বাংলা ছাড়িয়ে ইউরোপ আমেরিকার বাজার দখল
বিদেশে রফতানি বেড়েছে জয়নগরের মোয়ার

তানিয়া পান্ডে। জয়নগর

৩৬৫ দিন। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে জয়নগরের মোয়া (Joynagarer Moya)জিআই পাওয়ার পরে বিদেশের রপ্তানির মাত্রা অনেকটা বেড়েছে। যার সুফল পাচ্ছেন মোয়া ব্যবসায়ীরা। উপকৃত হচ্ছেন বহড়ুর আদি মিষ্টি ব্যবসায়ী সহ জয়নগর এলাকার সমস্ত মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। মোয়ার আতুরঘর হল বহড়ু। জয়নগরের মোয়া প্রথম তৈরি হয় এই বহড়ুতেই। জিআই পাওয়ার পরই শুধু বাংলাতেই সীমাবদ্ধ নেই, বিদেশেও যথেষ্ট খ্যাতি ছড়িয়েছে জয়নগরের মোয়ার।
এ প্রসঙ্গে শ্যামসুন্দর মিষ্টান্ন ভান্ডারের কর্ণধার বাবলু ঘোষ ও রঞ্জিত কুমার ঘোষ বলেন, ‘আমাদের মোয়ার বিশেষত্বই হল নিজেদের হাতে তৈরি খোয়াক্ষীর দিয়ে এই মোয়া তৈরি করা হয়। মোয়া তৈরি করা হয় খোয়াক্ষীর, কাজু, কিসমিস, পেস্তা, খাঁটি নলেন গুড় এবং কনকচুর ধানের খই দিয়ে। আমাদের মোয়া জি আই তকমা পেয়েছে জয়নগরের মোয়া হিসেবে। জি আই তকমা পাওয়ার পরে আমাদের বিদেশের রপ্তানি অনেকটাই বেড়েছে আগের তুলনায়। দুবাই, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আমেরিকা সর্বত্রই যাচ্ছে আমাদের মোয়া। প্রবাসী বাঙালিরা এসে মোয়া নিয়ে যায় এইখান থেকে। এছাড়াও তিনি জানান, তবে মোয়ার মান এখানে যেভাবে বজায় রাখা হয় তা আর কোথাও করা হয় না। জয়নগর থেকে বহড়ু পর্যন্ত মিষ্টি ব্যবসায়ীরা যে উন্নতমানের মোয়া তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেন সেই স্বাদের মোয়া অন্য জায়গার মিষ্টির দোকানে পাওয়া যায় না। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গার মিষ্টি ব্যবসায়ীরা বহড়ু থেকে মোয়া কিনে এনে শহরের বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করেন। এমনকি বিদেশ থেকে প্রবাসী বাঙালিরা এখানে এসে মোয়া নিয়ে যান। যত ঠান্ডা পড়ে গুড় তত খাঁটি ও তার সুগন্ধ বাড়ে। এখনও সেরকম ঠান্ডা সেরকম না পড়ায় মোয়ার স্বাদ অনেকটা কম হচ্ছে। আশা করছি আগামী দিনে ঠান্ডা ঠিক মত পড়লে আরো উন্নতমানের ও স্বাদের মোয়া দিতে পারব মানুষকে’। বাংলার মিষ্টি বিশেষজ্ঞ হরিপদ ভৌমিক মোয়ার ইতিহাস সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘শাস্ত্রানুযায়ী বলা হয় কার্তিক ও গনেশ মা পার্বতীর কাছে মোয়া খাওয়ার বায়না করেছিল। তখন মা পার্বতী তাদের জন্য মোদক তৈরি করে দেন। গোল পাকে তৈরি করা খাবার হল মোয়া। রামায়নেও যার উল্লেখ রয়েছে। সমস্ত প্রজারা রামচন্দ্রকে মোয়া উপহার দিয়েছিলেন। আমাদের বাংলার খাবারের ঐতিহ্যই হল নলেন গুড়, খই, মুড়ি। তিনি আরো জানান, নতুন করে খেজুর গাছ না লাগানো হলে খুব বেশিদিন এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না।’ ইতিমধ্যেই মোয়ার হাব জয়নগরে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে খেজুর গাছ লাগানো হচ্ছে। যাতে শীতের মরশুমে বেশি করে গুড়ের আমদানি থাকে।
জয়নগরের মোয়া বিদেশে রপ্তানির জন্য এক উন্নত মানের প্যাকেজিংয়ের পরিকল্পনা করা হয় । এই মোয়া গুলো যাতে অনেকদিন পর্যন্ত রাখা যায় সেই বিষয়েও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার পর এক নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে।

Scroll to Top