ভূতের নেত্য চালিয়েছে মাওমাকুরা কাঁচের টুকরোয় ক্ষতবিক্ষত ব্রাত্য বসু হাসপাতালে
দুপুর ২.০০-৪.৩০। কী ঘটল ? কীভাবে ঘটল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে
৩৬৫দিন। সম্পূর্ণ বিনা প্ররোচনায় গাড়ির কাচ ভেঙে শিক্ষামন্ত্রীর ওপর প্রাণঘাতী আক্রমন চালালো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মাওমাকুরা। শনিবার যাদবপুরের ক্যাম্পাসের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ওপর গেরিলা কায়দায় পরিকল্পিত হামলা করা হয়।রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ি ঘিরে ধরে চলে ভাঙচুর,ইটবৃষ্টি। চলন্ত গাড়ির পেছনে চেপে হামলা করা হয়েছে। গাড়ির কাচ ভেঙে জখম হন ব্রাত্য বসু। অধ্যাপক ওম প্রকাশ মিশ্রর পাঞ্জাবি ছিড়ে তাঁকে চর থাপ্পর মারা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষামন্ত্রী ঢুকলে তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল ২৪ ঘন্টা আগেই। সেইমতো হামলার ব্লু প্রিন্টও তৈরি ছিল। শনিবার তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপার বার্ষিক সাধারণ সভায় যোগ দিতে ক্যাম্পাসে ব্রাত্য বসু ঢোকা মাত্রই পরিকল্পনামাফিক অশান্তি পাকাতে শুরু করে মাওমাকু সিন্ডিকেট। সভা শেষ করে বের হতে বিক্ষোভ দেখানোর নামে শিক্ষামন্ত্রীকে ঘিরে ধরা হয়। যাতে ক্যাম্পাস থেকে বের হতে না পারেন তার জন্য শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির চাকার হওয়া খুলে ফেলা হয়। ব্রাত্য বসু গাড়িতে ওঠার পর তাঁকে প্রাণে মারার চেষ্টা করা হয় বলেও অভিযোগ। ইট মেরে তাঁর গাড়ির কাচ ভেঙে ফেলা হয়। গাড়ির সামনের সিটে বসেছিলেন মন্ত্রী। কাচের আঘাতে আহত হন শিক্ষা মন্ত্রী। ব্রাত্য বসুর দুজন নিরাপত্তারক্ষিরও চোট লাগে। কোন মতে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে চিকিৎসার জন্য মন্ত্রী এসএসকেএম-এ যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমে আমার গাড়ির কাচে ইট মারা হয়। তারপর দুজন এসে হাত দিয়ে পা ভাঙা কাঁচে ঘুষি মারে। কাচ গিয়ে আমার গাড়ির চালকের গায়ে। একজন নিরাপত্তা রক্ষী আমায় টেনে পিছনে পাঠিয়ে দেয়। আমার নিরাপত্তারক্ষীরাও হামলায় আক্রান্ত হয়েছে। ‘মন্ত্রীর গাড়ির চাকা খুলে, গাড়িতে ভাঙচুর
শনিবার তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপার বার্ষিক সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েটি’তে (ওপেন এয়ার থিয়েটার)। ওই সমাবেশে ‘বর্তমান ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় গৈরিকীকরণ নামে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে দুপুর দুটো নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন শিক্ষা মন্ত্রী। সকাল ওয়েটির সামনে এসএফআই, আইসা, আরএসএফ একত্রিত হয়ে হামলার চক্রান্ত করতে থাকে। শিক্ষামন্ত্রীর আসার খবর কানে পৌছতেই ‘গেট আউট’ বলে পোস্টার দেওয়া হয়। কুরুচিকর ভাষায় শিক্ষা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে চলে স্লোগান শুটিং। অশান্তির আঁচ পেয়ে ঘুরপথে পিছন দিক দিয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে সভাস্থলে নিয়ে আসা হয়। গাড়ি থেকে নেমে বিক্ষোভকারী মাওমাকুদের সঙ্গে সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু তাঁর সামনেই চলতে থাকে বিক্ষোভ।সভা চলাকালীনই ওয়েটির ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে মাওমাকু সিন্ডিকেটের সদস্যরা। যদিও তখন বাধা পেয়ে পিছু হটে গেলে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষা মন্ত্রীর গাড়ির চাকার হাওয়া খুলে দেওয়া হয়। যাতে ক্যাম্পাস থেকে না বের হতে পারেন ব্রাত্য। গাড়ির ওপর উঠে তান্ডব চালানো হয়। বিকেল চারটে নাগাদ সভা শেষ করে মন্ত্রী বের হওয়ার সময় শুরু হয় মাওমাকুদের অ্যাকশন। ওয়েটির বাইরে বাম ও অতিবাম ছাত্র সংগঠনের বিক্ষোভের জেরে বাইরে চেয়ারে পেতে বসে পড়েন মন্ত্রী। তাঁকে আক্রমণের হাত থেকে আটকাতে ঘিরে রাখে ওয়েবকুপার সদস্য, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ছাত্ররা ও তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সংগঠনের কর্মীরা।
