বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে
মুকেশ আম্বানিকে পাশে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা

শুভ মুহূর্ত, কাল থেকে শুরু দেউচা পাচামির কাজগত ৭ বছরে বিনিয়োগ এসেছে ১৯ লক্ষ কোটির বেশি

সৌগত মণ্ডল, ইন্দ্ৰনীল সাহা ছবি: সুব্রত কোটাল

৩৬৫ দিন দিন কয়েক আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি পদে দ্বিতীয়বার শপথ গ্রহণ করার ঠিক আগে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ এর কর্ণধার মুকেশ আম্বানির হাত ধরে ডোনাল্ড ট্রাম্প অনুরোধ জানিয়েছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য এগিয়ে আসুন। আমেরিকায় নতুন করে বিনিয়োগ করুন। আজ নিউটাউনে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে মুকেশ আম্বানি ভারত বর্ষ তথা বিশ্বের ৪০ দেশ থেকে আসা শিল্পপতি এবং রাষ্ট্রদূতদের কাছে অনুরোধ জানালেন, গোটা ভারতবর্ষের মধ্যে বাংলায় শিল্প ও বাণিজ্যের পাশাপাশি বিনিয়োগের রেনেসাঁ বা নবজাগরণ ঘটেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা দিদির নেতৃত্বে। এত শিল্প বান্ধব ভাবমূর্তি আর কোথাও পাবেন না। আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি বাংলায় বিনিয়োগ করলে পস্তাতে হবে না। আর মুকেশ আম্বানির এই বক্তব্যই যেন বেঁধে দিল মমতার উদ্যোগে অষ্টম বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের সুর।মুকেশ আম্বানির বক্তব্য রাখার পরে উপস্থিত সমস্ত শিল্পপতি রাষ্ট্রদূত এবং প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে মমতা বলেন, বাংলায় আসুন, বাংলায় বিনিয়োগ করুন। বাংলা আপনার সুইট হোম। বাংলা আপনাকে খালি হাতে ফেরাবে না।

বিরোধীদের কুৎসার জবাব
বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন নিয়ে মাঝেমধ্যেই শোনা যায় বিরোধীদের অভিযোগ, বহু ঢাকঢোল পিটিয়ে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন হলেও আদতে বাংলায় লগ্নি আসে না। বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন নিয়ে বিরোধীদের কুৎসার জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধীদের অপপ্রচার ১৩-১৪ টাকা নাকি এসেছে। বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকেই বিরোধীদের জবাব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,অনেকে বলে কেন এই সম্মেলন করি? গত সাত বছরে বিনিয়োগ এসেছে ১৯ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। আমি বলি একশো বার করব, কারণ এতে রাজ্যের ভবিষ্যৎ তৈরি হবে। আমি সাধারণ মানুষের কাছে দায়বদ্ধ, বিরোধীদের কাছে নয়।
পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অনেকে প্রশ্ন তোলেন, গত সাতবারের সম্মেলন থেকে কী কী কাজ হয়েছে? আমি তো আজ হিসেব দিয়ে দিলাম। মোট ১৯ লক্ষ কোটি টাকার একটু বেশি লগ্নি এসেছিল বঙ্গে। তার মধ্যে ১৩ লক্ষ কোটির কাজ ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে। বাকি ৬ লক্ষ কোটি অর্থ দিয়ে বিভিন্ন কাজ চলছে। এই বাণিজ্য সম্মেলনের সুফল পেয়েছি আমরা। এছাড়া আজ তো মুকেশ আম্বানি, সজ্জন জিন্দাল, সৌরভরা বলল কীভাবে এখানে শিল্পের প্রসারে ভালোভাবে কাজ চলছে। মুকেশজি জানিয়েছেন, কলকাতা থেকেই ওরা জিও-র পরিষেবা দেবে গোটা বিশ্বে। গেটওয়ে হবে কলকাতা। এটা খুবই ভালো। সজ্জন জিন্দালজি জানিয়েছেন, ওঁরা শালবনিতে ওদের যেখানে কারখানা আছে, সেখানে ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে বিদ্যুতের জন্য। এছাড়া অন্ডাল বিমানবন্দরটা ওরা নিজেরা নিয়ে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন। সৌরভও একটা কাজ করতে আগ্রহী। তবে তা নিয়ে আইনি জটিলতা থাকায় ও প্রকাশ্যে কিছু বলেনি।কেন বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন
সিপিএম আমলে যেখানে বাংলায় একের পর এক কারখানায় ধর্মঘট ও হরতালের জেরে কর্মসংস্থান শুন্য তে গিয়ে থেকেছিল সেখানে মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন চালু করে কয়েক লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ এনেছেন বাংলায়। বিনিয়োগ টানতে বছর বছর বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে মঞ্চে দাঁড়িয়েই মমতা বলেন, বছর বছর কেন সম্মেলন, জানতে চান অনেকে। আমি বলব, আমরা শুরু করেছিলাম। এখন সব রাজ্য করছে। এতে ভুল কী? যুবসমাজ, আগামী প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে আমাদের। এগিয়ে যেতে হবে। নইলে যুবসমাজ পেরে উঠবে না। বাংলাকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার গেটওয়ে বলে দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী দিনে বাংলা দেশের এক নম্বর শিল্প বিনিয়োগের জায়গা হবে। এমএসএমই থেকে মহিলা কর্মসংস্থা-ন সবেতে আমরা এক নম্বরে। বাংলায় দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যায়। আমরা কেন বাণিজ্য সম্মেলন করেছিলাম? অনেকে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। আজ তাঁরাই আমাদের দেখে এরকম বাণিজ্য সম্মেলন করছেন। আমরা যুবদের জন্য এটা করছি। আমরা কর্মসংস্থান গড়ছি। তাই এই সম্মেলন সাধারণ মানুষের। আমার সরকার সাধারণ মানুষের। বাংলায় পুনরায় বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। বাংলায় জমি জট নেই বলে দাবি করে তাঁর জমি এখানে সমস্যা নয়। জমি এখানে পাওয়া যায়। ফ্রি হোল্ড বেসিসে দেওয়া হয়। শিল্প পার্ক গড়া হয়েছে। ২০০ শিল্প পার্ক আছে। ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পে আমরা এক নম্বর। একাধিক শিল্প ক্লাস্টার আছে। মহিলা উদ্যোগপতির সংখ্যা আমাদের রাজ্যে সবচেয়ে বেশি। বিদ্যুতের কোনও অসুবিধা নেই। ২৪ ঘণ্টা এখানে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকে। আজ আবার সজ্জন জিনদাল পাওয়ার প্ল্যান্টের ঘোষণা করলেন। সৌরভ একটা স্টিল প্ল্যান্টও করছে। এখানে দেরি হয় না। এখানে কেয়ার করা হয়।

