কৃষ্ণনগর থেকে ইন্দ্রনীল সাহা • ছবি কুণাল মালিক
৩৬৫দিন। রাতেই মহুয়া মৈত্রের অফিস থেকে জানিয়েছিল, সকাল ৯ টা ২০ তে প্রচারে বেরোবেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থী। প্রচার হবে কালিগঞ্জ বিধানসভার গোবড়ায়। ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে ঠিক ৯ টা ২০তেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লেন মহুয়া। গাড়িতে উঠেই প্রশ্ন, কি দেরি হয়নি তো? সাধারনত ভোটের বাজারে প্রার্থীদের কমবেশি দেরি হয়। সকলেই তাতে অভ্যস্ত। কিন্তু কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থী এক্ষেত্রে একেবারে আলাদা। অন টাইমে চলেন।তীব্র দাবদাহে যেন ফুটছে গোটা কৃষ্ণনগর। তাপমাত্রা পৌঁছেছে ৩৭ ডিগ্রিতে। নীল পারের সাদা শাড়ি, ফুলহাতা ব্লাউজ, চোখে সানগ্লাস ও মাথায় ঘোমটা টেনে প্রচারে নেমে পড়লেন মহুয়া মৈত্র। এক মিনিটও সময় নষ্ট করা তার ধাতে নেই। পূর্ব প্রতিশ্রুতি মতো নিজের গাড়িতেই সাক্ষাৎকার দেওয়া শুরু করে দিলেন। প্রথম ধাক্কায় বুঝিয়ে দিলেন, ইডি, সিবিআই কিংবা মোদির হুঙ্কারে তিনি থোড়াই কেয়ার করেন। বরং মহুয়া জানিয়ে দিলেন জিতে ফিরলে ওদের মুখে ঝামা ঘষে দেবেন। ওদিকে, সকাল থেকেই কালীগঞ্জের গোবরা পঞ্চায়েতের আকন্দ বেরিয়া মোড়ে ব্যান্ড পার্টির সুরে বেজে চলেছে কখনো ‘সারে জাহাসে আচ্ছা’ আবার কখনো ‘বাঁধ ভেঙে দাও ‘। নিজেদের প্রার্থীকে দেখা মাত্রই সত্যি যেন বাঁধ ভেঙে গেল। গাড়ি থেকে নামতে কেউ ফুল ছুঁড়ে স্বাগত জানালেন আবার কেউ পরিয়ে দিলেন রজনীর মালা। সময় নষ্ট না করে হুড খোলা জিপে উঠে পড়লেন মহুয়া। গ্রামের সরু রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলল তৃণমূল প্রার্থীর প্রচার। রাস্তার দুধারে তখন শুধু মাত্র গ্রামবাসীদের ভিড়। প্রত্যেকে হাত তুলে বুঝিয়ে দিলেন যে ভাজপা প্রার্থী নয়, সমর্থন জানাচ্ছেন তাদের ঘরের মেয়েকে। হঠাৎ থমকে গেল মহুয়ার জিপ। রাস্তার পাশের মসজিদের থেকে বেরিয়ে এলেন এক মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। দুহাত পেতে আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন তৃণমূল প্রার্থীকে নয়, যেন নিজের মেয়েকেই আশীর্বাদ করলেন।
প্রশ্ন বারবার মহুয়া মৈত্রকে ইডি, সিবিআই দিয়ে টার্গেট করা হচ্ছে কেন? এমনকি ভোটের আদর্শ আচরণ বিধির সময়ও নিয়ম ভেঙে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হচ্ছে?
মহুয়া। এটা খুব পরিষ্কার ওদের বিরুদ্ধে যারা মুখ খুলছে, সরব হচ্ছেন। তখনই টার্গেট করা হচ্ছে। আসলে এদের নিয়ম আছে। প্রধানমন্ত্রীকে কেউ ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে পারবে না, আগামী সম্পর্কে কেউ কিছু বলতে পারবে না। এগুলো ওদের একটা অলিখিত নিয়ম। এই নিয়ম কেউ লংঘন করে না। আমি এসবের বিরুদ্ধে গিয়ে সোচ্চার হয়েছি, সবার সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করেছি।তাই ওদের আমাকে এত অপছন্দ।
প্রশ্ন আপনি মহিলা বলে কি আরো বেশি টার্গেট করা হচ্ছে?
