আত্মবিশ্বাসী বিশ্বজিৎ
ক্যা-ই কাল হবে ভাজপার
সায়ন্তি অধিকারী
কখনও পায়ে হেঁটে কখনও প্ল্যাটফর্মে হকারদের সঙ্গে আবার কখনও রাস্তার চায়ের দোকানে বসে চায়ে চুমুক আবার সকাল সকাল বাজার করতে গিয়ে জনসংযোগ করে চলেছেন লোকসভা ভোটের বনগাঁর তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস। এরই মধ্যে বনগাঁ সীমান্তে গরুপাচারের কেলেঙ্কারি নিয়েও সরব বিশ্বজিৎ। তৃণমূলের নেতা অনুব্রত মন্ডলকে এই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনা বিচারাধীন।সেটা নিয়ে কিছু বলছিনা। তবে গরু তো এ রাজ্যের নয়, ভিন রাজ্যের। ফলে সেটা কিভাবে আসছে, কারা আসলেই এর পেছনে রয়েছে খতিয়ে দেখ । উচিত।বিশ্বজিৎ দাস আরও বলেছেন,ইডি চার্জশিটে বলেছে, বিএসএফ গরু পাচারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদত দিয়েছে। বিএসএফ কার অধীনে?অমিত শাহের অধীনে। তাহলে তাঁকে কেন কোনও প্রশ্ন করছে না ইডি? এদিকে, সোমবার বনগাঁর ত্রিকোণ পার্কে কর্মীসভায় নিজের জেতার প্রসঙ্গে আশাবাদী ছিলেন বিশ্বজিৎ দাস। কর্মীসভাই যেনও জনসভায় রূপান্তরিত হয়েছিল। কত ভোটে বিদায়ী সাংসদ শান্তনু ঠাকুরকে হারাতে পারবেন? এই প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, মানুষের ভালোবাসা আমার সঙ্গে সব সময় আছে।আর জেতার কথা যদি বলেন, আমি জিতে গেছি। নতুন করে কিছু করার নেই। ২০১৯ এর ভুল আর হবে না।২০২৪ এ মেকআপ হয়ে যাবে। ২ লক্ষ ভোটে শান্তনু ঠাকুর হারবে। এর আগেও এক কর্মীসভায় শান্তনু ঠাকুরকে নিশানা করে বিশ্বজিৎ দাস বলেছেন, ইছামতী নদী সংস্কারের জন্য শান্তনু ঠাকুর ১০০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছিলেন এবং সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য একটি ড্রেজিং মেশিনও পেয়েছিলেন। ১০ দিনের মধ্যেই সেই কাজ শেষ হয়ে যায় এবং তাতে ৫০ কোটি টাকাও খরচ হয়নি। বাকি টাকা শান্তনু ঠাকুর নিজেই আত্মসাৎ করেছেন। তাঁর কথায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি বাগদা পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের প্রকল্পটি অনুমোদন করেছিলেন। কিন্তু, শান্তনু ঠাকুর সেই প্রকল্প রূপায়নেও ব্যর্থ হয়েছেন। যদি তিনি ও তাঁর দল, মতুয়া সম্প্রদায়কে এতই ভালোবাসেন, তাহলে মতুয়াদের জন্য একটি স্কুল পর্যন্ত নির্মাণ করলেন না কেন? আর এখন ওঁরা নির্মমভাবে সিএএ কার্যকর করছেন। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিশ্বজিৎ-এর দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার কেবলমাত্র জাতি, ধর্ম ও সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে মানুষে-মানুষে বিভেদ তৈরি করতে চাইছে। তাঁরা ১০০ দিনের কাজ ও আবাস যোজনার আওতায় অসংখ্য মানুষকে তাঁদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত রেখেছে। অথচ, প্রবল আর্থিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী ১০০ দিনের কাজের বঞ্চিত শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি মেটানোর ব্যবস্থা করেছেন এবং তিনি বঞ্চিত দরিদ্র উপভোক্তাদের তাঁদের প্রাপ্য বাড়িও তৈরি করে দেবেন। ফলে মানুষ তাঁকে চেনে এবং জানে। আর মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও চেনেন।লক্ষীর ভান্ডার হোক কিংবা স্বাস্থ্য-সাথী সব কিছুতেই মানুষের ভালোর জন্য একমাত্র তিনিই আছেন। এই কথা লোকে বুঝে গেছে। এদিকে,ভোটের প্রচারেও অভিনবত্ব বেছে নিয়েছেন বিশ্বজিৎ দাস। রবিবার যদি বনগাঁর নিউ মার্কেট হয় তাহলে সোমবার বাগদা কিংবা মঙ্গলবার স্বরূপনগর বিধানসভায় জিপে করে প্রচার সারছেন তিনি। প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে তৃণমূলের টিকিটে জয়লাভ করে বনগাঁ উত্তর বিধানসভার বিধায়ক হন বিশ্বজিৎ দাস। পাঁচ বছর পর ২০১৬ সালে বনগাঁ উত্তর কেন্দ্র থেকে ফের জয়ী হয়ে বিধায়ক হয়েছিলেন তিনি। ২০১৯ সালে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের ভরাডুবি হয়।তার পরেই তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে বিরোধের কারণে বিশ্বজিৎ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেন। ২০২১ বাগদা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে দাঁড়িয়ে জয়লাভ করেন। তার কয়েক মাস বাদে ফের তৃণমূলে ঘর ওয়াপসি হয় বিশ্বজিতের। এর পর তাঁর নেতৃত্বেই বনগাঁ পুরসভা এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভালো ফল করে তৃণমূল। ২০২২ সালে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলায় তৃণমূলের সভাপতি হন বিশ্বজিৎ। এবার তাঁকে দিল্লির লড়াইয়ে এগিয়ে দিয়েছে শাসকদল। নিজের জেতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী তিনি।