কৃষ্ণনগর থেকে ইন্দ্রনীল সাহা,কুণাল মালিক
৩৬৫দিন। ঘড়ির কাঁটায় সকাল ১০.৩০ মিনিট। চৈত্রের তীব্র দাবদাহে নদিয়ার কৃষ্ণনগরের ধুবুলিয়ার মাঠ যেন ফুটছে। তার মধ্যেও কাতারে কাতারে মানুষ আসছেন প্রিয় দিদির জন্য, তৃণমূলকে ভালোবাসে আর শপথ নিতে বাংলার বঞ্চনা, অপমানের প্রতিশোধ নিতে হবে, গোহারা হারাতে হবে ভাজপাকে, দিদির দেখানো পথে লড়াই হবে, খেলা হবে মাঠে ময়দানে- রবিবারের ধুবুলিয়া দেখল মমতা আবেগ কাকে বলে ! আর মমতা জনসভায় পৌঁছতেই সেই আবেগের বাঁধ ভাঙল। শুধু মাত্র মহিলাদের ভিড় সামলাতে হিমসিম খেতে হল উদ্যোক্তা থেকে পুলিশ সবাইকে। সভার শুরুর আগে এক সময় খোদ প্রার্থী মহুয়া মৈত্রকে ভিড় সামাল দিতে মঞ্চ থেকে নিচে নেমে আসতে হয়। সাড়ে ১২ টা নাগাদ মঞ্চে উঠলেন মমতা। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে অভিবাদন গ্রহণ করলেন, প্রার্থীর হাত তুলে ধরে সমর্থন চাইলেন।মাথার চোট সারিয়ে কৃষ্ণনগর থেকে লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করলেন দলনেত্রী। উল্টোদিকের জনস্রোতের গর্জন বুঝিয়ে দিল কৃষ্ণনগর মমতার, তৃণমূলের। ভাজপা, বাম কংগ্রেস বহু যোজন দূরে। মোদি-শাহর অতি ঘনিষ্ঠ আদানিকে নিয়ে সংসদ প্রশ্ন করায় বিপাকে পড়তে হয়েছিল ভাজপা নেতৃত্বকে। মহুয়ার বিরুদ্ধে প্রশ্নের বিনিময়ে ঘুষ নেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ তুলে তার সাংসদ পদ খারিজ করে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে কৃষ্ণনগর থেকে তাঁর লোকসভায় ভোটের টিকিট নিশ্চিত করে দিয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা। সম্প্রতি মহুয়ার বাড়ি, কার্যালয়ে সিবিআই তল্লাশি চালায়। এমনকি ভাজপার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে মহুয়াকে দিল্লিতেও ডেকে পাঠিয়েছে সংস্থা ইডি। ভোটের মুখে মোদি শাহ যখন টার্গেট করেছে মহুয়াকে, তখন রবিবার কৃষ্ণনগর থেকে লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করে ভাজপাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন মমতা।
১. আগেরবার বলেছিল আপকি বার ২০০ পার। ৭৫ পেরত পারেনি। তাও আবার ১৫ জন তৃণমূলে চলে এসেছে। এবার বলছে ৪০০ পার। আমি বলছি ২০০ পার করে দেখা তারপর সাঁতার কাটবি। ৪০০ পাবে যখন ইডি সিবিআই কেন? বাংলায় গোহারা হারবে।
২.মহুয়ার উপর দেখেছেন কী অত্যাচার হয়েছে? ওঁকে লোকসভা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ ওজোরে জোরে কথা বলত। বিজেপির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলত।ওঁর বাবা মা বেচারা কিছু জানে না। ওঁর বাড়িতেও তল্লাশি করে এল। ওদের কাজ যেমন করে হোক মহুয়াকে হারানো। মহুয়া ওদের যোগ্য জবাব দেব। আপনারা জেতানোর পরও ওঁকে তাড়িয়ে দিয়েছে এত বড় সাহস। তাই ওঁকে জিতিয়ে আবার পাঠাতে হবে যাতে মুখোশ খুলে দেয়। রানাঘাটেও জেতাবেন। বাংলার ৪২ টা সিটে তৃণমূলকে জেতাবেন।
৩. ইংরেজদের আমলে যখন যুদ্ধ চলছিল। বাংলা সিরাজুদ্দৌলাকে সমর্থন করে মীরজাফর কে নয়। সিরাজুদ্দৌলা ভালো না খারাপ আমি আলোচনা করছি না। যে লোকটা লর্ড ক্লাইভের বন্ধু হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। বাংলার স্বাধীনতা যুদ্ধকে খতম করার জন্য। সেই নামটাকে নিয়ে এসেছে। মোদিবাবু আপনি কি ইতিহাস ভুলে গেলেন ।
