৩৬৫ দিন। নবান্ন অভিযানের নামে যারা পরিকল্পিতভাবে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নষ্ট করার চেষ্টা করেছে এবং পুলিশকে আক্রমণ করেছে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত, তারা যেই হোক না কেন প্রত্যেককে খুঁজে বের করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবেই। দিনভর নবান্ন অভিযানের নামে ভাজপা, আরএসএস ও সিপিএমের গুন্ডামির পরে এভাবেই কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন রাজ্যের এডিজি আইনশৃঙ্খলা মনোজ ভার্মা। এদিনের নবান্ন অভিযানে প্রাণনাশের আশঙ্কাও ছিল বলে এদিন রাজ্যের এডিজি সাউথ বেঙ্গল সুপ্রতিম সরকার বলেন, অস্ত্র, বোমা, গুলি নিয়ে আসার পরিকল্পনা ছিল। সেটা আমরা প্রতিহত করতে পেরেছি। আমরা যদি ২৫ জনকে গ্রেফতার না করতাম, তাহলে পরিস্থিতি আরও বেশি ভয়াবহ হতে পারতো। মানুষের প্রাণহানিও হতে পারত। আজ নবান্ন অভিযানের আহ্বান জানিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ। সে প্রসঙ্গে এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার বলেন, পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের নামে আন্দোলন। বাংলার প্রকৃত ছাত্র সমাজ এই ধরনের অসভ্যতা করবে বলে আমাদের মনে হয় না। পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের নামে নেপথ্যে কোন শক্তির মদত ছিল? তিন ঘন্টা ধরে লাগাতার তাণ্ডব চলেছে। পুলিশকে মারধর করে জনজীবন স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করেছে।
রাজ্যজুড়ে ব্যাপক ধরপাকড়আজ সন্ধ্যায় নবান্নে রাজ্য পুলিশের এডিজি আইনশৃঙ্খলা মনোজ ভার্মা, এডিজি সাউথ বেঙ্গল সুপ্রতিম সরকার এবং কলকাতা পুলিশের ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় প্রেস কনফারেন্স করে জানান, আজ সারাদিনে নবান্ন অভিযানের নামে কলকাতা এবং হাওড়া জুড়ে গুন্ডামি করার অভিযোগে কলকাতা পুলিশ মোট ১২৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের মধ্যে ১০৩ জন পুরুষ এবং ২৩ জন মহিলা রয়েছেন। রাজ্য পুলিশের হাতে ধৃতের সংখ্যা ৯৪। পাশাপাশি নবান্ন অভিযানে ১৫ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন বলে তথ্য দেন সুপ্রতিম। তিনি আরও জানান, হাওড়া স্টেশন থেকে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই আন্দোলনের নেপথ্যে যে চক্রান্ত করা হয়েছিল, সে সম্পর্কে তাঁদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে বলে জানান তিনি। এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার বলেন, এঁরা লাশ ফেলা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তার অকাট্য প্রমাণ রয়েছে। নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে আগ্নেয়াস্ত্র সমেত আজকের অভিযান শুরুর আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে ওই অভিযুক্তদের। লাশ ফেলে দেওয়ার কথা ঘুরছিল বিভিন্ন হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে। গতকাল রাতেই আমরা ২৫ জনকে চিহ্নিত করে আগেই গ্রেফতার না করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নিত।
শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নামে গুন্ডামিএডিজি সাউথ বেঙ্গল সুপ্রতিম সরকার বলেন, নবান্ন অভিযানের জন্য পুলিশের কাছ থেকে কোন অনুমতি না নেওয়ায় এবং নবান্ন সম্পূর্ণ সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় এই অভিযানকে আগেই বেআইনি বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই অভিযানের উদ্যোক্তারা গতকাল প্রেস কনফারেন্স করে দাবি করেছিলেন তারা নাকি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবেন। কিন্তু আন্দোলন কতটা শান্তিপূর্ণ থাকল সেটা দেখলেন সবাই। আন্দোলনকারীরা এলেন। তার পর ব্যারিকেড ধরে ঝাঁকানো শুরু হল। পুলিশ বার বার ঘোষণা করে, ওটা সংরক্ষিত এলাকা। প্ররোচনায় পা দেবেন না। তার পরেও ব্যারিকেড ভাঙা হল! বোতল, ইট ছোড়া হল পুলিশের দিকে। সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করা হল। গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হল। পুলিশকে রক্তাক্ত করা হয়েছে, গাড়ি ভাঙচুর করেছে। তাণ্ডব বললেও এটা কম বলা হবে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নামে অশান্তিপূর্ণ আন্দোলন হয়েছে। রক্তাক্ত হয়েও পুলিশ ধৈর্য্য হারায়নি। ৯৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা ফুটেজ দেখে বাকিদেরও চিহ্নিত করব। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাংলার ছাত্রসমাজের আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা, তাণ্ডব দেখলাম আমরা। সম্পূর্ণ বিনা প্ররোচনায় অশান্তি চলল পূর্ণ কর্মদিবস ছিল আজ। মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু পদক্ষেপ করতেই হতো। কারণ প্রচুর মানুষ কাজে বেরিয়েছিলেন, আজ কর্মব্যস্ত দিন ছিল। কিন্তু চেষ্টা হচ্ছিল, পুলিশকে প্ররোচিত করার, যাতে পুলিশ এমন কিছু করে ফেলে, তাতে সুবিধা হয় আন্দোলনকারীদের। পুলিশ সেই ফাঁদে পা দেয়নি। শান্তি এবং নিরাপত্তার খাতিরে যতটুকু প্রয়োজন পড়েছে, ততটুকু করেছে। পুলিশ রক্তাক্ত হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছে। তার পরও ধৈর্য ও সংযম দেখিয়েছে।
পেট্রোল বোমা নিয়ে আক্রমণ পুলিশকেনবান্ন অভিযানের নামে আজ পেট্রোল বোমা এবং অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পুলিশকে আক্রমণের ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল বলে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন কলকাতা পুলিশের ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়। ইন্দিরা জানান, আজ হাওড়া ব্রিজ এবং কলেজ স্ট্রিটের মধ্যবর্তী জায়গায় শান্তিপূর্ণ মিছিলের নামে পেট্রোল বোমা এবং অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এসেছিল বেশ কিছু দুষ্কৃতি। বাধ্য হয়ে আমাদের টিয়ার গ্যাস ছুঁড়তে হয়। এই সমস্ত দুষ্কৃতিদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে আমরা গ্রেফতার করেছি। বাকিদের ছবি দেখে চিহ্নিত করণ করা হচ্ছে।