করিনা কেন বাড়ির নিরাপত্তা এড়িয়ে মিডিয়াকে দুষছেন ?
সদাশিব রানা। মুম্বই
৩৬৫দিন। ৫ দিন পর মুম্বইয়ের লীলাবতী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরে গেলেও সইফ আলি খানের আক্রান্ত হওয়ার পিছনে রহস্যের সমাধান হল না এখনো। মঙ্গলবার বিকেলে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বাড়িতে গেছেন নবাব পুত্র। গত বুধবার মধ্যরাতে সইফের ঘরের মধ্যেই হামলা চালায় আততায়ী। কিন্তু সাইফ আলি খানের আক্রমণকারীকে গ্রেফতার করা হলেও এখনো মুম্বই পুলিশ অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি। বরং তারা তদন্তের মোড় ঘোরাতে চাইছে বলে একাংশের অভিযোগ। হামলাকারী কিভাবে এত কম সময়ে বলিউড স্টারের বাড়িতে গিয়ে হামলা চালালো? হামলার পিছনে মোটিভই বা কি? যদিও পুলিশ জানাচ্ছে, টাকা লুটের কারণেই আততায়ী সইফ আলি খানের বাড়িকে বেছে নিয়েছিল। তবে পুলিশের এই জবাবে সন্তুষ্ট হওয়া যাচ্ছে না। তদন্তের পর একাধিক খটকা সামনে আসছে।
১. সন্দেহের মধ্যে বারবার পড়ছে বাড়ির পরিচারিকা ও সইফের বাড়ির সদস্যরা। ঘটনার দিন রাত পর্যন্ত কোথায় ছিলেন স্ত্রী করিনা কাপুর? যদিও পরে স্ত্রী কারিনা জানান, করিনা কাপুর রাত পর্যন্ত বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করছিলেন। কিন্তু তার কাছে স্বামী আক্রান্ত হওয়ার খবর পৌঁছায়নি? যদিও খবর পৌঁছায় তাহলে কেন করিনা কাপুর সোজা লীলাবতী হাসপাতালে গেলেন না কেন? আদৌ কি তার মোবাইল পরীক্ষা করা হয়েছে? নাকি নিজের ক্ষমতা বলে মোবাইল পরীক্ষা করতে দেয়নি তিনি? বারবার বাড়ির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে করিনা কাপুর কেন ক্ষেপে যাচ্ছেন ও মিডিয়ার ওপর মারমুখী হয়ে উঠছেন ? ঘটনা খবর পেতেই হাসপাতালে পৌঁছে যান প্রাক্তন স্ত্রী অমৃত সিংয়ের ছেলে ইব্রাহিম। রাতভর হাসপাতালেই ছিলেন তিনি। করিনা কাপুর হাসপাতালে যেতেই তাকে ওখান থেকে সরিয়ে দেন।
২. মুম্বই পুলিশ বলছে, হামলাকারী শরিফুল ৫ মাস আগেই মুম্বাইয়ে এসেছিল। ৫ মাসের মধ্যে মুম্বইয়ের মতো জনবহুল শহরে সাধারণ মানুষ ৫ টি রাস্তাও চিনে উঠতে পারে না, সেখানে কি করে একজন বহিরাগত আততায়ী সইফ আলি খানের অ্যাপার্টমেন্ট ঢুকল? কি করেই বা সে জানল সইফ ওই অ্যাপার্টমেন্টের ১২ এবং ১৩ তলায় থাকে?
৩. আততায়ীর কাছে কি করে সাইফ আলী খানের ঘরের পুরো আউটলে পৌঁছালো। যে সকলের নজর এড়িয়ে কয়েক ঘন্টা ধরে ফ্ল্যাটের ঘরে লুকিয়ে থাকল? এবং হামলা চালিয়ে কোন পথ দিয়ে বেরিয়ে যেতে হবে তার সবটাই হামলাকারীর নখদর্পণে হল কি করে?
