৩৬৫ দিন। ভুলে গিয়েছেন! নির্বাচনের সময় শীতলকুচিতে লাইনে দাঁড়ানো পাঁচ জনকে গুলি করে মেরেছিল। এর মধ্যে চার জন সংখ্যালঘু এবং একজন রাজবংশী ভাই ছিলেন। নির্বাচন চলাকালীন ছুটে এসেছিলাম। যে লোকটির নির্দেশে এই কাজ হয়েছিল, তাঁর বিরুদ্ধে সরকারের দু’টি ডিপি চলছে, ভিজিল্যান্স ক্লিয়ার হয়নি, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার তাঁকে ক্লিনচিট দিয়ে দিয়েছে। আইনকানুন কিছু মানে না এরা। তিনি আবার বীরভূমে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। শীতলকুচিতে গুলি চালিয়ে, এত মানুষ মেরে এখনও হাতের রক্ত মোছেনি। এভাবেই কোচবিহারের মাথাভাঙ্গা থেকে কেন্দ্রের শাসক দল ভাজপা এবং ভাজপা প্রার্থীদের নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন মমতা।
কী বললেন মমতা
১। গণতন্ত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশন এবং তার আধিকারিকদের কাছে আমার অনুরোধ নির্বাচন চলাকালীন গোটা দেশে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করুন। যেভাবে দেশ চলছে তাতে বিজেপি ছাড়া অন্য কোন দলের কাছে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। গণতন্ত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সবচেয়ে আগে প্রয়োজন।
২। সিআইএসএফ, আয়কর, এনআইএ কীভাবে বিজেপির ইশারায় মানুষের উপর অত্যাচার করছে। মানুষকে হেনস্তা করছে। সেটা কখনওই শাসক বিরোধীকে সম লড়াইয়ের সুযোগ দিতে পারে না। নির্বাচন কমিশনের কাছে আমার অনুরোধ, এই বিষয়টি দেখুন।
৩। সব সংস্থাকে কাজে লাগানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের বদলি করা হচ্ছে। এনআইএ, সিবিআই, আইটি – কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির কত অফিসারকে বদলি করা হয়েছে?
৪। এজেন্সি দিয়ে ভোট করাচ্ছে বিজেপি। এজেন্সির কাছে মাথা নত করবো না। নির্বাচনী আচরণবিধি মানে না বিজেপি। বিজেপি বলছে ভোট দাও এজেন্সি থেকে মুক্তি পাও।
৫। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে কোচবিহারের শীতলকুচিতে ভোটের বুথে গুলি চালিয়ে নিরীহ ভোটারদের হত্যা করেছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সেই জওয়ানদের গুলি চালনাকে সম্পূর্ণ মদত দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত তৎকালীন পুলিশ সুপার দেবাশীষ ধরকে বীরভূমে প্রার্থী করেছে ভাজপা। মমতা বলেন, শীতলকুচিতে নির্বাচনের সময়ে লাইনে দাঁড়ানো পাঁচজনকে গুলি করে মেরেছিল। সকলেই সংখ্যালঘু। ভোট চলাকালীন এসেছিলাম ছুটে। যে লোকটির নির্দেশে হয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে সরকারের দু’টি ডিপি চলছে। ভিজিল্যান্স ক্লিয়ার হয়নি। কিন্তু ভারতবর্ষের সরকার তাঁকে ক্লিয়ারেন্স দিয়ে দিয়েছে। কোনও আইনকানুন কিছু মানে না। তিনি আবার বীরভূমে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। শীতলকুচিতে গুলি চালিয়ে এত মানুষ মেরেও হাতের রক্ত মোছেনি।
