নিউটাউনের নতুন প্রজন্ম ভিড় জমাল
উদ্বোধক কবি জয় গোস্বামীর ভাষণে আইনস্টাইনের ভুল স্বীকার, প্রশাসক আলাপনের ভাষণে বড়দিনের বড় সূর্যোদয়ের মাহাত্ম্য, ডিজিটাল যুগেও বইয়ের অনিবার্য গুরুত্ব, দ্বিবেদী ‘র ভাষণে সরকারি সাহায্যের প্রতিশ্রুতি, কবিতা উৎসব, রক্তকরবী থেকে সত্যমের কবিতাপাঠ, পরিশেষে লক্ষ্মীছাড়া বাংলা ব্যান্ড
শান্তনু দেবনাথ ছবি সুব্রত কোটাল
৩৬৫ দিন। বড়দিনে জমজমাট নিউটাউন সিটি স্কোয়ার, শুরু হয়ে গেল নিউটাউন বইমেলা। বুধবারের সন্ধ্যায় বইমেলা উদ্বোধন করা হল। কমল চক্রবর্তী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কবি জয় গোস্বামী, মুখ ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, হিডকোর ভাইস চেয়ারম্যান হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, হিডকোর উচ্চপদস্থ আধিকারিক শশাঙ্ক শেঠি, প্রশান্ত বাড়ুই, বিশিষ্ট শিল্পপতি সত্যম রায়চৌধুরি, কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা ও বুলসেলার্স অ্যান্ড পাবলিসার্স গিল্ডের অধিকর্তা সুধাংশুশেখর দে, ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়, রাজারহাট নিউটাউনের বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায় সহ অন্যান্য বিশিষ্টরা। বড়দিনের ছুটিতে মেলার শুরুতেই বইপ্রেমিরা ভিড় জমিয়েছেন মাঠে। যত দিন বাড়তে ততই বাড়বে পাঠকদের সংখ্যাও। ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে নিউটাউন বইমেলা।
মমতা বিতান
কলকাতা বইমেলার পাশাপাশি সারা রাজ্যের ছোট থেকে বড় ব্লকের বইমেলাগুলিতেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতার লেখা গল্প এবং কবিতা সমগ্র প্রতিটি জায়গাতেই আলাদাভাবে স্টলে পাওয়া যেত। কেবলমাত্র নিউটাউন বইমেলাতেই মমতার লেখা বই বা কবিতা সমগ্র পাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষকে হন্যে হয়ে খুঁজতে হতো। ১১ তম বর্ষে এসে নিউটাউন বইমেলা এই প্রথম মমতা বিতান নামের নতুন স্টল তৈরি করেছে। যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা প্রতিটি সমগ্র খুব সহজেই সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে। শুধু তাই নয় বহু মানুষ বইমেলাতে জাগো বাংলা’র স্টল থেকে মমতার সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি তার ছবিও সংগ্রহ করে থাকেন। নিউ টাউন বইমেলার একই রকম ভাবে মমতা বিতান স্টলে থাকছে মমতার সংগ্রামের নানা ছবি, তাঁর সাহিত্য সৃষ্টির পাশাপাশি সেই ছবিগুলোও ছিল বাড়তি আকর্ষণ। বুধবার বড়দিনের সন্ধ্যায় এই স্টলটি উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট কবি জয় গোস্বামী। শুধু তাই নয় তার সঙ্গে এদিন তিনি ওই স্টল থেকে দুটি বই যথাক্রমে কোভিডের দিনলিপি এবং মমতার গদ্য সমগ্ৰ নিজে সংগ্রহ করেন।
জয় গোস্বামী ও আইনস্টাইন
