খবর ৩৬৫ দিন।
স্কোলিওসিস। বিরল এমন এক অসুখ যার ফলে ছোটবেলা থেকেই শিরদাঁড়া বেঁকে যাওয়া থেকে শুরু করে শরীরের একটা দিক বেঁকে গিয়ে মানুষকে তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় প্রতি পদে বাধা তৈরি করে।
অথচ এই অসুখের চিকিৎসা থাকলেও তা এতটাই ব্যয়বহুল যে বাংলার মত আর্থ সামাজিক সমাজ ব্যবস্থায় এই অসুখে আক্রান্তদের জীবনের অধিকাংশ সময়টাই পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে কাটিয়ে দিতে হয়। অসুখে আক্রান্ত ছোট ছোট বাচ্চাদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য এবং তাদের সুস্থ করে মাথা উঁচু করে হাঁটতে শেখানোর জন্য এগিয়ে এসেছেন বিশিষ্ট অর্থোপেডিক সার্জেন ডাক্তার উজ্জ্বল কান্তি দেবনাথ।
বিশাল এই কর্মকাণ্ডের পিছনে মূল উদ্যোক্তা কলকাতার বিশিষ্ট অর্থপেডিক সার্জন ডাক্তার উজ্জ্বল কুমার দেবনাথ জানান, “গোটা বিষয়টা শুরু হয় ২০০২ সাল নাগাদ আমি যখন ইংল্যান্ডে কর্মরত ছিলাম সেই সময়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এ ডাক্তার ম্যাকনেল নামে একজন অর্থপেডিক সার্জেন এসেছিলেন লন্ডনে। তার সঙ্গে ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব গভীর হওয়ার পরে আমি জানাই যে কলকাতা তথা বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে স্কোলিওসিস আক্রান্তদের চিকিৎসার খুব একটা সুব্যবস্থা নেই। আমার যে এই ধরনের অসুস্থ ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছে রয়েছে সেই বিষয়টা তাকে জানাই। কারণ এই বিশাল কর্মকাণ্ড করার জন্য অনেক লোক সঙ্গে প্রয়োজন। প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসা পরিকাঠামো এবং অনেক অর্থের যোগান। তবে তিনিও বলেন চলুন একসঙ্গে আমরা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তৈরি করে এই রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা করি। এরপরে ২০০৬ সালে আমরা দুজনেই কলকাতায় এসে একটা ফিজিবিলিটি স্টাডি করি। এরপর থেকে আমরা প্রত্যেক বছর কলকাতায় এসে নভেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে ১০১২ জনের একটা টিম এই ধরনের অপারেশন করতাম। লন্ডন থেকে আমি আমার টিম নিয়ে আসতাম আর উনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ওনার টিম নিয়ে আসতেন। গত কয়েক বছর ধরে জগন্নাথ গুপ্তা ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স এসে দুটি করে অপারেশন থিয়েটার আমরা পাচ্ছি এই ধরনের অপারেশন করার জন্য। এখানকার কর্তৃপক্ষ আমাদের যেভাবে আন্তরিক সমর্থন দেন তার ফলে আমরা প্রত্যেক বছর অন্তত ৭-৮ জন বাচ্চার অপারেশন করতে পারি বিনামূল্যে।”
বজবজের জগন্নাথ গুপ্তা ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস অডিটোরিয়ামে আজ উপস্থিত ছিলেন বেলুন বেলুন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল সেক্রেটারি স্বামী সত্যেশ্বনান্দ মহারাজ। যিনি স্বামী বিবেকানন্দর এবং রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের অনুপ্রেরণায় গৈরিক বসন্ত পরিধান করলেও আদতে একজন গবেষক এবং চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তিনি আধুনিক লাইফ স্টাইলে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট বা মানসিক উদ্বেগ কাটানোর জন্য স্পিরিচুয়াল সায়েন্স অর্থাৎ আধ্যাত্মিকতার যে বিশাল ভূমিকা রয়েছে তা অত্যন্ত মনোগ্রাহী ভাবে তুলে ধরেন দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য চিকিৎসক এবং ডাক্তারির পড়ুয়াদের সামনে।