মমতার রাজত্ব বলেই অসভ্যতা বরদাস্ত করা হল
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এটা যদি উত্তরপ্রদেশে হত, কোনও ছাত্র সংগঠন এমন কাজ করতে পারত না। আজকে এখানে আমরা চাইলেই পুলিশ ডাকতে পারতম। কিন্তু শিক্ষাঙ্গনে পুলিশ প্রবেশ করুক আমরা চাই না। পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজত্ব বলেই এই অসভ্যতা বরদাস্ত করা হচ্ছে। তিনি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, ধৈর্যে বিশ্বাস করেন। আমরা ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার পাঠ জানি। আমি প্রত্যেকটি ছাত্র সংগঠনকে বলেছিলাম দু চারজন আসুন আমি আলোচনায় বসব। তাদের বক্তব্য হচ্ছে তারা চল্লিশ জন মিলে আসবে তাতে কোন আলোচনা হয় না। আমাদের আটকে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে আমাদের প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছে যাতে আমরা পুলিশ ডাকি কিন্তু আমরা পুলিশ ডাকব না।যারা আজ অধ্যাপকদের সভায় এসে তাদের উপর আক্রমণ করছেন, তাঁরা শিক্ষাক্ষেত্রে গৈরিকীকরণের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন কী? যারা মফস্বল থেকে আসা এক ছাত্রকে হোস্টেল থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে আর আজ যারা অধ্যাপকদের নিগ্রহ করল তাদের মধ্যে কোন তফাৎ নেই।’
ব্রাত্যকে বাঁচাতে আহত অধ্যাপক, ছাত্ররা
শিক্ষামন্ত্রীকে বাঁচাতে তৃণমূল পন্থী অধ্যাপক ও ছাত্ররা এগিয়ে এলে তাদের ওপর আক্রমণ করা হয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওম প্রকাশ মিশ্রকে মারধর করে পাঞ্জাবি ছিঁড়ে দেওয়া হয়। প্রায় ২৫ মিনিট ধরে ঘেরাও থাকার পর কোনওমতে শিক্ষামন্ত্রীকে গাড়িতে তোলা হলেই ব্রাত্যকে প্রাণে মারার চেষ্টা করা হয়। গাড়ির ওপর ইট মেরে কাঁচ ভেঙে দেওয়া হয়। নিরাপত্তা রক্ষীদের ওপর চলে আক্রমন। মন্ত্রীর গাড়ি সামনে থাকা দুটি পাইলট কার ভাঙা হয়। চলন্ত গাড়ির গেট খুলে ভিতরে ঢোকারও চেষ্টা করা হয়। গাড়ির ওপর উঠে বসে ম্যাওমাকুরা। ঘটনায় নাকি একজন মাওবাদী ছাত্র সংগঠনের সদস্য আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ। এদিকে তৃণমূল পন্থী ছাত্র ও অধ্যাপকরা রুখে দাঁড়ালে তাদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
এসএসকেএম হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা ব্রাত্যর
বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ আহত অবস্থায় ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে সোজা এসএসকেএম হাসপাতালে যান। হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে মন্ত্রী ও তাঁর নিরাপত্তারক্ষীর প্রাথমিক চিকিৎসা হয়। মন্ত্রীর গায়ের থেকে কাঁচের টুকরো বার করা হয়। যদিও চিকিৎসার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় হাসপাতাল থেকে।
তৃণমূল শিক্ষাবন্ধুর অফিসে আগুন, ভাঙচুর
এর মাঝেই মাওমাকু সদস্যরা ভাঙচুর চালায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে থাকা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধুর অফিসে৷ অফিসের দরজা, জানলা থেকে শুরু করে টেবিল, চেয়ার সহ অন্যান্য জিনিস ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় অফিসে। লাঠি দিয়ে একের পর এক কাঁচ ভেঙে ফেলা হয়। অফিসে থাকা একাধিক নথি বাইরে বের করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।