মহুয়া। হ্যা, একদম। ওরা এমনিতেই নারী বিদ্বেষী। ওরা সবসময় মহিলা সংরক্ষণের কথা বলে প্রচার করে, আমাদের পার্টির থেকে ৩৭ শতাংশ মহিলা সাংসদ সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন। ওদের মাত্র ১২ থেকে ১৪ শতাংশ মহিলা রয়েছে সংসদে। লজ্জাজনক। কতজন মহিলাকে লোকসভায় ওরা প্রার্থী করেছে? ওদের মতো নারী বিদ্বেষী পার্টি আর দুটো নেই।
প্রশ্ন আপনার বিরুদ্ধে কৃষ্ণ চন্দ্রের রাজ পরিবারের রানীকে প্রার্থী করেছে ভাজপা। তার সম্পর্কে কি বলবেন ?
মহুয়া আমার বিরোধী কোনো প্রার্থী নেই। লজ্জা হওয়া উচিত। বাংলায় কোনো রাজরানী আছে নাকি? আমার বিরোধী প্রার্থীকে নিয়ে কিছুই বলার নেই। আমি জানি আমার বিরুদ্ধে প্রার্থী হল বিজেপি।
প্রশ্ন ১৯৯৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি কৃষ্ণনগর আসন থেকে তো একবার জিতেছে। সত্যব্রত মুখার্জি এই আসন থেকে যেতেই তো সাংসদ হয়েছিলেন। এখানে বিজেপি ফ্যাক্টর হবে না বলছেন?
মহুয়া। ১৯৯৯ সালের লোকসভা ভোটে মমতা দিদির দয়ায় বিজেপি এই আসনটা জিতেছিল। তারপর বিজেপির ওই প্রার্থী দুবার লোকসভা ভোটে এই আসনে দাঁড়িয়ে হেরেছে। তারপর থেকে বিজেপি এখানে কিছু করতে পারেনি। পারবেও না।
প্রশ্ন আপনাকে লোকসভার সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার কোনও প্রভাব এবারের ভোটে লক্ষ্য করছেন?
মহুয়া। আমায় বহিষ্কার করার প্রভাব অবশ্যই ভোটে পড়বে। মানুষ দেখেছে আমি কি করেছি। আমি বলব, এতে আমার ভোটার ডবল হয়েছে।
প্রশ্ন সকলেরই তো অনুমান মহুয়া মৈত্র আবার জিতবে। তাহলে সংসদে গিয়ে কি আবার সোচ্চার হবেন?
মহুয়া। সংসদে প্রতিবাদ আরও তীক্ষ্ণ করব। এবার ঝামাটা আরো ভালো করে ওদের মুখে ঘষে দেব।
প্রশ্ন মমতা লোকসভার প্রচার আপনার কেন্দ্র থেকে শুরু করলেন। কি বলবেন ?
মহুয়া। মমতা দিদি প্রথম দিন থেকেই আমাকে সমর্থন করে এসেছেন। বিশেষ করে সিবিআই ইডি দিয়ে যেভাবে বেআইনিভাবে আমার বিরুদ্ধে ওরা নেমেছে, তাতে দিদি সবসময় আমার পাশে থেখেছেন। দিদি এখান থেকে প্রচার শুরু করেছেন তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ । আমাদের কর্মীরাও কৃতজ্ঞ।
প্রশ্ন নরেন্দ্র মোদিও তো আপনার কেন্দ্রে প্রচার করে দিয়ে গেছে।
মহুয়া। নরেন্দ্র মোদি ভোট ঘোষণার আগে এসেছেন আবার আসুক কৃষ্ণনগরে। আমি উনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। উনি যত কৃষ্ণনগরে আসবে আমার ভোট তত বাড়বে। কমপক্ষে আরো দুবার জানো আসে।
প্রশ্ন গতবারের ভোটে জেতার মার্জিন কি টপকে জেতে পারবেন এবার?
মহুয়া। গতবার ৬৪ হাজার ভোটে জিতেছি। এবার লাখের ওপর ভোটে জিতব।