৪. বিল্ডিংয়ে ওঠার সময় আততায়ীর ফুটেজ ধরা পড়েছে। যেখানে দেখা যায় নিজের চেনা জায়গায় যেভাবে অনায়াসী চলাফেরা করে সেভাবেই সে সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠছে। এমনকি উপরে ওঠার সময় কোন নিরাপত্তারক্ষীরও চোখে ধরা পরল না। তাহলে কি বিল্ডিং এর নিরাপত্তারক্ষিও হামলার সঙ্গে যুক্ত।
৫. সাইফ আলী খানের বাড়ির পরিচারিকা পুলিশকে তার বয়ানে জানিয়েছেন, তিনি রাত দেড়টা নাগাদ বাথরুমের ভেতর থেকে একটি আওয়াজ পাওয়ায় ঘুম থেকে উঠে দেখেন বাথরুমের আলো জ্বলছে এবং ভেতরে একজন অপরিচিত ব্যক্তি রয়েছে।তাহলে কি সাইফ আলী খানের এপার্টমেন্টের ভেতরে কেউ দরজা খুলে দেওয়ার পরই সে ভিতরে প্রবেশ করে। অর্থাৎ গোটা ঘটনার সঙ্গে নবাব পুত্রের বাড়ির ঘনিষ্ঠ কেউ যুক্ত রয়েছে?
৬. ওই পরিচারীকার বয়ানে আরো জানা গিয়েছে, তার সঙ্গে আততাই এর ধস্তাধস্তি হয়। আওয়াজ পেয়েই সকলের ঘুম ভেঙ্গে যায়। শরিফুলি খান ছাড়াও বাড়ির মধ্যে থাকা আরো ৫ থেকে ৭ জন উঠে পরে। এরপর সাইফ আলী খানের সঙ্গে হাতাহাতি হবার পর একটি বেডরুমের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়ে কিছুক্ষণ পরে ওই বেডরুমে গিয়ে দেখা যায় সে সেখানে নেই। কেন ওই বেডরুমের লক করা হয়নি? কেন ঘর বন্ধ করে পুলিশ ডাকলো না পরিচারিকা ও বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা?
১৬ জানুয়ারি সাইফ আলী খানের বান্দ্রার ১২ তলার অ্যাপার্টমেন্টে গভীর রাতে যে অনুপ্রবেশকারী হানা দিয়েছিল, প্রাথমিকভাবে সে নিজের পরিচয় দিয়েছিল কলকাতাবাসী বাঙালি বিজয় দাস নামে। কিন্তু মুম্বাই পুলিশদের জেরায় বোঝা যায় সে আসলে বাংলাদেশের নাগরিক। তার আসল নাম শরিফুল ইসলাম শাহজাদা। বাংলাদেশের বরিশালের ঝালকাঠি জেলার লোক সে। শরিফুলকে জেরা করে মুম্বাই পুলিশ জানতে পারে, সাত মাস আগে বাংলাদেশ থেকে উত্তরপূর্ব ভারতের মেঘালয়ের ২০০ মিটারের ডাউকি নদী সাঁতার কেটে পেরিয়ে সে ভারতেই প্রবেশ করে কোন বৈধ পাসপোর্ট ছাড়া। মুম্বাই পুলিশ শরিফুলকে জিজ্ঞেস করে আরো জানতে পারে খুকুমণি জাহাঙ্গীর শেখের সিম কার্ড দিয়ে সে কলকাতায় নিজের আধার কার্ড তৈরি করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সে কাজে সে সফল হয়নি। তারপর কলকাতায় কয়েক সপ্তাহ কাটিয়ে সে মুম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বেছে বেছে সে এমন জায়গায় কর্মসংস্থানের চেষ্টা করে যেখানে সরাসরি কোনও পরিচয় পত্রের দরকার হয় না। মুম্বাই এসে সে অমিত পান্ডে নামে এক লেবার কন্ট্রাক্টরের সাহায্য নেয়। এই অমিত পান্ডে শরিফুলকে মুম্বাইয়ের ওরলি এবং থানে অঞ্চলের বিভিন্ন পাব এবং হোটেলে হাউসকিপিংয়ের কাজ পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। মুম্বাইয়ের থানের হিরনান্দানি অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ থেকে ভোর বেলা ঘুমন্ত অবস্থায় যে সময় শরিফুলকে ধরা হয়, ধরা পরপরই সে বারবার বলতে থাকে সে কলকাতার মানুষ। তার নাম বিজয় দাস। কিন্তু মুম্বাই পুলিশ অফিসাররা তার মোবাইলের কল রেকর্ড ঘেঁটে দেখতে পান, শরিফুলের মোবাইল থেকে একাধিক ফোন কল গিয়েছে বাংলাদেশে তার আত্মীয় এবং পরিবারের কাছে। তখনই মুম্বাই পুলিশ অফিসাররা বুঝতে পেরে যান শরিফুল আসলে বাংলাদেশের নাগরিক।