মুখ্যমন্ত্রী স্টার থিয়েটারের নাম দিলেন বিনোদিনী থিয়েটার

৩৬৫ দিন।‌ সম্প্রতি স্টার থিয়েটার সংস্কার করেছে কলকাতা পুরসভা। কলকাতা পুরসভার আলো বিভাগ সহ আরো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ রয়েছে স্টার থিয়েটারে। এবার সেই স্টার থিয়েটারের নতুন নামকরণ করা হলো বিশিষ্ট অভিনেত্রী বিনোদিনীর নামে। সোমবার সকালে সন্দেশখালিতে জনসভা থেকে এ কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘স্টার থিয়েটারের নাম বদল করে বিনোদিনীর নামে করা হল। আমি মেয়রকে (ফিরহাদ হাকিম) বলেছি বিষয়টা দেখে নিতে।’ মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্যের নাট্য জগত, বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিবর্গরা অভিভূত। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।

প্রথম মহিলা সুপারস্টার
ঊনবিংশ শতকের রঙ্গ মঞ্চের সবথেকে উল্লেখ যোগ্য অভিনেত্রী বিনোদিনী। তাঁর ১২ বছরের স্বল্প অভিনয় জীবনের মধ্যেই তিনি মঞ্চাভিনয়ে বিপুল সাফল্য অর্জন করেন। তাঁকে জড়িয়ে আছে এক প্রগাঢ় ইতিহাসের অধ্যায়। গিরিশচন্দ্র ঘোষ থেকে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, শ্রী রামকৃষ্ণকে নেই সেই অধ্যায়ে। স্বল্প দৈর্ঘ্যের এই অভিনয় জীবনে তাঁর রহস্যময়তার তীব্র আলোকে আলোকিত বাংলার রঙ্গমঞ্চ। যুগের রীতি অনুসারে খুব কম বয়সে বিয়ে হয়েছিল বিনোদিনীর কিন্তু, অল্পকাল পরে তাঁর স্বামীর মাসি এসে স্বামীকে তাঁর কাছ থেকে নিয়ে গিয়ে অন্যত্র বিয়ে দেন। কিছুকাল পরে তাঁর ছোট ভাইয়ের মৃত্যু হয়। নিঃসঙ্গ বিনোদিনী স্থানীয় এক অবৈতনিক স্কুলে পড়াশোনার সঙ্গে গান শেখাও আরম্ভ করলেন প্রতিবেশী সঙ্গীতশিল্পী গঙ্গাবাঈয়ের কাছে। তিনি ছিলেন সে যুগের বেশ নামকরা এক মুজরো গায়িকা। অনেক হোমরা-চোমরা লোক আসতেন গঙ্গাবাঈয়ের ঘরে। তাঁদেরই এক জন পূর্ণচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ে উদ্যোগে বিনোদিনী দশ টাকা বেতনে ‘গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার’-এ যুক্ত হলেন। ১৮৭৪ সালে শত্রুসংহার নাটকে দ্রৌপদীর সখী হিসাবে আত্মপ্রকাশ। তার পর বাকিটা ইতিহাস। নাট্যসম্রাট গিরিশ ঘোষের হাতে মাটির পুতুলের মত গড়ে ওঠা বিনোদিনী দাসী থেকে নটি হয়ে ওঠা প্রথম মহিলা সুপারস্টার । বারো বছরের অভিনয় জীবনে প্রায় ৮০ টি নাটকে ৯০ টি চরিত্রে তিনি সমুজ্জ্বল। গ্রেট ন্যাশনাল, ন্যাশনাল থিয়েটার, স্টার থিয়েটার, নাম জশ, প্রভাব, তীব্র হতাশায় সব আলো থেকে আত্মগোপন, সব মিলিয়ে অসম্ভব রঙিন এই জীবন। অভিনয়-জীবন শেষ করেন ১৮৮৭-র ১ জানুয়ারি। ওই দিন বিডন স্ট্রিট ‘স্টার’-এ ‘বেল্লিক বাজার’ নাটকে রঙ্গিনীর চরিত্রতেই তাঁর শেষ অভিনয়।১৮৮৩ সালে নতুন থিয়েটার তৈরিরর জন্য বিনোদিনীকে অর্থ সাহায্য করতে বলেন গিরিশচন্দ্র। বলা হয় নতুন থিয়েটারের নাম রাখা হবে তাঁর নামে। বিনোদিনী পঞ্চাশ হাজার টাকা তুলে দেন। যদিও নতুন থিয়েটারের নাম রেজিস্ট্রি হয় ‘স্টার থিয়েটার’। এতে ভীষণ আহত হয়েছিলেন বিনোদিনী।

 

 

 

Scroll to Top