সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়ে ১০০
চলতি বছরে এই নিয়ে ৩ বার বাঘ ঢুকল মৈপীঠে
বিশ্বজিৎ পাল
৩৬৫ দিন। গ্ৰামের পাশের জঙ্গলে বাঘের বাস, তাই সতর্ক থাকতেই হয় বাসিন্দাদের। কখনও কখনও এদিক-ওদিক বাঘ বেরিয়ে পড়ার খবরও পাওয়া যায়। তাই বলে বনকর্মীর মাথা নিয়ে যেভাবে টানাটানি করেছে খোদ রয়েল বেঙ্গল টাইগার – তা আগে কখনও দেখেনি সুন্দরবনের মৈপীঠের বাসিন্দারা। গুরুতর আহত বনকর্মী এখন এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আর সেই বাঘ আটকাতে রাতভর চলল লড়াই। অবশেষে ভোরে খাঁচাবন্দি হল বাঘ।
খাঁচা বন্দী হয়েও তারিয়ে তারিয়ে ব্রেকফাস্ট
আজ মঙ্গলবার ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতে অবশেষে ছাগলের টোপে খাঁচায় বন্দী হল মৈপীঠের লোকালয়ে ঢুকে পড়া বাঘটি। ফলে স্বস্তি ফিরল বন দফতর থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষজনের। বনকর্মীরা সবজি খেতের মধ্যে আস্ত ছাগলের টোপ দিয়ে ২ খাঁচা পেতে ছিল। আজ ভোর ৩টা ৩২ মিনিট নাগাদ বাঘটি খাঁচায় বন্দি হয়। সেই খাঁচার দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ পাওয়া যায়। তখনই বোঝা যায় যে বাঘ খাঁচায় ঢুকে পড়েছে। বনকর্মীরা কাছে গিয়ে দেখেন, তাদের উপস্থিতির তোয়াক্কা না করেই রাজকীয় মেজাজে ভিতরে রাখা ছাগলটি তারিয়ে তারিয়ে খাচ্ছে বাঘ। বনকর্মীদের অনুমান, বাঘটি অত্যন্ত ক্ষুধার্ত ছিল। খাবারে সন্ধানেই সে লোকালয়ে চলে এসেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বাঘটিকে ফরেস্ট ক্যাম্পে রাখা হয়েছে,সেখানেই চিকিৎসকরা বাঘের শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে। এমনটাই জানা গিয়েছে বন দফতর সূত্রে।
কী জানিয়েছে বন দফতর
ডিএফও নিশা গোস্বামী জানান, রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ বাঘটি খাঁচায় বন্দী হয়। ২ টি খাঁচা পাতা হয়ে ছিল ছাগলের টোপ দিয়ে। ছাগল খেতে এসে বাঘটি খাঁচায় বন্দী হয়। তিনি আরও বলেন বাঘ গননায় দেখা গেছে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে এবং ১০০ টি বাঘ আছে। বাঘটিকে চিকিৎসকরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে। এটি পুরুষ বাঘ এবং প্রায় ১০ বছর বয়স। বাঘটিকে আজ গভীর জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বাঘটি খাঁচায় বন্দি হওয়ায় স্বস্তি পেলাম।তবে মাঝে মধ্যেই বাঘ এলেও এই ভাবে একেবারে লোকালয়ে চলে আসেনি। খুবই আতঙ্কের মধ্যে সারারাত ধরে জেগে ছিলাম। এদিকে বাঘটি খাঁচায় বন্দি হওয়ার খবরে এলাকায় বাঘ দেখতে ভিড় জমায় গ্রামবাসীরা।
চলতি মরশুমে মৈপীঠে বাঘের হ্যাটট্রিক
শীতকাল এলেই সুন্দরবনের সংলগ্ন গ্ৰামগুলিতে বাঘের হানাদারি নতুন কোন ঘটনা নয়। তবে এবারে যেন সংখ্যাটা বেড়ে গিয়েছে বহু গুণ। মাত্র দেড় মাসের মধ্যে শুধুমাত্র মৈপীঠে এই নিয়ে পরপর তিন বার লোকালয়ে হানা দিল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।
প্রসঙ্গত, রবিবার রাত থেকেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি ব্লকের মৈপীঠ-বৈকুণ্ঠপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা বাঘ দেখতে পান। তারা খবর দেয় বন দফতর ও থানায়। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে আসে বনকর্মীরা ও কুলতলি থানার পুলিশবাহিনী। বাঘটি যাতে কোনও ভাবে রাতের অন্ধকারে গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়তে না পারে, তা নিশ্চিত করতে নগেনাবাদ ৯ নম্বর মুলার জেটিঘাটের কাছে গ্রামের দিক বরাবর নাইলনের জাল লাগিয়ে দেওয়াও হয়েছিল।এর ফলে রাতে গ্রামে বাঘ না ঢুকলেও সোমবার সকালে খবর মেলে, নাইলনের জালের আশপাশেই রয়েছে বাঘ। সেই মতো বাঘকে বন্দি করার পরিকল্পনা করা হয়। স্থানীয় টাইগার টিমের সদস্যেরা বাঘকে বন্দি করতে গিয়েছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, সেই সময়েই টাইগার টিমের এক সদস্য গণেশ শ্যামলের উপর বাঘটি হামলা চালায়।কামড়ে ধরে তাঁর ঘাড়। সহকর্মীকে বাঁচাতে দলের বাকি সদস্যেরা লাঠি নিয়ে বাঘটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাতে বাঘ বনকর্মীকে ছেড়ে দিয়ে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়ে। জখম বনকর্মী এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্থানীয় বাসিন্দা রাজকুমার সাঁপুই নামে এক যুবক জেটিঘাটের কাছে বসেছিলেন। সেই সময় শ্মশানঘাটের কাছে একটি বাঘকে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছিলেন তিনি।গ্রামে ফিরে সে খবর দেয় গ্রামবাসীকে। ফলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বনকর্মীদের ছাগলের টোপে পাতা খাঁচায় বন্দী হয় বাঘটি।