বই হচ্ছে হৃদয়ের ডেকরেশন দেশ-বিদেশের ডকুমেন্টেশন যতই ডিজিটাল যুগ আসুক বইয়ের গুরুত্ব কমবে না
৩৬৫দিন। যতই ডিজিটাল আসুক বইকে ভুলতে পারবেন না। বইয়ের সম্মান আলাদা। বই হচ্ছে হৃদয়ের ডেকোরেশন। দেশ-বিদেশ সমস্ত কিছুর ডকুমেন্টেশন পাই বই থেকেই। বই ডাউন দ্যা মেমরি লেনে থেকে যায়। ডিজিটালের যুগ হলেও গত বছর কলকাতা বইমেলায় ৩০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। প্রায় ২৭ লক্ষ লোক বইমেলায় এসেছে। এবছরের হয়তো ৫০ লক্ষ লোক থেকে এক কোটি লোক বইমেলায় আসবেন। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডকেও সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের সবকিছু করতে হবে। ৪৮ তম কলকাতা বইমেলার উদ্বোধনের মঞ্চ থেকে ডিজিটাল যুগে বইয়ের গুরুত্বের কথা তুলে ধরলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার নির্ধারিত সময় বিকেল ৪ টের আগেই মেলা প্রাঙ্গণে এসে প্রথমে তৃণমূলের মুখপত্র জাগোবাংলার স্টল ঘুরে দেখেন। এরপর রাজ্য পুলিশ, কলকাতা পুলিশ কলকাতা পুরসভার স্টল ঘুরে সোজা পৌঁছে যান উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মঞ্চে। প্রতিবারের মতো রীতি অনুযায়ী ঘন্টা বাজিয়ে বইমেলার আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এবছর কলকাতা বইমেলায় মুখ্যমন্ত্রী তাঁর লেখা তিনটি বইয়ের প্রকাশ করেন। ৩ টি নতুন বই হল লিপিবদ্ধ কিছু কাজ, স্যালুট- ২ এবং বাংলায় নির্বাচন ও আমরা। এর মধ্যে সেলুট ২ বইটি ইংরেজি ভাষায় লেখা কবিতার বই। বাকি দুটি বইয়ের মধ্যে বাংলার নির্বাচনও আমরা বইটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে লেখা। লিপিবদ্ধ কিছু কাজ বইটি মমতার রেলমন্ত্রীর আমল থেকে মুখ্যমন্ত্রী সময়কাল পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে লেখা হয়েছে। এছাড়াও এডিজি সাউথ বেঙ্গল সুপ্রতিম সরকারের লেখা গোয়েন্দা পীঠ ও রাজ্যের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হরিকৃষ্ণ দিবেদীর লেখা একটি বইয়েরও উদ্বোধন করেন তিনি।
বই মানুষের মনে বছরের পর বছর রয়ে যায়
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের জার্মানির অতিথিরা অনেকের নাম বললেন একটি নাম বলতে ভুলে গেছেন। কি হচ্ছে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু যার সঙ্গে জার্মানির গভীর সম্পর্ক ছিল। তার কন্যা অনিতা এখনো ওখানেই থাকে। আমার সঙ্গে ওর অনেকবার কথা হয়েছে। বসু পরিবার এরা বিপ্লবী পরিবার। এখানে আর্জেন্টিনার অতিথিরা এসেছেন। আমি যখন কলকাতার থিম রং নীল সাদা করেছিলাম। অনেকেই বলেছিলেন এটা আর্জেন্টিনার রং । কিন্তু আমি মনে করি নীল সাদা আকাশের কোনো সীমা নেই। রং আসলে সবার জন্য। বইমেলা আমাদের গর্বের। বইমেলা হচ্ছে আমাদের উৎসস্থল থেকে উৎস সরণিতে পৌঁছে দেয়। একটা বট বৃক্ষ যুগের পর যুগ ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। তেমনি বই বৃক্ষ হাজার হাজার বছর ধরে মনের মধ্যে রয়ে যায়। বই কথা বলে। বই মানুষের মধ্যে যুগ যুগ ধরে রয়ে যায়। বই হচ্ছে বটবৃক্ষ মহিরুহ।