বাংলায় এখন ধর্মঘটের সংস্কৃতি নেই
আজ বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুকেশ আম্বানি থেকে শুরু করে দেশের সমস্ত বড় শিল্পপতিরাই বারে বারে উল্লেখ করে বাংলায় কিভাবে একটিও কর্ম দিবস নষ্ট হয় না। ৩৪ বছর সিপিএমের শাসনে বাংলায় যেভাবে ধর্মঘট এবং হরতালের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল তা থেকে মমতার আমলে শ্রম দিবস বৃদ্ধি হয়েছে কয়েক গুণ। সেই প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগে এখানে ধর্মঘট, হরতাল লেগেই থাকত, কিন্তু আমরা সেইসব করতে দিই না। এখন বাংলায় একটাও কর্মদিবস নষ্ট হয় না। বাংলায় এখন ধর্মঘটের সংস্কৃতি নেই। বাংলায় বিনিয়োগ করতে আসছে টাটা খুব তাড়াতাড়ি বাংলায় বড় মাপের বিনিয়োগ করতে চলেছে টাটা গোষ্ঠী। আজ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে মমতা নিজেই এই কথা জানিয়ে বলেন গতকাল টাটা সনসের কর্ণধার চন্দ্রশেখরনের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। এবারের বাণিজ্য সম্মেলনে ব্যক্তিগত কারণে আসতে না পারলেও টাটা গোষ্ঠী তাদের সিইওর নেতৃত্বে বিশাল প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী তাদের অনুরোধ জানিয়েছেন কলকাতা থেকে সরাসরি ইউরোপের বিমান পরিষেবা চালুর জন্য। সে ক্ষেত্রেও তারা ইতিবাচক ভাবে বিষয়টি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করছে বলে জানান মমতা। এছাড়া ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ও জার্মানি প্রতিনিধিদের কাছে লুফথহানসা এয়ারলাইন্সের সাহায্যে কলকাতা থেকে ইউরোপ পর্যন্ত বিমান পরিষেবা চালুর আবেদন জানান। সকলেই এবিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলায় ৬ ইকোনমিক করিডোরমুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যে তৈরি হচ্ছে ৬ ইকোনমিক ফ্রেইট করিডর। মমতা বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ৬ ইকোনমিক ফ্রেইট করিডর গড়ে তুলছি। এর মধ্যে চারটে করিডরই যাবে ডানকুনির ওপর দিয়ে। পানাগড় থেকে কোচবিহার, রঘুনাথপুর-তাজপুর, ডানকুনি-ঝাড়গ্রাম এবং ডানকুনি-কল্যাণী। দ্বিতীয় দফায় পুরুলিয়ার গুরুডি থেকে জোকা এবং খড়গপুর-মোরগ্রাম করিডর গড়ে তোলা হবে। এজন্য প্রাথমিকভাবে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগও করা হচ্ছে। মঞ্চে উপস্থিত ক্যাপ্টেন অফ দ্য ইন্ডাস্ট্রিজ

অষ্টম বিশ্বভঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে আজ ভারতবর্ষের এক নম্বর শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি থেকে শুরু করে জিন্দাল গোষ্ঠীর কর্ণধার সজ্জন জিন্দাল, সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, সঞ্জীব পুরী, হর্ষ নেওটিয়া ও হর্ষবর্ধন আগরওয়ালের মত প্রথম সারির শিল্পপতিদের পাশাপাশি ছিলেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও। আবার উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন ও তাঁর স্ত্রী কল্পনা, ভুটানের মন্ত্রী ইওনট্যান পুনসো। এছাড়া ঠিকই আই সি সি এবং সিআইআই এর মত বণিক সভা গুলির সদস্য শিল্পপতিরাও উপস্থিত ছিলেন। দেউচা পচামিতে শুরু হচ্ছে কয়লা উত্তোলন আগামীকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার থেকেই বীরভূমের দেউচা পচানিতে কয়লা উত্তোলন শুরু হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বৃহস্পতিবার থেকেই দেউচা পচামিতে কয়লা উত্তোলন করা যেতে পারে। সমস্ত পরিকাঠামো তৈরি রয়েছে। জমিদাতাদের পরিবারের সকলের চাকরি হবে। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে তৈরি রয়েছে।

 

 

 

 

Scroll to Top