রাজস্ব আদায়ে দেশের সেরা কলকাতা
সৌগত মন্ডল
৩৬৫ দিন। ডেস্টিনেশন কলকাতা। দিল্লি মুম্বাই চেন্নাইয়ের মত বিমানবন্দর গুলিকে ছাপিয়ে রাজস্ব আদায়ের নিরিখে ভারতবর্ষের সেরা বিমানবন্দরের শিরোপা ছিনিয়ে নিল কলকাতা। অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রকের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা সাম্প্রতিকতম পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে দেশের সেরা বিমানবন্দরের তালিকায় ১ নম্বরে রয়েছে কলকাতা বিমানবন্দর। তবে শুধুমাত্র কলকাতা নয়, রাজস্ব আদায়ের নিরিখে ভারতবর্ষের প্রথম ১০ বিমানবন্দরের তালিকায় রয়েছে বাংলার আরো এক বিমানবন্দর বাগডোগরা। ভারতবর্ষের মধ্যে সেরা বাণিজ্য গন্তব্য হয়ে উঠতে চলেছে কলকাতা। একদিকে যখন ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্য থেকে তথ্য প্রযুক্তির সংস্থাগুলি নিজেদের নতুন দফতর খুলছে কলকাতায়, পাশাপাশি বাংলার যে বিনিয়োগবান্ধব ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে তার ফলে কলকাতার পাশাপাশি বাংলার বিভিন্ন জায়গায় বাড়ছে বিনিয়োগ। এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে প্রত্যেক বছর রাজস্ব আদায়ের নিরিখে দেশের প্রথম সারির বিমানবন্দর গুলির যে তালিকা প্রকাশ করা হয় সেখানে এবারে প্রথম স্থানে রয়েছে কলকাতা বিমানবন্দর। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে শুধুমাত্র কলকাতা বিমানবন্দরের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ পৌঁছে গিয়েছে ১৫৭৮.৬১ কোটি টাকায়। রাজস্ব আদায়ের নিরিখে ভারতের দ্বিতীয় সেরা বিমানবন্দরের শিরোপা পেয়েছে চেন্নাই বিমানবন্দর। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে চেন্নাই বিমানবন্দরের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ১২১২.৭৭ কোটি টাকা। এরপরে যথাক্রমে কালিকট বিমানবন্দরের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ৩১১ কোটি টাকা, পুনে বিমানবন্দরের রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩১০ কোটি টাকা, গোয়া বিমানবন্দরে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ২৭৫ কোটি টাকা, অমৃতসর বিমানবন্দরের রাজস্ব আদায় হয়েছে 229 কোটি টাকা, ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরের রাজস্বের পরিমাণ 188 কোটি টাকা, শ্রীনগর বিমানবন্দরের আয় হয়েছে ১৬৮ কোটি টাকা, নবম স্থানে থাকা বারানসি বিমানবন্দরের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ 142 কোটি টাকা এবং দশম স্থানে বাংলার বাগডোগরা বিমানবন্দরের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ 130 কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত, গোটা পৃথিবীজুড়েই বিমানবন্দরের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণের নিরিখে বিচার করা হয় সংশ্লিষ্ট শহরের জীবনযাত্রার মান এবং বিনিয়োগবান্ধব ভাব মূর্তি। মমতা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে যেভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে শিল্পপতিদের বাংলায় বিনিয়োগ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন এবং বাংলায় বিনিয়োগকারীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধে তৈরি করেছেন তার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হিসেবে দেশের সেরা রাজস্ব আদায়ের তালিকায় উঠে এসেছে কলকাতা বিমানবন্দর। তবে রাজস্ব আদায়ের নিরিখে ভারতবর্ষের সেরা বিমানবন্দরের শিরোপা ছিনিয়ে নিলেও কলকাতা বিমানবন্দরের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ আরো অনেকটাই বাড়তো যদি কলকাতা থেকে ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতো। এই বিষয়টি মাথায় রেখে সম্প্রতি রাজ্য বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বেশি করে আন্তর্জাতিক বিমান চালানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর জন্য সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব পাস হয়েছে। সেই সঙ্গে ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সরাসরি বিমান চালুর দাবি জানানো হয়েছে কেন্দ্রের কাছে।
বিমানবন্দরের রাজস্ব আদায়ের ভিত্তি
তথ্য অনুযায়ী ভারতবর্ষের বিভিন্ন বিমানবন্দর গুলির বার্ষিক রাজস্ব আদায়ের যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয় তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দরের মূলত অ্যারোনটিকাল এবং নন-অ্যারোনটিকাল সেক্টর থেকে আয়ের পরিসংখ্যান ধরা হয় রাজস্ব হিসেবে। অ্যারোনটিকাল রাজস্বের মধ্যে ধরা হয় সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভাড়া দেওয়া, বিমানবন্দরে যাত্রী পরিবহন না করলেও বাণিজ্যিক অথবা আন্তর্জাতিক কোন বিমানকে ল্যান্ডিংয়ের জন্য ভাড়া দেওয়া অথবা পার্কিং ফি। এমনকি জ্বালানি ধরার সংস্থাগুলির থেকে প্রাপ্য আয়ও এই রাজস্বের মধ্যে পড়ে। আবার নন-অ্যারোনটিকাল সেক্টরের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন অ্যাপ ক্যাপ সংস্থাগুলি থেকে প্রাপ্য টাকা, বিমানবন্দরের এলাকার মধ্যে থাকা দোকান শপিংমল এবং ডিউটি ফ্রি শপগুলির থেকে পাওয়া টাকাও। আর এসবের নিরিখে গত কয়েক বছর ধরেই লাভের মুখ দেখা তো দূরের কথা বড়সড়ো লোকসানে চলছে, দিল্লি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অথবা মুম্বাই বিমানবন্দরের মত প্রথম সারির বিমানবন্দরগুলিও। গত আর্থিক বর্ষেও কলকাতা ছিল দেশের মধ্যে রাজস্ব আদায়ের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে।