৩৬৫দিন।বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মহম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। মঙ্গলবার ভোরে সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ করা এক ভিডিও বার্তায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নাম প্রস্তাব করেন আন্দোলনের অন্যতম নেতা নাহেদ ইসলাম। সরকারের প্রধান হওয়ার বিষয়ে ইতমধ্যেই ছাত্ররা অধ্যাপক ইউনুসের সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও জানিয়েছেন তারা। ভিডিও বার্তায় ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহেদ ইসলাম বলেন, ছাত্রসংগঠনের অভ্যুত্থানকারী যে প্রস্তাবিত সরকার এবং অন্তর্বতীকালীন সরকার যেটা আমরা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি সর্বজন গ্রহণযোগ্য আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হোক।
যারা জীবন ত্যাগ করেছে, তাদের প্রতি আমারও দায়িত্ব আছে ইউনুসছাত্রদের প্রস্তাব প্রসঙ্গে মহম্মদ ইউনুস জানিয়েছেন,শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আমি প্রথমে রাজি হতে চাইনি। আমি তাদের বলেছি, আমার বহু কাজ আছে যেগুলো আমাকে শেষ করতে হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আমাকে বারবার অনুরোধ করে বলেন, আমরা এ রকম একটি রক্তক্ষয়ী আন্দোলন করে সফল হয়েছি। এই আন্দোলনে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, বহু শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এখন বাংলাদেশের সামনে সুযোগ এসেছে একটা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় দেশ পরিচালনার। সেই ক্ষেত্রে আপনি যদি দায়িত্ব নেন তাহলেই সেটা সম্ভব। আপনি দায়িত্ব নিতে রাজি না হলে সেটা আমাদের কারও জন্যেই ভালো হবে না। সে কারণেই আপনাকে আমরা অনুরোধ করছি দায়িত্ব নিতে।শিক্ষার্থীরা যখন এই কথা বলেন তখন আমি নিজেও বিবেচনা করে দেখলাম, এই শিক্ষার্থীরা এত আন্দোলন করেছে, তাদের এজন্য এত মূল্য দিতে হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যদি এত স্যাক্রিফাইস করতে পারে, দেশের মানুষ যদি এত স্যাক্রিফাইস করতে পারে তাহলে আমারও কিছু দায়িত্ব আছে। তখন আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নিতে রাজি আছি বলে শিক্ষার্থীদের জানিয়েছি।নোবেল জয়ী মহম্মদ ইউনুস এর আগেও হাসিনা ও খালেদা মুক্ত সংবেদনশীল, উন্নত বাংলাদেশ গড়ার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা বাধা দেয়। শুধু তাই নয় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করে হাসিনার পুলিশ। যার সবটাই মিথ্যা অভিযোগ বলেই দাবি করেছেন এই নোবেলজয়ী।
সাম্প্রদায়িক শান্তি বজায় রাখতে রাজপথে পাহারা দেবে আন্দোলনকারীরাবাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা আহ্বান দিয়ে জানিয়েছেন,মুক্তিকামী ছাত্রজনতা,আমরা দেখতে পারছি,আমাদের এই অভ্যুত্থান এবং বিপ্লবের পরেই দেশে অরাজকতা ও নাশকতা করছে ফ্যাসিস্ট এবং তাঁদের দোসররা।আমরা দেখতে পারছি,মন্দিরে হামলা চলছে,গোলাগুলি চলছে-নাশকতা ও লুঠপাট হচ্ছে। আমরা মনে করি,আমাদের ছাত্র আন্দোলনের অভ্যুত্থানকে নৎসাত করার জন্য এই ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।আমরা মুক্তিকামী জনতা ও ছাত্র সংগঠনকে সজাগ থাকতে আহবান করছি। আগামীকাল সকলকে সকাল থেকে রাজপথে থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা কমিটির ঘোষণা হয়েছে ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সকল পাড়ায় পাড়ায় এলাকায় এলাকায় সেই কমিটি পাহাড়ায় থাকবে। সংখ্যালঘু কমিউনিটিকে রক্ষা করতে হবে এবং রাষ্ট্র-দেশকে রক্ষা করতে হবে।অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত মুক্তিকামী জনতাকে রাজপথে থেকে তাঁদের যে অভ্যুত্থান তাকে রক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য তারা নিজেরাও মাঠে থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
৩টের মধ্যে পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেওয়ার দাবি উঠলমঙ্গলবার বিকাল তিনটার মধ্যেই জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা নাহিদ ইসলাম।মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আরও দুই নেতাকে পাশে রেখে এক ভিডিও বার্তায় নাহিদ ইসলাম বলেন, “রাষ্ট্রপতি গতকাল বলেছেন যে তিনি অনতিবিলম্বে জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করবেন। কিন্তু আমরা এখনও দেখছি যে একটি অভ্যুত্থানের পরেও এই ফ্যাসিস্ট হাসিনার সংসদ রয়ে গেছে।আজ বিকাল ৩টার মধ্যে যদি সংসদের বিলুপ্তি ঘোষণা না করা হয়, তাহলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কঠোর কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবে।
দ্রুত সরকার গড়ার দাবি রাষ্ট্রপতির কাছেশেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে যে অরাজকতা দেখা যাচ্ছে, প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ছাত্র আন্দোলনকারীরা বলেন, দেশে যে অরাজকতা চলছে মানুষের জীবনের নিরাপত্তাহীনতা চলছে সেজন্য আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে আহ্বান জানাচ্ছি দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।অবশ্যই ছাত্রজনতার প্রস্তাবিত সরকারবাদে কোনও সরকার কিন্তু মেনে নেওয়া হবে না।আমরা বলেছি,কোনও ধরণের সেনাশাসিত সরকার অথবা সেনা সমর্থিত সরকার অথবা এই ফ্যাসিস্টদের দোসরদের কোনও বি টিম সরকার কিন্তু মেনে নেব না।কোনও গণবিরোধী সরকারকে মেনে নেওয়া হবে না। এদিকে বিএনপি' র পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য কারো নাম প্রস্তাব করা হয়নি। রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে আহ্বান এলেই বিএনপি নাম পাঠাবে বলেই জানিয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।