা একমাত্র পেনশন দিই। আর কোন সরকার দেয় না, কেন্দ্রীয় সরকার তো দেয়ই না।’
সেইল গ্যাসে
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আসানসোলে সেইল গ্যাসের সন্ধানে ২২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে। স্থানীয় ছেলে মেয়েরা চাকরি পাবে। পাশে দেউচা পাচমি ৩২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে। এক লক্ষ ছেলে মেয়ের চাকরি হবে। আর পানাগড়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডোর তৈরি হচ্ছে। অনেক মানুষ কাজ পাবেন।’
বাংলা দেশ থেকে এগিয়ে
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদী কালকে বলেছে বাংলায় কোন উন্নতি হচ্ছে না। যদি কোন মিডিয়ার হিম্মত থাকে, যদি আপনারা তাকে ভয় না পেয়ে থাকেন, তাহলে আমি একটি চ্যালেঞ্জ করছি, গত ১০ বছরে জিডিপি দেশের ৮ শতাংশ। আর বাংলায় ১১. ৮৪. আপনি আগে পদত্যাগ করুন তারপর বাংলাকে চ্যালেঞ্জ করবেন। গোটা দেশের কৃষিতে ১. ৮২ শতাংশ, বাংলায় ২. ১১ শতাংশ। ইন্ডাস্ট্রি গোটা ভারতে ৫. ১১ শতাংশ আর বাংলায় ৭.৪ শতাংশ। আন এমপ্লয়মেন্ট রেট গোটা ভারতে ৮. ০৩ শতাংশ আর বাংলায় ৫. ৬৫ শতাংশ।’
সন্দেশখালি
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মোদি বাবুর সন্দেশখালিতে, সত্যি তো একদিন বেরোবেই এখন নির্বাচন বলে কিছু বলছি না। সন্দেশ লাড্ডু নিয়ে খেলার আগে আমাদের বাংলায় যদি কেউ কোন ঘটনা ঘটিয়ে থাকে আমাদের কানে আসলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়ে যাতে কারো কোন অসুবিধা না হয়। আমরা কেউ জানতে পারলাম না কি হয়েছে এবিপি আনন্দ আর বিজেপি জেনে গেল। কালকে আবার ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডকে নিয়ে গেছে। এন আই একে নিয়ে গেছে সিবিআই কে নিয়ে গেছে। আমি বলি আইন-শৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। তুমি কিছু দেখাচ্ছ সেটা লোকাল পুলিশে জানেনা তুমি যে সেটা নিজে নিয়ে আসনি সেটা কে জানে? তুমি নিজে পাঁচটা বন্দুক নিয়ে এসে কারুর বাড়িতে ঢুকিয়ে দিলে।’
গোটা পৃথিবী ছি ছি করছে
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘আমরা গর্বিত ছিলাম আমাদের ডেমোক্রেসি নিয়ে। কিন্তু এখন গোটা পৃথিবী ছি ছি করছে। বিজেপি সরকারের নেতৃত্বে গোটা দেশে স্বৈরতন্ত্রের সরকার চলছে। অন্ডাল বিমানবন্দর কে ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরের স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা আমরা করছি। আমার কাছে ১০ লক্ষ চাকরি পড়ে আছে কিন্তু দিতে পারছিনা। প্রতিদিন মহা তীর্থে চলে যাচ্ছে। আর সেখানে ঢং ঢং করে বেল পড়ছে বলে দিচ্ছে চাকরি খারিজ।’
মণিপুরে দুজন মারা গেছে
মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘আজও মণিপুড়ে দুজন মারা গেছে। আপনি কি করছেন? সন্দেশখালি নিয়ে যে প্ল্যান করেছেন সেই প্ল্যান আমি ভেস্তে দেব। কিন্তু মনিপুরের অবস্থা সামাল দেওয়া যেত না। আর নেই দরকার পচা বিজেপির তো সরকার পচা গরম তো তাই।’