কৃষ্ণনগর থেকে ইন্দ্রনীল সাহা • ছবি কুণাল মালিক
প্রশ্ন কৃষ্ণনগরের কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের রাজ পরিবারের সদস্য হওয়ার সুবাদে ভাজপার প্রার্থী হলেও রাজনীতিতে তো আপনার কোন অভিজ্ঞতাই নেই? মনে হচ্ছে না এক্ষেত্রে আপনি অনেকটাই ব্যাকফুটে রয়েছেন?
অমৃতা রায়। আমি রাজনীতিতে নতুন ঠিকই। কিন্তু দেশ এবং আশেপাশে কি হচ্ছে তার খবর আমরা সকলেই রাখি। আমিও রাখতাম। আমি সবসময় সতর্ক এবং দেশ ও রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে সচেতন। এখানে কেউ ভালো নেই। বিশাল দুর্নীতি চলছে। সবাই আতঙ্কে থাকে। এত ঘুষ কান্ড রেশন দুর্নীতি গরু পাচার এগো আছেই তাছাড়াও শিক্ষাব্যবস্থা গোল্লায় চলে গেছে। এই সমস্যার সমাধান কিভাবে হবে সেগুলো তো একা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। সিস্টেম পরিবর্তন একাকেও করতে পারেনা। প্রথম যখন বিজেপি আমায় ভোটে প্রার্থী হওয়ার কথা বলেছিল আমি না করে দিয়েছিলাম। কারণ সবাই ঝামেলা থেকে দূরে থাকতে চায়। পরে আবার যখন আমায় দ্বিতীয়বার প্রার্থী হওয়ার কথা বলে আমায় মনে হয়েছিল আমার একটা চেষ্টা করা উচিত।
প্রশ্ন সিরাজ দ্দৌলাকে সরাতে মীরজাফরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে লর্ড ক্লাইভ কে বাংলায় নিয়ে এসেছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র? এই অভিযোগকে স্বীকার করেন?
অমৃতা রায় এটা মানা সম্ভব নয়। লজ্জার ব্যাপার বাঙালি হয়ে ইতিহাসটাই জানেনা। বাংলাটাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে একটা বহিরাগতর জন্য। সিরাজ ভারতের অংশ ছিল না। সিরাজ হচ্ছে মুঘলদের শাখা-প্রশাখা। বাংলার মহারাজা যিনি নাকি সমাজ সেবায় পারদর্শী ছিলেন। উনি একজন সিরাজের মত অত্যাচারী, ভ্রষ্টাচারী শাসক, কলঙ্কিত ব্যক্তিকে সরিয়েছিল মহারাজা নন্দকুমার , পুরীর রাজাও ছিলেন। তাতে দোষ কোথায়। এটা কেন মমতা ব্যানার্জির পার্টির গায়ে লেগে যাচ্ছে? নিজেরা করতে পারেনি বলে? ২০১১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত উনারাও শাসন করছেন ওনাদের অবদানটাও তো জানতে হবে? উনারা আড়াইশো তিনশো বছর টেনে আনছেন এটা না জেনে টানছেন।এটা আক্রমণ করতে হবে বলে করছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেইসময় ছিলেন না, আমরাও কেউ ছিলাম না। ইতিহাসটা তো আমরা লিখিনি। যেটা আমি শুনেছি আলীবর্দী খা এর সভায় বসতেন তিনিও তো সিরাজের বিরুদ্ধে লিখেছেন। উনি একজন মুখ্যমন্ত্রী ওনার দায়িত্বপূর্ণ হয়ে মন্তব্য করা উচিত। লর্ড ক্লাইভ কে কি করে কৃষ্ণচন্দ্র নিয়ে আসবেন? লর্ড ক্লাইভ একজন ব্যবসায়ী ছিলেন সব দেশ ঘুরতেন। তার মধ্যে ভারতেও এসেছিলেন। কৃষ্ণচন্দ্র বললেই তো ফ্লাইভ আসবে এমনটা নয়। বিলের থেকে কৃষ্ণচন্দ্রের সঙ্গে ক্লাইভের তো আর কোন পরিচিতি ছিল না। ওনারা শুধু হাওয়ায় হাওয়ায় কথা বলছেন। মূর্খ লোকদের সঙ্গে আমি কোন কথা বলতে চাই না। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরও লিখেছেন সিরাজ কতটা ঘৃণ্য ব্যক্তি ছিলেন। ওনারা সহ্য করছিলেন কারণ সিরাজ একজন অতি লমপট ব্যক্তি ছিলেন। ২০১১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আপনারা কি করেছেন? আপনার লোকসভার সাংসদ মহুয়া মৈত্র সংসদের পাসওয়ার্ড বাইরের লোককে দিয়ে দিল? এটা লজ্জার নয়? আবার তাকেই কৃষ্ণনগরের প্রার্থী করে বসিয়ে দিল?