ইংল্যান্ডে কর্মরত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আরেক অর্থোপেডিক সার্জন ডাক্তার গিরিশ স্বামী বলেন, “ইংল্যান্ডে আমি যে সংস্থার সঙ্গে যুক্ত রয়েছি, ডাক্তার উজ্জ্বল দেবনাথ আগে ইংল্যান্ডের সেখানেই কর্মরত ছিলেন। তার মুখে জানতে পারি বাংলায় তথা ভারতের বিভিন্ন জায়গায় কিভাবে স্কোলিওসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার অভাবে অসংখ্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বহু দুঃস্থ মানুষ। এটা এমন একটা অসুখ যেখানে শিরদাঁড়া বেঁকে যায়। সুস্থ ভাবে চলাফেরা তো দূরের কথা সামাজিকভাবে ও নানা অসুবিধের সম্মুখীন হতে হয় ভুক্তভোগীকে। কলকাতার ক্ষেত্রে একটা হাসপাতালে এই ধরনের অপারেশনের খরচ প্রায় ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পড়ে যায়। আর ভারতের অন্যান্য জায়গায় বা কলকাতার কর্পোরেট হাসপাতাল গুলিতে সম্পূর্ণ পরিকাঠামোসহ এই ধরনের অপারেশনের খরচ ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। কিন্তু বিপুল এই চিকিৎসা খরচ বহন করা সকলের পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই এই ধরনের রোগীদের পাশে দাঁড়াতে ডাক্তার উজ্জ্বল কান্তি দেবনাথ যে উদ্যোগ নিয়েছেন এবং অপারেশন স্ট্রেট স্পাইন ট্রাস্ট তৈরি করেছেন তার সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আমি অত্যন্ত আপ্লুত।”
এই সেমিনারে শুধু ইতালি থেকে ছুটে এসেছিলেন অধ্যাপক ডাক্তার মেশিমো বালসানো। তিনি বলেন পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে চিকিৎসা পরিষেবার খরচ এতখানি বেড়ে গিয়েছে যে বেশ কিছু অসুখের চিকিৎসা করা এখন অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে গিয়েছে। তবে ভারতের মতো দেশে যেভাবে স্কোলিওসিস আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে সেই বিষয়টি আমি প্রথম জানতে পারি আমার বিশিষ্ট বন্ধু ডাক্তার উজ্জ্বল কান্তি দেবনাথ এর কাছ থেকে। যেভাবে উনি এগিয়ে এসে এই অপারেশন স্ট্রেট স্পাইন ট্রাস্ট নামে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তৈরি করেছেন এবং প্রত্যেক বছর দুঃস্থ বাচ্চাদের অপারেশনের জন্য গোটা পৃথিবী থেকে ডাক্তারদের নিয়ে এসে অপারেশনের ব্যবস্থা করছেন তা অত্যন্ত বিরল। আমি কত বেশ কয়েক বছর ধরে এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। আশা করব আগামী দিনে এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাজ আরো বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলা তথা ভারতের যে সমস্ত শিশু এবং রোগীদের অপারেশনের প্রয়োজন হবে আমরা তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসতে পারবো। ”
এছাড়াও এদিনের এই কনফারেন্সে তাতপর্যপূর্ণ বক্তব্য রাখেন জগন্নাথ গুপ্ত ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সাইন্স এর প্রিন্সিপাল ডাক্তার শান্তনু কুমার ত্রিপাঠি। ডক্টর দেবাশীষ ভট্টাচার্য, ইংল্যান্ড থেকে আসা ডাক্তার লাবনী। গত এক দশকে ভারতে স্পাইন সার্জারির ট্রেনিং এর ক্ষেত্রে কি কি পরিবর্তন এসেছে সেই বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন ডাক্তার অমিয় কুমার বেরা এবং থোরাসিক ফিউশন নিয়ে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ডাক্তার কে কে মুখোপাধ্যায়।
শিরদাঁড়া সোজা রেখো,
বলেছেন রামদেব,
সেকথাই বলেছেন
খেলোয়াড় Medvedev ।
শিরদাঁড়া বেঁকা হলে
Scoliosis কয়,
ঘাবড়ে যেওনা কেউ,
পেওনাকো ভয়।
উজ্জ্বল দেবনাথ
এ রোগের ওঝা,
কেটেকুটে rod বেঁধে
করে দেবে সোজা।
ডাক্তার উজ্জ্বল কান্তি দেবনাথ সম্পর্কে শিলচরের প্রথিতজশা রেডিওলজিস্ট ডক্টর প্রবীর চক্রবর্তী এই স্বরচিত ছড়া আক্ষরিক অর্থে সত্যি।