মুখ্যমন্ত্রী মাঝেমধ্যেই তাঁর প্রশাসনিক আমলাদের উৎসাহিত করতে বলে থাকেন, কাজ করতে গেলে ভুল হতেই পারে। সেই একই সুর এদিন শোনা গেল কবি জয় গোস্বামীর কথায়। তিনি বলেন, ভুল তাদেরই হয় যারা কাজ করে। যারা কাজ করে না তাদের ভুল হওয়াও সম্ভাবনা নেই। কিন্তু নতি স্বীকার করে মানুষের কাছে মাথা নত করলে তাতে ছোট হওয়া হয় না, সেটা আদপে মহান ব্যক্তিরা ইতিহাসে তাদের কীর্তির মাধ্যমে বর্ণিত করে গেছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি আইনস্টাইন ও আলি আকবর খাঁ-এর উদাহরণ দিয়ে বলেন, তাঁদের মতো বিরাট মাপের মানুষরাও অবলীলায় নিজেদের ভুল প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন। তারপরও সাধারণ মানুষ তাদের প্রতি শ্রদ্ধা না কমিয়ে তাদের আজও মনের মনি কোঠায় স্থান দিয়ে রয়েছেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, সঠিক কাজ নিজের আনন্দে করে যেতে হয় সেখানে নিন্দুকেরা কি বলল তাতে কান দিতে নেই।
আলাপনের বড় দিন
মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝি উল্লেখ করে বলেন, যেভাবে ওই উপন্যাসে একটি নতুন দ্বীপে, নতুন ভূখন্ডে সম্পূর্ণ অপরিচিত বা অর্ধপরিচিত কিছু মানুষদের মধ্যে নতুন সম্পর্ক গড়ে ওঠে ঠিক তেমনই এই নিউটাউনেও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সেই নতুন সম্পর্কে বেঁধে থাকার প্রবণতা লক্ষ করা যায়, যা নিউটাউন বইমেলার সাফল্যের অন্যতম বড় কারণ। বড়দিনের তাৎপর্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বড়দিনের দিন দিনের সময় বড় হতে শুরু করে। যিশু সত্যিই এই দিনে জন্মেছিলেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে এই দিন যেহেতু উত্তর গোলার্ধে সূর্যের বেড়ে যাওয়া, তাই এই দিনটিকেই পূণ্য দিন হিসেবে গণ্য করে যিশুর জন্মের সঙ্গে যোগ করে দেওয়া হয়। এরসঙ্গে আমাদের মকর সংক্রান্তি বা অন্যান্য দেশে অনুরূপ উৎসবের মিল রয়েছে। আমরা আসলে বড়দিনের মাধ্যমে নিজেদের কালিমা মুছে, নিজেদের বড় হওয়াকেই উদযাপন করি।
সত্যমের কবিতাপাঠ
টেকনো ইন্ডিয়া গোষ্ঠীর কর্নধার সত্যম রায়চৌধুরিও এদিন বড়দিন প্রসঙ্গে একটি কবিতাপাঠ করেন। সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটির আচার্য সত্যম শুধু সফল শিল্পপতিই নন, সাহিত্যের অনুরাগী পাঠকও। ফলে নিউটাউন বইমেলায় তাঁর আগ্রহ রয়েছে। এখানে সিস্টান নিবেদিতা ইউনিভার্সিটির স্টলও করা হয়েছে।
তাপসকে ঘিরে কলেজছাত্ররা
রাজারহাট নিউটাউনের বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়কে ঘিরে এদিন ছাত্রযুবদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। মমতা বিতান প্যাভিলিয়নে বিশিষ্টদের আলাপচারিতা মন দিয়ে শোনা থেকে বইমেলার অন্যান্য প্রায় প্রতিটি স্টলে ঘুরে দেখার সময় তাঁর সঙ্গে দেখা যায় আগামী প্রজন্মের একধাঁক মুখকে। পাশাপাশি মমতা বিতানে মুখ্যমন্ত্রী লেখা নানাধরণের বইযের পাতা উল্টে দেখার পাশাপাশি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সেলফি তোলার হিড়িকও ছিল নজরকাড়া।
লক্ষ্মীছাড়ার গান
বইমেলায় বই কেনার পাশাপাশি সোনায় সোহাগার মতো বাড়তি পাওনা ছিল লক্ষ্মীছাড়ার গান। বাংলা ব্যান্ডের গানের তালে তালে পা মেলাল আট থেকে আশি। বিশেষ করে বাংলা ব্যান্ডের আদিপুরুষ ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র বেশ কিছু গান মন জয় করে নিয়েছিল উপস্থিত কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের। তাঁদের নিজেদের গানের পাশাপাশি পড়াশোনায় জলাঞ্জলি বা দরিয়ায় আইল তুফান শুনতে ভিড় জমে।