৪. আবার বলছে রাজমাতা। কবে থেকে রাজমাতা হল ? রাজমাতা আবার কী! এখন আমরা সবাই প্রজা। প্রজার ভূমিকা পালন করুন। আর রাজা হলে রাজপ্রাসাদে থাকবেন। রাজপ্রাসাদে জনগণের ধর্ম পালন করুন। মিথ্যার আশ্রয় নেবেন না। তাহলে কিন্তু ইতিহাসের পাতা ওল্টাবো। ইতিহাস টেনে আনলে আপনারা বিপদে পড়ে যাবেন। ইতিহাস মানুষের ভাল করে জানা দরকার।
৫. ইন্ডিয়া জোট আমি তৈরি করেছি। নামটাও আমার দেওয়া। ভোটের পর ওটা দেখে নেব।সিপিএম-কংগ্রেস এখানে ইন্ডিয়া নামে লড়ছে। এখানে তো জোটই হয়নি। এখানে তো ঘোঁট হয়েছে। সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি এক হয়ে লড়ছে। আর এক দিকে আমরা একা লড়ছি। কংগ্রেস-সিপিএম যদি বলে আমরা ইন্ডিয়া জোট, তাহলে ওদের বলুন আপনারা দিল্লিতে গিয়ে লড়ুন। অন্য জায়গায় গিয়ে লড়ুন। বাংলায় মমতার দিকে তাকাতে আসবেন না। আমিও অখিলেশের সঙ্গে কথা বলে উত্তরপ্রদেশে একটা আসনে প্রার্থী দিয়েছি। আসামের চারটে আসনে আমরা লড়াই করছি। কিন্তু সবটাই কথা বলে।
৬. কাউকে কাউকে ফোন করছে। আবার সেই ফোনের রেকর্ডিং বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে। তাহলে ফোনের গোপনীয়তা কি থাকল। আমি নাম বলছি না যাকে ফোন করছেন তিনিও স্বাস্থ্য সাথী পান, লক্ষ্মীর ভান্ডার পান ।
৭. বাংলায় সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। সিপিএমকে ভোট দেওয়া মানে বিজেপিকে ভোট দেওয়া। কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া মানে বিজেপিকে ভোট দেওয়া। আরেকটা ল্যাজুড় পার্টি হয়েছে, মুসলিম পার্টি। ওদের ভোট দেওয়া মানে বিজেপিকে ভোট দেওয়া। আর বিজেপিকে ভোট দেওয়া মানেও বিজেপিকে ভোট দেওয়া। বিজেপি একটা দাঙ্গাবাজ দল । তাঁদের সঙ্গ দিচ্ছে কংগ্রেস এবং সিপিএম। নিজের সর্বনাশ নিজে না করতে চাইলে ওদের ভোট দেবে না। যদি ক্যা না করতে হয়, যদি এনআরসি না করতে হয়, যদি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পেতে চান, তাহলে তৃণমূলকে ভোট দিন।
৮. ক্যা মাথা। ল্যাজা হল এনআরসি। সিএএ করলেই এনআরসিতে পড়ে যাবেন। বিদেশি হয়ে যাবেন। বিজেপি নেতারা কেন সিএএ-তে আবেদন জানাচ্ছেন না? বিজেপি প্রার্থীদের বলুন আবেদন করতে। ওরা তাহলে বিদেশি হয়ে যাবে ভোটে দাঁড়াতে পারবেনা। তাই আবেদন করছে না। ২০১৯ সালে বিল পাস হয়েছে ভোটের আগে কেন ক্যা করা হচ্ছে? এতদিন কেন করল না। সব ভাওতা ।
৯. অরবিন্দকে আটকে রেখেছে। ওঁর কাজ কি বন্ধ রাখতে পেরেছে?
১০. বিজেপি হচ্ছে সর্বঘটের কাঁঠালি কলা, হলুদ গুঁড়ো। কিন্তু মিথ্যা কথায় কাঁঠালি কলা লাগেনা । বিচুটি পাতার দল ।
১১. আমাদের এক নেতার বাড়িতে ৩ দিন ধরে তল্লাশি চালিয়েছে। করলাম কি করছিল রে ওরা। ওর ২ টো বাচ্চা আছে। ওরা বাথরুমে যেতে পারেনি, রান্না করতে পারেনি। ১৬ জন মিলে ৩ দিন ধরে বাড়িতে ছিল। ওদের খাবার বিল হয়েছে ২০-২৫ হাজার টাকা। একবারও জিজ্ঞেস করেনি বাচ্চাগুলো খেলো কিনা খেল কিনা।
১২. আমার কাছে একটা এফ আই আর আছে এখন ফোন করে বলা হচ্ছে, আবাস যোজনায় ভোটের পর বাড়ি করে দেওয়া হবে। আমি বলছি এতদিন তাহলে কেন করলেন না? এরপর ফোন করলে বলে দেবেন দিদি বলেছে দিদি আবাস যোজনার বাড়ি করে দেবে আপনাদের লাগবে না।
১৩. এন আইএ বেছে বেছে আমাদের জেলা সভাপতিদের কেন নোটিশ দিচ্ছে? ভোটের আগে কেন নোটিশ দেওয়া হচ্ছে।
১৪. আমি বলে দিয়ে গেলাম সিবিআই, ইডি যতই নোটিশ পাঠাক কোথাও যাবেন না। বলবেন ভোট চলছে।
১৫. বিজেপি তে গেলেই সব ওয়াশিং মেশিন হয়ে যায়। একজন স্যার আছেন প্রফুল্ল স্যার কদিন আগেই বিজেপিতে গেছেন তার সব মামলা এখন চলে গেছে।