সায়ন্তী অধিকারী
৩৬৫ দিন। প্রথম ঝলকেই সকলকে চমকে দিয়েছিলেন রুক্মিণী মৈত্র।দীপাবলিতে মুক্তি পেয়েছিল বিনোদিনী-একটি নটীর উপাখ্যান-এর টিজার। সেখানেই একেবারে নয়া অবতারে ধরা দিয়েছিলেন রুক্মিণী।টিজারেই বিনোদিনী অবতারে সবার কাছ থেকে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি।দেবের প্রযোজনায় নটি বিনোদিনী নতুন বছরে দর্শকদের উপহার দিতে চলেছে।২০২২-এর সেপ্টেম্বরে প্রথমবার বিনোদিনী রূপে সামনে এসেছিলেন রুক্মিণী মৈত্র। জানা গিয়েছিল,পরিচালক রামকমল মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে আসছে ‘বিনোদিনী: একটি নটীর উপাখ্যান’।এই ছবি নিয়ে দর্শকের মনে তৈরি হয়েছিল আলাদা আগ্রহ।বহুদিন ধরেই রুক্মিণীর বহু প্রতীক্ষিত ছবি ‘বিনোদিনী’র পোস্টার ঘুরছে। ‘শ্রী চৈতন্য লীলা’ নাটকের দৃশ্যে গেরুয়া বস্ত্রে দু হাত তুলে দেখা গিয়েছে নায়িকাকে।তারপরই মুক্তি পায় টিজার।আর সেখানেও রয়েছে একের পর এক চমক।এবার পোস্টার মুক্তি পাওয়ার পালা।নতুন বছরেই প্রথম দিনেই বিনোদিনী নিয়ে আসছে দেব।এদিকে টিজারও ছিল একবারে অভিনব। আগাগোড়া বিনোদিনী দাসীর বলিষ্ঠ ও দৃঢ়চেতা চরিত্রে দেখা গিয়েছে রুক্মিণীকে।তাঁকে বলতে শোনা যায়,আমার অভিনয় বিকাও হতে পারে। তা দেখতে হলে টাকা দিয়ে টিকিট কাটুন। আমার অভিনয় কিনুন,দেখতে আসুন। তবে ভুল করেও বিনোদিনী দাসীকে কিনতে আসবেন না।প্রসঙ্গত,ঊনবিংশ শতকের বাংলা মঞ্চের সবথেকে উল্লেখযোগ্য অভিনেত্রী বিনোদিনী । তাঁর ১২ বছরের স্বল্প অভিনয় জীবনের মধ্যেই তিনি মঞ্চাভিনয়ে বিপুল সাফল্য অর্জন করেন। তাঁকে জড়িয়ে আছে এক প্রগাঢ় ইতিহাসের অধ্যায়। গিরিশ ঘোষ থেকে জ্যাতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, শ্রী রামকৃষ কে নেই সেই অধ্যায়ে। স্বল্প দৈর্ঘ্যের এই অভিনয় জীবনে তাঁর রহস্যময়তার তীব্র আলোকে আলোকিত বাংলার রঙ্গমঞ্চ। নাট্যসম্রাট গিরিশ ঘোষের হাতে মাটির পুতুলের মত গড়ে ওঠা বিনোদিনী দাসী থেকে নটি হয়ে ওঠা প্রথম মহিলা সুপারস্টার । বারো বছরের অভিনয় জীবনে প্রায় ৮০ টি নাটকে ৯০ টি চরিত্রে তিনি সমুজ্জ্বল। গ্রেট ন্যাশনাল, ন্যাশনাল থিয়েটার, স্টার থিয়েটার, নাম জশ, প্রভাব, তীব্র হতাশায় সব আলো থেকে আত্মগোপন, সব মিলিয়ে অসম্ভব রঙিন এই জীবন। এমন এক চরিত্রে অভিনয় করতে কোন অভিনেত্রীর ইচ্ছে হবে না? বিনোদিনীর ভূমিকায় কে না অভিনয় করেছেন, নান্দীকারে মঞ্জু ভট্টাচার্য, কেয়া চক্রবর্তী।পরিচালক দিনেন গুপ্তর পরিচালনায় নটি বিনোদিনী ছবিতে দেবশ্রী রায় অভিনয় করেছিলেন। যাত্রায় বীণা দাশগুপ্ত, দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় সীমা বিশ্বাস। অমল এবং নিসার আল্লানার নাটকে বিনোদিনীর ভূমিকায় পাঁচজন অভিনয় করেছিলেন। ষাটের দশকের প্রথমে শ্রীরাম লাঘু পরিচালিত কন্নড় সিনেমায় ফরিদা জালাল এই চরিত্রে অভিনয় করেন।কোভিড মহামারীর ঠিক আগেই প্রয়াত প্রদীপ সরকার নটি বিনোদিনীর বায়োপিকের পরিকল্পনা করেন। নটির চরিত্রে নির্বাচন করেন ঐশ্বর্য রাই বচ্চন কে।লকডাউনের আগেই ছবিটি সাইন করেছিলেন অভিনেত্রী। তবে যেহেতু ঐশ্বর্য এবং আরাধ্যা দুজনেই সেইসময় ।করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন, সেজন্য কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রাথমিক ফটোশুট,ফার্স্ট লুক সব ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য পরিচালকের অকালমৃত্যুতে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। পরেই ২০২২ সালে কঙ্গনা রানাউত নটি বিনোদিনীর বায়োপিক তৈরির কথা ঘোষণা করেন এবং নটির লুকে নিজের ফটোশুট বাজারে ছাড়েন। যদিও সেই প্রজেক্ট শুরু হওয়ার আগেই জাতীয় নির্বাচনের ডঙ্কা বেজে যায় এবং কঙ্গনা নিজে রাজনীতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ইতিমধ্যে আরেক প্রবাসী বাঙালি পরিচালক রাম কোমল মুখোপাধ্যায় নটি বিনোদিনীর বায়োপিক বানানোর কাজ শুরু করেছেন। তাঁর ছবিতে বিনোদিনীর চরিত্রে অভিনয় করবেন রুক্মিণী মৈত্র। সব মিলিয়ে এই রঙিন উজ্জ্বল এবং একই সঙ্গে যন্ত্রণার আগুনে প্রজ্জ্বলিত এই চরিত্রে অভিনয় করার আকর্ষণ কেউই উপেক্ষা করতে পারে না।