২৬০০০ শিক্ষকের চাকরি খেল কারা?
২৬ হাজার চাকরি খারিজের মূল কারিগর বিকাশ ভট্টাচার্য আর অভিজিৎ গাঙ্গুলী, নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই চাকরি খাওয়ার ব্লু প্রিন্ট বাম রাম মানিকজোড়ের
৩৬৫ দিন। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার নির্দেশ দিয়েছেন ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পাওয়া প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মীর চাকরি বাতিল করতে। সেই সঙ্গে ফেরত দিতে হবে চাকরি পাওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত পাওয়া বেতনের টাকা ১২ শতাংশ সুদ সমেত। বিচারপতি দেবাংশু বসাকের এই রায় ঘোষণার পর থেকেই একদিকে যখন বাংলা জুড়ে একের পর এক চাকরিহারা শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মীর পরিবার পথে বসার অবস্থায় পড়েছে সেই সময় চাকরি খাওয়ার উল্লাসে সেলিব্রেশনে মত্ত সিপিএম আর ভাজপার ২ মানিকজোড়। সোমবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক ২৬ হাজার ছেলে মেয়ের চাকরি বাতিলের ঘোষণা করার আনন্দে নাকি তমলুকের ভাজপা প্রার্থী অভিজিৎ গাঙ্গুলী সারারাত উপোস থেকে মঙ্গলবার সকালে পুজো দিয়েছেন ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল হওয়ার আনন্দে!
কারণ যতই বিচারপতি দেবাংশু বসাক এই রায় ঘোষণা করুন না কেন, একের পর এক মামলা দায়ের করে করে ২০১৬ সালের প্যানেল থেকে চাকরি পাওয়া প্রায় ২৬ হাজার বেকার ছেলে মেয়ের চাকরি কিভাবে খাওয়া যাবে তার জন্য গত কয়েক বছরে কম কাঠ খড় পোড়াননি সিপিএমের রাজ্যসভা সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য! যাকে যোগ্য সঙ্গত দিয়ে গিয়েছেন বিচারপতির ছদ্মবেশে কলকাতা হাইকোর্টের চেয়ারে বসে থাকা শুভেন্দু অধিকারীর ছায়াসঙ্গী পদ্মপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলী। যার পুরস্কারও অবশ্য পেয়েছেন হাতেনাতে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে অভিজিত গাঙ্গুলিকে তমলুক থেকে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি।
সিপিএম নেতা বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে জুটিতে ব্যাটিং করে মমতার আমলে চাকরি পাওয়া বাংলার ২৬ হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি খাওয়ার পথ সুপ্রশস্ত করে দিয়েছেন তো! একদিকে যেমন সিপিএম বা মেয়েদের সঙ্গে রামের আঁতাতকে আরো জোরদার করেছেন ঠিক তেমনভাবেই বাম বাম জুটিতে ভোটের আগেই এসেছে বড় সাফল্য।
আগাগোড়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা
সিপিএমের বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য তার ভাব শিষ্য বলে পরিচিত ভারতীয় জনতা পার্টির তমলুক লোকসভার প্রার্থী অভিজিৎ গাঙ্গুলীর বিচারপতির পদে থাকাকালীন তাকে দিয়ে এসএসসি মামলায় সিবিআইকে ঢুকিয়ে প্রথম চাকরি বাতিল করার খেলা শুরু করেন। দেশের অন্যান্য রাজ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও চাকরি বাতিল করার জন্য সমস্ত প্রার্থীর চাকরি বাতিল করতে হবে বলে কোনদিন শোনা যায়নি। কিন্তু বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য হাইকোর্টে দাঁড়িয়ে যেই মুহূর্তে সুপারিশ করেছিলেন এদের চাকরি বাতিল করে বেতনের টাকা কেড়ে নেওয়া উচিত সঙ্গে সঙ্গে তার ধামাধরা অভিজিৎ গাঙ্গুলী বিচারপতির পদকে কলঙ্কিত করে তেমনি রায় দিতে শুরু করেছিলেন। তমলুকের ভাজপা প্রার্থী হওয়ার পরে মামলাকারী চাকরি প্রার্থীরাই তো অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন অভিজিত গাঙ্গুলী কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পদে বসে থাকার সময় সিপিএম এবং ভারতীয় জনতা পার্টির নেতাদের কাছ থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য তাদের মনোমতো রায় দিতেন।
এমনকি চাকরি বাতিলের রায় ঘোষণার আগেই গত ৪ মার্চ বিচারপতি দেবাংশু বসাকের কোর্টে দাঁড়িয়ে তৃণমূল সাংসদ তথা বিশিষ্ট আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিকাশ ভট্টাচার্য আর অভিজিৎ গাঙ্গুলীর এই গোপন আঁতাতের কথা ফাঁস করে দিয়ে বলেন, একক বেঞ্চের বিচারপতি গতকাল সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি এসব নির্দেশ দিয়েছেন। এসব মামলার শুনানি করে তিনি রাজনৈতিক কেরিয়ার বানিয়ে ফেললেন। শুধু তাই নয় বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য যে গোটা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন এবং চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থের তাদের বিরুদ্ধেই রায় দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন। সেই চক্রান্ত ফাঁস করে কল্যাণ হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, সময় আসলে সব খাপ খুলব তোমার এবং তোমার বিচারপতির।
তবে শুধুমাত্র কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় নন, তৃণমূলের দলীয় মুখপাত্র কুনাল ঘোষ মামলাকারী ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পরেও প্রকাশ্যে ফাঁস করে দিয়েছিলেন কিভাবে বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য গাছেরও খাব, তলারও কুড়োবো – ফর্মুলায় চাকরি প্রাপকদের হয়ে ও মামলা লড়ছেন আবার তাদের চাকরি ছাঁটাই এর দাবিতে আন্দোলনে নামা চাকরিপ্রার্থীদের হয়ে একই মামলার পক্ষে এবং বিপক্ষে লড়াইয়ের জন্য মোটা অংকের টাকা তুলছেন। মাস কয়েক আগেই কুনাল ঘোষ বলেন, রাজনীতি করার জন্য উস্কানি দেওয়া হচ্ছে। বলতে বাধ্য হচ্ছি, বিকাশ ভট্টাচার্য ও তাঁর সঙ্গী আইনজীবীরা মামলা লড়ার জন্য এই যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের থেকে ২৭ লাখ টাকা নিয়েছেন। এই তিনি গরিবের নেতা! এখন অযোগ্যপ্রার্থীদের দিয়ে মামলা করিয়ে যোগ্যদের চাকরি আটকে রেখেছেন। বিকাশবাবু দয়া করে এদের রাজনীতির জন্য ব্যবহার করবেন না।