এটা তো মগের মুলুক নয়
একতরফা বিচারে ছাঁটাই ২৬ হাজার চাকরি, শ্রম দানের পরেও বেতন ফেরতের নির্দেশ কেন? বিচারপতি দেবাংশু বসাকের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের রাজ্যের
৩৬৫ দিন। নয়াদিল্লি। বিনা দোষে শাস্তি দেওয়া হয়েছে বাংলার হাজার হাজার চাকুরীরত শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মচারীকে। তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের বক্তব্য না শুনে একতরফা রায় দেওয়া হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের পক্ষ থেকে। ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করে চাকরি পাওয়ার পরে এতদিন ধরে স্কুলে শ্রম দান করার পরেও বেতন ফেরতের নির্দেশ কেন দিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিদের দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ? প্রায় ২৬ হাজার চাকুরীরত শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীর চাকরি ছাটাই করা হলেও কোন তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিলেন কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতি? এমন প্রশ্ন তুলে এবারে সুপ্রিমকোর্টে স্পেশাল লিভ পিটিশন দায়ের করল রাজ্য সরকার।
সেই সঙ্গে হঠাৎ করে বিপুল সংখ্যক অর্থাৎ প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মীর চাকরি বাতিল হওয়ার শিক্ষা ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়বে বলে উল্লেখ করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া আবেদনে।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ গত সোমবার ২০১৬ সালের এস এস সি দুর্নীতি মামলায় ২৫ হাজার ৭৫৩ জন চাকুরিরতর ছাটাই করার নির্দেশ দেন। এ রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গঠিত হওয়া কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শাব্বর রশিদির নেতৃত্বে গড়া ডিভিশন বেঞ্চ। নির্দেশে জানিয়ে দেন, জালিয়াতি করে চাকরি পাওয়া ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি অবৈধ। পাশাপাশি আরও নির্দেশ দেন, দ্রুত চাকরির প্রক্রিয়া শুরু করার। ওই নির্দেশ অনুযায়ী, যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের ১২ শতাংশ সুদসহ আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে ওই টাকা ফেরত দিতে হবে। এ নিয়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকেও নির্দেশ দেন।
এই দুই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই সুপ্রিম কোর্টে স্পেশাল পিটিশন দায়ের করল রাজ্য সরকার। গত সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় ঘোষণার পর এই মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্য জনসভা থেকে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, এই রায় বেআইনি আমরা এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাব। আমরা লড়ে যাব। লড়াই করব। যাঁদের কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ চাকরি বাতিল করা হল তাঁরা হতাশ হবেন না। চিন্তা করবেন না। কেউ জীবনের ঝুঁকি নেবেন না। আমরা আপনাদের পাশে রয়েছি। যতদূর লড়াই করার লড়াই করব। রায় নিয়ে বলার অধিকার আমার রয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ করছি। কারণ ২৬ হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি বাতিল মানে প্রায় দেড় লক্ষ পরিবার। বলছে কি না আট বছর তাঁরা চাকরি করেছে, চার সপ্তাহের মধ্যে সব টাকা ফেরত দিতে হবে। এটা সম্ভব?
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করার স্পেশাল লিভ পিটিশনে প্রশ্ন তোলা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ যেখানে রায় দিতে গিয়ে জানিয়েছে ছাঁটাই হওয়া প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মচারীর মধ্যে যেখানে মাত্র পাঁচ হাজারের মতো শিক্ষক এবং অশিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে তার প্রেক্ষিতে, ৫ হাজার জনের জন্য কেন ২৬ হাজার জন ভুগবেন, কেন যোগ্য-অযোগ্যদের বিভাজন করা হল না?
সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের রায় বেরনোর পরই এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার জানিয়েছিলেন, তাঁদের কাছে ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বেআইনি পথে চাকরি পাওয়া পাঁচ হাজার জনের তথ্য ছিল। কিন্তু, তার জন্য বাকি ১৯ হাজার জনের চাকরি কেন বাতিল করার নির্দেশ দেওয়া হল? সেদিনই তিনি জানিয়েছিলেন এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবে এসএসসি। আজ অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হল এসএসসি।
পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্ট রায়ে জানিয়েছিল, লোকসভার নির্বাচন পর্ব মেটার পরে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। এই বিষয়টি কেউ চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া আবেদনপত্রে লেখা হয়েছে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার অব্যবহিত করেই কিভাবে এত বড় আকারের নির্বাচিত নিয়োগ প্রক্রিয়ার শুরু করা যাবে?