বাস্তব ইতিহাস বলে, কৃষ্ণচন্দ্রের শাসনকালীন নদিয়া সাক্ষী হয়েছিল সবচেয়ে বড় পালা বদলের।২৩ জুন ,১৭৫৭ রবার্ট ক্লাইভ এর বাহিনীর কাছে পরাজিত হলেন বাংলার শেষ নবাব সিরাজদৌল্লা। আর সেই সঙ্গে ইতিহাসের পাতায় গাথা হয়ে গেল বিশ্বাসঘাতকতার আরো একটি নাম পলাশী। রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার জন্য কৃষ্ণচন্দ্র কে কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছিলেন সিরাজ। তার জন্য প্রতিহিংসাবশত মীরজাফর ও জগত সেটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পলাশীর আম বাগানে
সিরাজদৌল্লার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিলেন। ইংরেজদের সঙ্গে সখ্যতা এমন পর্যায় পৌঁছেছিল যে রবার্ট ক্লাইভ পলাশীর যুদ্ধের ময়দানে যাওয়ার সময় রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের প্রাসাদে রাত যাপন করেন।
প্রশ্ন শোনা যাচ্ছে, রাজ পরিবারকে সামনে রেখেই শুধু ভোটের প্রচার করে চলেছেন?
অমৃতা রায়। বিরোধীরা বারবার আমার পরিবারকে টেনে আক্রমণ করছেন। কিন্তু আমি যখনই প্রচারে গেছি কোন মানুষ আমার পরিবারকে নিয়ে কোন কিছু বলেনি। বরং তারা আমার মাথার উপর হাত রেখে আশীর্বাদ দিয়েছে। এমনকি সংখ্যালঘুরাও আমায় আশীর্বাদ করেছে। কোথাও কৃষ্ণচন্দ্রের নাম তুলে কেউ কিছু বলেনি। সবাই আমার দিকে এগিয়ে এসেছে।
বাস্তব কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো প্রকল্প বা মোদি সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে অমৃতা রায়কে প্রচার করতে দেখা যাচ্ছে না বলেই অভিযোগ। তৃণমূলের দাবি, এটাই স্বাভাবিক অমৃতা রায় রাজনীতির ময়দানে নতুন। তাকে দলের তরফ থেকেও বলে দেওয়া হয়েছে, মোদি সরকারের কোন উন্নয়ন বা প্রকল্প নিয়ে বিশেষ কিছু না বললেও চলবে। নিজের রাজ পরিবারকেই সামনে রেখে ভোট প্রচার করতে।তাতে যদি মহুয়া মৈত্রের মতো হেভিওয়েট বিরুদ্ধে রাজ পরিবারের নামে কিছুটা ভোট ভাজপার ঝুলিতে টানা যায়।
প্রশ্ন আপনার পার্টির লোকরা তো রাজমাতা বলেই আপনার নামে জোর গলায় প্রচার করছে।আপনি রাজমাতা কি করে হলেন?