জাগো বাংলার স্টলে অর্জুন গাছ
মুখ্যমন্ত্রীর ডিজাইনে জাগো বাংলার স্টল। স্টলের মাঝে লাগানো হয়েছে অর্জুন গাছ। গোটা স্টলটি মাটির বাড়ির আদলে তৈরি করা হয়েছে। কুলুঙ্গীতে রাখা হয়েছে বাংলা জাগো বাংলা স্টল প্রসঙ্গে মমতা বলেন,আমি আমার স্টলের থিমে সত্যিকারের অর্জুন গাছ লাগিয়েছি। মাটির বাড়ি মাঝখানে অর্জুন গাছ। আগেকার দিনে কুলঙ্গির মধ্যে বই থাকত। সত্যিই জাগো বাংলার স্টলের তিন সত্যি ভালো করেছে শিল্পীরা। তিনি আরো বলেন, শুধু বড় লেখকদের নয়, ছোট লেখকদের হাত দিয়ে অনেক ভালো লেখা বের হয়। সামনেই সরস্বতী পুজো। বইয়ের দেবী সরস্বতী। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা মায়ের আরাধনা করে কলকাতা বইমেলায় আসে।

বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের বার্তা
তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন,কলকাতা বইমেলা পৃথিবীর অন্যতম সেরা বই মেলা। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য। নানা ভাষা, নানা পরিধান, নানা জাতি, নানা ধর্ম আমরা সবাইকে নিয়ে চলি। কারোর ভাষা আলাদা কারো ধর্ম আলাদা কারো সংস্কৃতি আলাদা। কিন্তু আমরা প্রত্যেককে সম্মান করি। সীমান্ত, ভাষা সংস্কৃতি আলাদা আলাদা হলেও মনুষ্যত্বই আসল কথা। মনুষ্যত্বের মধ্যেই একতা। মনুষত্ব না থাকলে কিছুই থাকবে না ।
বইমেলার নিজস্ব প্রাঙ্গণ
মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে কলকাতা বইমেলা পেয়েছে তাদের নিজস্ব মেলা প্রাঙ্গন। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বইমেলার জন্য এখন নিজস্ব মেলা প্রাঙ্গণ করে দেওয়া হয়েছে। রেন্টাল পার্কের নামই করা হয়েছে বইমেলা মেলা প্রাঙ্গণ। আমি দেখতে চাই কলকাতা বইমেলা বিশ্বের সেরা বইমেলা হয়ে উঠুক।
কলকাতার সংস্কৃতির সঙ্গে এই রাজ্যের কবি, লেখক, সুরকার মুখ্যমন্ত্রী মানানসই
এ বছরের ফোকাল থিম জার্মানি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতে জার্মানির রাষ্ট্রদূত ফিলিপ অ্যাকারম্যান। জার্মানির কলকাতায় গোয়েতে ইন্সটিটিউট ম্যাক্স মুলের ভবনের প্রধান মাদ্রাস টুকারবার। এদিন জার্মানির রাষ্ট্রদূত ফিলিপ অ্যাকারম্যান কলকাতা বইমেলার ভুয়সি প্রশংসা করে বলেন, সবাই এখন কুম্ভ মেলার কথা বলছেন, আসলে কলকাতা বইমেলা বাঙালি স্টাইলে বইয়ের কুম্ভ মেলা। শুধু বইমেলা নয়, এখানকার বিখ্যাত দুর্গাপুজোর আমি ভক্ত। নলেজ শেয়ারের জন্য কলকাতা বইমেলার কোনো তুলনা হয় না। চিরকালই কলকাতা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পীঠস্থান। তার সঙ্গে এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজে একজন অসাধারণ কবি, লেখক, সুরকার। কলকাতার সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও।