গুজব ষড়যন্ত্র ফাঁস
৩৬৫ দিন। নয়াদিল্লি। গণধর্ষণের শিকার হননি আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের পড়ুয়া চিকিৎসক। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এবং অটোপসি রিপোর্ট পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে এমনি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। এখনও পর্যন্ত যা তদন্ত করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই, তাতে ইঙ্গিত মিলেছে যে পড়ুয়া চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় একজনই জড়িত ছিল। চিকিৎসকের উপরে অত্যাচার চালিয়েছিল মানসিকভাবে বিকৃত যৌনতায় আক্রান্ত ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়। ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্টেও সেরকম ইঙ্গিত মিলেছে। আরজি করের পড়ুয়া চিকিৎসককে গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছিল, সেরকম কোনও প্রমাণ মেলেনি ডিএনএ রিপোর্টেও। এমনটাই জানা গিয়েছে সিবিআই সূত্রে। আজ সুপ্রিম কোর্টেও সেই রিপোর্ট জমা দিয়েছে সিবিআই। যদিও সরকারিভাবে আপাতত সিবিআইয়ের তরফে কিছু জানানো হয়নি।
অ্যানিম্যাল ইনস্টিংক্টে আক্রান্ত সঞ্জয়বছরখানেক আগেই বলিউডের একটি সিনেমা রিলিজ করেছিল অ্যানিম্যাল নামে। ববি দেওয়ালের এই সিনেমায় যৌনতার ক্ষেত্রে একজন মানুষ কি রকম জান্তব ব্যবহার করতে পারে তা দেখানো হয়েছে একে পর এক দৃশ্যে। কিন্তু সিনেমার পর্দার পাশাপাশি বাস্তবেও আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ধর্ষণও হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার হওয়া সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায় ঠিক একই ধরনের অ্যানিম্যাল ইনস্টিংক্টে আক্রান্ত বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। পলিগ্রাফ টেস্ট এখনও করা যায়নি আরজি কর মামলার অন্যতম অভিযুক্ত ও ধৃত সঞ্জয় রায়ের। তবে দফায় দফায় তার মনস্তাত্ত্বিক মূল্যায়নে যা সামনে এসেছে, তাতে চমকে উঠছেন তদন্তকারীরা। সঞ্জয় রায় যে বিকৃত যৌনতায় আক্রান্ত অর্থাৎ সেক্সুয়ালি পারভার্টেড, তাতে কোনও সন্দেহ নেই বলেই সিবিআই সূত্রের খবর। বিশেষ করে রাত হলেই ব্লু ফিল্ম দেখে অস্বাভাবিক যৌনতাড়ণায় ভুগত সে। যার ফলে সোনাগাছি থেকে শুরু করে চেতলার বিভিন্ন নিষিদ্ধ পল্লীতে তার ছিল নিয়মিত অবাধ যাতায়াত। একান্ত কোন যৌনকর্মীর সঙ্গ না পেলে অনলাইনে কখনো টাকা দিয়ে আবার কখনো বা চ্যাট ফ্রেন্ডদের সঙ্গে নগ্ন ছবি আদান প্রদান করে যৌনতাড়ণা চরিতার্থ করতো সঞ্জয়। প্রাথমিক তদন্তের পরে এমনটাই জানতে পেরেছে সিবিআই।
নির্যাতিতার ডিএনএ সঞ্জয়ের দাঁতে ও নখেআরজিকরের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকে যেভাবে বিভিন্ন মহল থেকে এবং রাজনৈতিক কিছু কুৎসাকারী যেভাবে দাবি করে আসছিলেন নির্যাতিতাকে নাকি গণধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে অথবা হত্যার পরে গণধর্ষণ করা হয়েছে - সেই সমস্ত তথ্য যে সম্পূর্ণ ভ্রান্ত তাঁর প্রাথমিক প্রমাণ ইতি মধ্যেই হাতে এসেছে সিবিআই এর। ধর্ষণের আগে নির্যাতিতার সঙ্গে উপরে যখন সে বলপ্রয়োগ করার চেষ্টা করে তখন নির্যাতিতার শরীরে তার দাঁত এবং নখের যে সমস্ত ক্ষত চিহ্ন তৈরি হয়েছিল তার সূত্রেই সঞ্জয়ের দাঁত এবং নখের ফাঁকে ঢুকে গিয়েছিল নির্যাতিতার শরীরের ডিএনএ স্যাম্পেল। সঞ্জয়ের মেডিকেল পরীক্ষার পরে নির্যাতিতার শরীরের ডিএনএ স্যাম্পল তার শরীরে পাওয়ার পরেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সিবিআই এর গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন এটি গণধর্ষণের ঘটনা নয়, ধর্ষণ যদি আদৌ হয়ে থাকে তা করেছিল সঞ্জয় একাই।
