মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫, একটি শিশুকে শিলিগুড়ির নেওটিয়া হাসপাতালে, একজনকে উত্তরবঙ্গ হাসপাতালে আনা হচ্ছে, কাল অভিষেক আসছে সামলে নেবে
জয়দীপ সরকার। উত্তরবঙ্গ ব্যুরো
৩৬৫ দিন। মিনিট খানেকের ঝড়ে লন্ডভন্ড জলপাইগুড়ি ময়নাগুড়ি এবং কোচবিহারের একাংশ। ঝড়ের তান্ডবে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৫। রবিবার ঝড়ের তান্ডবের পরেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতার নির্দেশে, উদ্ধার কার্যে নেমে পড়ে গোটা জেলা প্রশাসন, ডিএমজি, কিউআরটি, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। শুধু নির্দেশ দেওয়াই নয়, এদিন রাতেই বিশেষ বিমানে জলপাইগুড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। রাত ১০:৫৫ তে বাগডোগরা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সহ অন্যান্য আধিকারিকেরা। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের দেখতে পৌঁছে যান তৃণমূল প্রার্থী নির্মল চন্দ্র রায়। এদিন বাগডোগরা বিমানবন্দরে পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একটি বাচ্চাকে নেওটিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আরেকটি বাচ্চাকে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এগুলো অভিষেক দেখে নেবে। রাজ্য সরকার সম্পূর্ণভাবে দুর্গতদের পাশে আছে। আমি এখন জলপাইগুড়ি সদরে যাচ্ছি। রাজ্য সরকারের তরফে সব রকম সহযোগিতা করা হবে।’ এদিন রাতেই মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ জন। এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছান। সেখানে গিয়ে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন। ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর উদ্ধার কার্যের যাবতীয় খোঁজখবর নেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামীকাল সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে যাওয়ার কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। উদ্ধার কার্য সরেজমিনে খতিয়ে দেখবেন তিনি। এই মুহূর্তে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ৪৯ জন আহত ব্যক্তি ভর্তি রয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা উদ্বেগ জনক। সেদিন মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে পৌঁছে দুর্গতদের পাশাপাশি ডাক্তারদের সঙ্গেও কথা বলেন। উদ্ধার কার্য যেন কোনরকম কোন দেরি না হয়, জেলা প্রশাসনকে তার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, এই ঘটনায় জখম হয়েছেন শতাধিক মানুষ। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ফালাকাটা, ময়নাগুড়ি এবং কোচবিহারের একাংশ। উল্লেখ্য, রবিবার কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্রের সমর্থনে সভা শেষ করার পর কলকাতায় ফিরে এদিন রাতেই জলপাইগুড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা। জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজে যারা ঝড়ে জখম হয়েছেন তাদের দেখতে যান তিনি। স্থানীয় সূত্রে খবর, রবিবার দুপুর ৩ টের কিছু পরে আচমকা আকাশে আঁধার ঘনিয়ে আসে। তারপরেই শুরু হয় প্রবল ঝড়। কিছু বুঝে ওঠার আগে ঝড়ের তান্ডবে কার্যত লন্ডভন্ড হয়ে যায় জলপাইগুড়ির বিস্তীর্ণ অংশ। ঝড়ের প্রভাব পড়ে পার্শ্ববর্তী ময়নাগুড়ি এবং কোচবিহারেও। যদিও সেখানে ক্ষয়ক্ষতি খুব বেশী হয়নি। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, জলপাইগুড়ির গ্রামীন এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েক হাজার কাঁচা বাড়ি ভেঙেছে। এছাড়া অনেক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া গাছ পড়ে, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে বেশ কিছু জায়গায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রশাসনিক তরফে সমস্ত রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে ৬০ জনের বেশি চিকিৎসাধীন। এছাড়া জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও অনেকে ভর্তি। পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলার বিভিন্ন ব্লক থেকে জরুরি ভিত্তিতে ময়নাগুড়ি হাসপাতালে ডাক্তার পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন জলপাইগুড়ি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক চিকিৎসক অসীম হালদার। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মত মৃত এবং আহতদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে নির্বাচনী আচরণ বিধি মেনে। নিহতদের পরিচয় জানা গিয়েছে। তাঁরা হলেন, দ্বিজেন্দ্রনারায়ণ সরকার (৫২), অনিমা রায় (৪৯), যোগেন রায় (৭০) ও সমর রায় (৬৪)। এছাড়াও রাতে আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে। জলপাইগুড়ির দুর্যোগ ঘটার সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা জানান, ‘রবিবার দুপুরে জলপাইগুড়ি-ময়নাগুড়ি এলাকায় ঝড়ের সঙ্গে ভারী বৃষ্টির খবর পেয়েছি। জীবনহানি, আহত, বাড়িঘরের ক্ষতি, গাছ-বিদ্যুতের পোল উপড়ে পড়েছে। জেলা ও ব্লক প্রশাসন, পুলিশ, ডিএমজি, কিউআরটি এই বিপর্যয় মোকাবিলায় ময়দানে নেমেছে। সকলকে নিরাপদ স্থানে সরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’ এদিকে আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, পশ্চিমী ঝঞ্ঝার কারণে এই দুর্যোগ। উত্তরবঙ্গের ৪ জেলা কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিঙে আগামী ২৪ ঘন্টা বৃষ্টি চলবে কোথাও কোথাও ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় ঝোড়ো হাওয়া ব ইতে পারে। তাই সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।