অমৃতা রায়। এটা একটা বিভ্রান্তি কিংবা ভুল বলতে পারেন। আমায় রাজমাতা বলা যায় না। কারণ, তখনকার দিনে যদি রাজত্ব থাকতো আমার যদি ছেলে রাজা হত ও স্বামী না থাকতো তখন আমি রাজমাতা হতাম। যেটাকে ইংরেজিতে বলে গ্রিন মাদার। এক্ষেত্রে দল একটু বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছে। আসলে ওরা ভাবছে জনগনের মাতা। রাজবাড়ী থেকে আসছে। রাজমাতা হয়ে গেল। রাজমাতা নই, রাণী মাও হতে পারি নাহলে আমার নাম ধরেই ডাকতে পারেন।
বাস্তব বাংলায় ভাজপার দ্বিতীয় প্রার্থী তালিকা যখন প্রকাশ পায় তখন কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হিসেবে অমৃতা রায়ের নাম এর আগে রাজমাতা লেখা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, নিজেদের প্রার্থীর দেওয়াল লিখনেও রাজমাতা লেখা হয়েছে। যাতে রাজমাতা নামে জনগণের মাঝে বেশি প্রভাব ফেলা যায়। কৃষ্ণনগরের রাজ পরিবারের সদস্য অমৃতা রায়ের স্বামী এবং সন্তান দুজনেই বেঁচে রয়েছেন। এক্ষেত্রে মিথ্যে রাজমাতা বলে প্রচার করে ভোটের বাজারে অমৃতা রায়কে জনগণের সামনে একেবারে ভিন্ন ভাবমূর্তি তৈরি করার চেষ্টা করছে ভাজপা। তা কার্যত স্পষ্ট হয়ে গেল অমৃতা দেবীর কথাতেই।
প্রশ্ন তৃণমূলের মহুয়া মৈত্রের মতো প্রার্থীকে টক্কর দিতে পারবেন? একে তো আপনার তুলনায় অনেকটাই কম বয়সী সঙ্গে রাজনীতিতে আপনার চেয়ে অভিজ্ঞতা ও বেশি।
অমৃতা রায়। না পারার কি আছে। এটা তো ছেলে খেলা নয়। যে ইচ্ছা মত করব তারপর ছেড়ে দেব যখন একটা কাজ নিয়েছি সেই কাজটা শেষ করেই ছাড়বো।
বাস্তব স্থানীয় মানুষেরাই বলছে, প্রচারে কোথায় কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ির সদস্য অমৃতা রায়? একদিকে তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্র সকাল সন্ধ্যে দুপুর এক করে কৃষ্ণনগরের ৭টা বিধানসভা চড়ে ফেলছেন। তখন প্রচারে কয়েক যোজন দূরে রয়ে গিয়েছে অমৃতা রায়। সম্প্রতি বোলতা কামড়ে প্রচার থামিয়ে কৃষ্ণনগর ছেড়ে আপাতত কলকাতায় ফিরেছেন।
প্রশ্ন কোন অনুষ্ঠান ছাড়া কৃষ্ণনগরে নাকি দেখাই মেলে না অমৃতা রায়ের? ভোটে জিতলে তো খুঁজেই পাওয়া যাবে না? কি বলবেন?
অমৃতা রায়। একেবারেই ঠিক নয়, আমি অধিকাংশ সময় কৃষ্ণনগরেই থাকি। এটা ভুল প্রচার করা হচ্ছে।বাস্তব দুর্গাপুজো, রাস মেলার মতো বিশেষ অনুষ্ঠানের দিনই কৃষ্ণচন্দ্রের রাজ পরিবারের বর্তমান সদস্যরা কৃষ্ণনগরের আসেন। স্থানীয়দের দাবি, অমৃতা রায় ও তার পরিবার অধিকাংশ সময় বালিগঞ্জের সানির পার্কের অভিজাত আবাসনেই থাকেন।