সায়ন্তি অধিকারী
৩৬৫ দিন। বাইরে ৪২ ডিগ্রি। এদিকে ৪২টি আসনের লড়াই। চড়ছে লোকসভা ভোটের পারদও। এরই সঙ্গে গা জ্বলানো গরম এবং সদ্য দুর্ঘটনার সম্মুখীন হলেও ‘কুছ পরোয়া নেহি’। গলায় কলার বেঁধেই মাঠে-ময়দানে বারাসাতের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ কাকলী ঘোষ দোস্তিদার। শনিবার ঘড়ির কাটায় ৫টা বাজতেই হৃদয়পুরের ৩২ নং ওয়ার্ডের রাধা কুঞ্জে দাঁড়াল গাড়ি। নেমেই কর্মীদের সঙ্গে ২০ মিনিট বার্তালাপ করার পরই প্রচারে নামলেন তিনি। সেখানেও কর্মীদের জন্য কিছু কাজও ভাগ করে দিলেন। এরই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন, ভোটের দিন যেনও মহিলারাই সবার আগে ভোট দিতে আসে। সকাল ৭ থেকে দুপুর ৩ পর্যন্ত মহিলা এবং ৬০ উর্ধ্বদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
রাধা কুঞ্জ ওই হলের বাইরে তখন অগুনতি ভিড়। ঢাক ঢোল। জিপ গাড়ি রেডি। দিদি বেরোতেই ঢাক বাজতে শুরু হল।ভিড় করতে থাকল অনুগামীরা। গলির আশেপাশে থিক থিক করছে মানুষের ভিড়ে। গরম যতই হোক আবেগের কাছে হারতে হয়। ঠান্ডা ঘরে থেকে এই আবেগ বোঝা যাবে না। এদিকে ঢাক ঢোল বাজতে বাজতেই জিপ গাড়িতে উঠে পড়লেন তিনি। থিম সং বাজতে বাজতেই শুরু হল জনসভা। আপন পল্লী থেকে খানিকটা দূরে যেতেই ফুল নিয়ে হাজির মিনতি ঘোষ। ফুল দিয়ে বরণ করবেন তাঁদের প্রিয় প্রার্থীকে।
খানিকটা সফলও হলেন। ফুল পৌঁছাল দিদির কাছে। তিনি আবার সেই ফুলে তাঁকেও ছুঁড়ে দিলেন। ফুলের মতোই যেনও সহজ তাঁদের সম্পর্ক। কোনও আড়াল নেই। তিনবারের সাংসদ তিনি। এবারেও তাঁকেই চাই। আচরণেই যেনও বুঝিয়ে দিচ্ছে বারাসাত-হৃদয়পুরের মানুষ।কাকলি ঘোষ দোস্তিদার জানিয়েছেন, বেশি বেশি করে অভিযোগ করুন। তবেই তো আশাপূরণ করতে পারব। আর আমাদের সব থেকে বড় শক্তি আমাদের কাজ। উন্নয়নে ভর করেই আমাদের লড়াই। রাজ্য সরকার যা যা উন্নয়নমূলক কাজ মানুষের জন্য করেছেন এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন, তাতে বাংলার মানুষ নিশ্চিতভাবেই তৃণমূলের পাশে রয়েছেন। আমি যেভাবে আমার সংসদীয় এলাকায় পড়ে থেকে মানুষের স্বার্থে কাজ করে এসেছি তাতে আমি বিশ্বাস করি এবারও বিপুল সমর্থন পাব মানুষের, এতটাই আত্মবিশ্বাস তিনি।
পরপর তিনবারের সাংসদ তিনি। ২০০৯ থেকে ২০২৪, একটানা ১৫ বছর সাংসদ থাকায় তাঁর উপর আস্থাও বেড়েছে দলের। স্বভাবতই প্রার্থী পরিবর্তনের ঝুঁকি নিতে হয়নি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে। চতুর্থবারের জন্য ফের তাঁকেই টিকিট দেওয়া হয়েছে বারাসত লোকসভা আসন থেকে। ২০০৯ সালে ফরওয়ার্ড ব্লকের সুধীন চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে বারাসাত থেকে প্রথমবার সাংসদ হন কাকলি ঘোষ দস্তিদার। ১ লক্ষ ২২ হাজার ভোটে জিতেছিলেন তিনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ফরওয়ার্ড ব্লকের মোরতাজ হোসেনকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য সংসদে যান তিনি। ভোটের ব্যবধান বেড়ে দাঁড়ায় ১ লক্ষ ৭৭ হাজারের ওপরে। কিন্তু গতবারের নির্বাচনে ফরওয়ার্ড ব্লকের হরিপদ বিশ্বাসকে হারালেও তৃণমূল প্রার্থী কাকলির ভোটের ব্যবধান কমে দাঁড়ায় ১ লক্ষ ১০ হাজারের কাছাকাছি। যদিও এই ভোট কমার পিছনে ছিল অন্তর্ঘাত। যদিও এবার সেই ব্যবধান আরও বাড়িয়ে রেকর্ড ভোটে বারাসাত আসনে জেতাই লক্ষ কাকলির। তিনি শাসক দলের মহিলা সংগঠনের সর্বভারতীয় সভানেত্রীও বটে। তথা চিকিৎসকও। অনেকগুলো পদ সামলে একটুও হাঁফিয়ে ওঠেননি। বরং মেজাজের সঙ্গে করছেন প্রচার। এমনকি দুর্ঘটনাও টলাতে পারেনি তাঁকে। বরং দিদি কেমন আছেন জিজ্ঞেস করতেই হেসেই বললেন, ‘ভালো আছি’।