যৌন সঙ্গী খুঁজে না পেয়েই ধর্ষণ সঞ্জয়েরঘটনার রাতে সঞ্জয় কেন আরজিকরের নির্যাতিতাকে ধর্ষণ করল তার উত্তর খুঁজতে গিয়ে সিবিআই গত কয়েকদিনে তার গতিবিধি সম্পর্কে যে সমস্ত তথ্য পেয়েছে তার রীতিমতো চমকপ্রদ। সেইসঙ্গে তার ধর্ষকাম বা অ্যানিম্যাল ইনস্টিংক্টের প্রমাণ দিচ্ছে সেই রাতের গতিবিধি। ঘটনার পর থেকেই সঞ্জয় সম্পর্কে যে সব তথ্য সামনে এসেছে, ঘটনার রাতে তার যা যা কাজকর্মের কথা জানা গেছে, তাতে এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই, যে সে সুস্থ মানসিকতার অধিকারী নয়। জানা গেছে ঘটনার রাতে একটি নয়, পরপর দু'টি যৌনপল্লিতে গিয়েছিল সঞ্জয় রায়। দু'জায়গাতেই ঝামেলা করার পরে আরজি কর হাসপাতালে ঢোকে সে। সঞ্জয়ের ফোন ঘেঁটে পাওয়া গেছে, ওই রাতে সে বারবার এক মহিলাকে ভিডিও কল করছিল, যিনি তা কেটে দিচ্ছিলেন। উত্তর কলকাতার সেই চ্যাট ফ্রেন্ড একেবারেই রাজি হচ্ছিলেন না মজা করার জন্য বা নগ্ন ছবি পাঠানোর জন্য। এতেই আরও খেপে যায় সঞ্জয়। তার পরে যায় আরজি কর। সিসিটিভি ফুটেজে ইতিমধ্যেই দেখা গেছে, ভোর ৩-৪৫ নাগাদ সঞ্জয় রায় থার্ড ফ্লোরের করিডোর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে খুব স্বাভাবিক ভাবে। তখন তার গলায় ইয়ারফোন ঝুলতে দেখা যায়। এর পরে প্রায় ৩০-৪০ মিনিট তাকে দেখা যায়নি। তার পরে ফের দেখা যায় করিডোরে। তখন আর তার গলায় ইয়ারফোনটি ছিল না। এই সূত্রেই পরে পুলিশ তাকে চিহ্নিত করে। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্তকারীরা মনে করছেন, ঘটনায় সঞ্জয়ের সঙ্গে আর কেউ জড়িত থাকলে ধর্ষণের ঘটনার বিবরণে অনেক ফাঁক থাকতো, যা সঞ্জয়ের বিবৃতিতে মেলেনি।
সোশ্যাল মিডিয়ার গুজব সুপ্রিম কোর্টে আনবেন নাএটা সুপ্রিম কোর্ট। এখানে যুক্তি দিয়ে অথবা আইন দিয়ে তথ্য প্রমাণ সহ আলোচনা করুন। সোশ্যাল মিডিয়ায় কোথায় কি বেরিয়েছে বাকি গুজব ছড়ানো হয়েছে সেইসব প্রসঙ্গ তুলে সুপ্রিম কোর্টের সময় নষ্ট করবেন না। আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নির্যাতিতার যৌনাঙ্গে ১৫০ গ্রাম বীর্য পাওয়ার এসব গাঁজাখুরি গল্প অন্য জায়গায় করবেন। এভাবেই আজ আর জি কর মামলার শুনানিতে ভাজপা সমর্থিত এক আইনজীবীকে তীব্র ভর্ৎসনা করে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্রচারকে যে সমস্ত আইনজীবী আদালতে নিয়ে আসেন তাদের উদ্দেশ্যে করা হুঁশিয়ারি দিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।
প্রসঙ্গত আরজিকরের নির্যাতিতার পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে বলা হয়েছে, চিকিৎসকের এন্ডোসার্ভাইকাল ক্যানেলে গাঢ় সাদা তরল পাওয়া গিয়েছে, চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে বলা যেতে পারে, হোয়াইট থিক ভিসিড লিক্যুইড। যার ওজন হতে পারে ১৫১ গ্রাম। কিন্তু তার মধ্যে বীর্যের পরিমাণ ছিল বড়জোর ০.১৫ মিলিগ্রাম।