৬। বিজেপির নীতি এক দেশ, এক রাজনৈতিক দল। কোনও বিরোধী দলকে তাঁরা টিকতে দেবে না। ওদের একটাই নীতি – এক দেশ এক দল।
৭। ভোটের আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কেন্দ্রীয় এজেন্সি ভয় দেখাচ্ছে। বলছে বিজেপিতে যোগ না দিলে গ্রেপ্তার হতে হবে।
৮। নিশীথ প্রামাণিক প্রসঙ্গে – আমাদের দলে ও ছিল আপদ। বিজেপির আজ হয়েছে সম্পদ। শুধু গুণ্ডামি করে বেড়ায়। আপনাদের এখানে ভালো লোক আর ছিল না? রাজবংশী ছিল না? দেশের লজ্জা। জাতির লজ্জা বাংলার লজ্জা। আমরা যাকে দল থেকে বের করে দিয়েছিলাম যার বিরুদ্ধে হাজারো মামলা সে এখন বিজেপির সম্পদ। আমি বলব তোমার বিরুদ্ধে কত কেস আছে! আমি দিয়ে দেব লোকাল লিডারদের কাছে। তুমি আজ নাকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। তুমি লজ্জা, দেশের কলঙ্ক।
৯। ইতিমধ্যে ১ কোটি ৯৯ লক্ষ মহিলার অ্যাকাউন্টে বর্ধিত হারে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা ঢুকে গিয়েছে। এছাড়া ৬ লক্ষ মহিলা রয়েছেন যাঁদের ৬০ বছর বয়স হয়েছে। তাঁদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে বার্ধক্য ভাতা অর্থাত্ লক্ষ্মীর ভান্ডার ২-তে পরিণত হয়েছে।
১০। আমাদের প্রার্থীকে দেখুন, জগদীশ চন্দ্র বাসুনিয়া। দেখুন মাটির মানুষ। কোচবিহারের একটা হীরে। কথা কম বলেন কাজ বেশি করেন।
১১। নির্বাচন এলেই ভাঁওতা দেওয়া বেড়ে যায়। আজকে আসবেন। দেখবেন, কত কুমিরের অশ্রু ঝরবে, কত কাঁদবেন। এর আগে কোচবিহারে কোনও দলের রাজনৈতিক নেতারা আসতেন না। আমি সরকারে আসার পর বারবার এসেছি।
১২। ভোটের আগে ক্যা ক্যা করছে। বলছে পুরোহিত লিখে দিলেই হবে। কোন আইনে আছে? মিথ্যে বলার আর মানুষকে বোকা বানানোর একটা সীমা আছে। পুরোহিত পুজো করেন তিনি কি করে জানবেন? বাবা-মা বাংলাদেশের। তাদের জন্ম সার্টিফিকেট নিয়ে আসতে হবে। আমি বাংলার যত্ন নেব, যতদিন আমি এখানে আছি, তারা বাংলার মানুষকে স্পর্শ করার সাহস করবে না। নির্বাচনের আগে সিএএ আনা হয়েছে। আপনি নিবন্ধনের জন্য আপনার নাগরিকত্বের জন্য সিএএ জমা দেওয়ার সাথে সাথেই আপনাকে বাংলাদেশী ঘোষণা করা হবে।
১৩। আবাস যোজনায় কেন্দ্রীয় সরকার ৬০ শতাংশ দেয়। রাজ্য সরকার ৪০ শতাংশ টাকা দেয়, জায়গাও দেয়। তাহলে কেন প্রধানমন্ত্রীর ছবি থাকবে?
১৪। এসে কত কান্নাকাটি করবে দেখবেন। কিন্তু আবাসের টাকা, ১০০ দিনের টাকা কোথায় গেল, সে নিয়ে কিছু বলবে না। মমতার আক্রমণ, কেউটে সাপকে পোষ মানানো যায়, কিন্তু বিজেপি পার্টিকে কখনও বিশ্বাস করা যায় না।
১৫। এই ঝড়ে যাদের বাড়ি নষ্ট হয়েছে। তাদের বাড়ি আমরা করে দেব। কমিশনের কাছে অনুরোধ এটা ঝুলিয়ে রাখবেন না। আমরা বাড়ি করে দেব। মানুষগুলি রাস্তায় বসে আছে। তুমি বললে নির্বাচনী আদর্শ আচরণ বিধি ভঙ্গ হয় না। আমি বললে হয়?