বিরোধীদের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও
৩৬৫ দিন। ১ জুলাই থেকে দেশজুড়ে চালু হচ্ছে নতুন আইন। ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা ভারতীয় দণ্ডবিধি থেকে শুরু করে ভারতীয় সাক্ষ্য আইন এবং ভারতীয় ফৌজদারি আইন ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন তিন ধরনের আইন প্রবর্তন করতে চলেছে কেন্দ্রের মোদি সরকার। দেশের পুলিশ কর্মীরা জানেন না কোন আইনে দায়ের হবে কোন অভিযোগের মামলা। সুপ্রিমকোর্ট থেকে শুরু করে হাইকোর্ট অথবা নিম্ন আদালত গুলির বিচারপতিদের কাছেও স্পষ্ট নয় কোন ধারায় কোন মামলা অথবা সেই মামলায় কি ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে নতুন আইনে। তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরে নড়বড়ে ভাবে সরকার গঠন করলেও দেশের সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলের তীব্র আপত্তি অগ্রাহ্য করে রাতারাতি এই তিন আইন চালু করতে চলেছে মোদি সরকার। যাকে নির্মম এবং অসাংবিধানিক বা ড্র্যাকোনিয়ান বলে তীব্র বিরোধিতার কথা ঘোষণা করেছে তৃণমূল সহ ইন্ডিয়া জোটের সমস্ত শরিক রাজনৈতিক দল।
কি রয়েছে নতুন তিন আইনে১৮৬০ সালে তৈরি ইন্ডিয়ান পেনাল কোড (ভারতীয় দণ্ডবিধি)-র পরিবর্তে হয়েছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা। ১৮৯৮ সালের 'ক্রিমিনাল প্রসিডিওর অ্যাক্ট' (ফৌজদারি দণ্ডবিধি)-র নতুন রূপ ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং ১৮৭২ সালের ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট (ভারতীয় সাক্ষ্য আইন)-এর বদলে কার্যকর হচ্ছে ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম। নতুন আইনে কী কী অপরাধ এবং তার শাস্তি হিসাবে কী বলা হয়েছে তা নিয়ে ধন্দে আছেন অনেকেই। জানা গিয়েছে, ন্যায় সংহিতায় নতুন ২০টি অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে। আর ভারতীয় দণ্ডবিধিতে থাকা ১৯টি বিধান বাদ পড়েছে ন্যায় সংহিতায়। একই সঙ্গে ৩৩টি অপরাধের জন্য কারাদণ্ডের সাজার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ৮৩টি অপরাধের জন্য জরিমানার পরিমাণও আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার ২৩টি এমন অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে একটি বাধ্যতামূলক সর্বনিম্ন শাস্তির কথা বলা রয়েছে ন্যায় সংহিতায়।
তীব্র বিরোধিতা তৃণমূল সহ ইন্ডিয়া জোটেরতৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও'ব্রায়েন এই আইনকে নির্মম এবং অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে বলেন, এর আগে প্রস্তাবিত তিন আইনের বিভিন্ন অংশে আপত্তি জানিয়েছিলেন তিনি এবং দলের লোকসভার সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার। কংগ্রেসের তরফে আপত্তি জানিয়েছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম। আর এক বিরোধী দল ডিএমকে-র তরফে আপত্তি জানিয়েছিলেন এনআর এলানগো এবং দয়ানিধি মারান। বিরোধীদের তরফে সংসদীয় কমিটিতেও যে এই তিন আইনের বিরোধিতা করা হয়েছিল, সে কথা স্মরণ করিয়ে দেন ডেরেক।
কেন বিরোধিতা এই আইনেরবৃহত্তর স্বার্থে কোনও ব্যক্তিকে পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতার করা যাবে। পুলিশকে কোনও অপরাধের তদন্তের স্বার্থে আরও বেশি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তবে তদন্ত শেষ করার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়ার কথাও রয়েছে নতুন আইনে। বিচার প্রক্রিয়ায় গতি আনতে মামলা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করার বিষয়ও উল্লেখ রয়েছে। কয়েকদিন আগেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রীও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে চিঠি দিয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব করবে নয়া এই আইন। তাই অবিলম্বে দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি বিশিষ্ট আইনজীবী এবং বিচারপতিদের সঙ্গে আলোচনা করেই নতুন আইন দেশে প্রবর্তন করা উচিত। বিরোধীদের যত আপত্তি দেশদ্রোহিতা সংক্রান্ত বিধি নিয়ে। প্রসঙ্গত, আইপিসি-র ১২৪(ক) ধারাটিতে দেশদ্রোহিতা নামক অপরাধটি এ বারের ন্যায় সংহিতায় ১৫২ ধারাতে রয়েছে। তবে ওই শব্দটি বাদ দিয়ে প্রায় একই ভাষায় দেশের সার্বভৌমতা ও ঐক্যর যে কোনও বিরোধিতার ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তিদানের কথা রয়েছে। বিরোধীরা মনে করছে, দেশের নাগরিক এত গভীরে বিষয়টি বুঝতে পারবেন না। সেই আবহে গত দশ বছরে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে সেই মতোই, সমালোচনা কিংবা বিরোধিতা করলে দমনমূলক পদক্ষেপ করতে পারবে। অপরাধ এবং সন্ত্রাস দমনে যে নতুন ধারাগুলি যুক্ত হয়েছে, সেগুলিতেও সরাসরি অধিকার খর্ব করা হয়েছে বলে দাবি বিরোধীদের। নতুন আইন কার্যকর হতে চলার আগে আজ সেই বিরোধিতার কথা স্মরণ করিয়েছেন রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও'ব্রায়েন।
কালা দিবস পালন করবে বার কাউন্সিলএর বিরোধিতায় আগামীকাল অর্থাৎ সোমবার রাজ্যজুড়ে কালা দিবস পালনের ডাক দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বার কাউন্সিল। বার কাউন্সিল এর পক্ষ থেকে বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রের নতুন তিন আইন ভারতীয় ন্যায় সংহিতা ২০২৩, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ২০২৩ ও ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম ২০২৩ পুরোপুরি অগণতান্ত্রিক এবং নাগরিক-বিরোধী। তাই ওই তিন আইনের বিরোধিতায় ১ জুলাই রাজ্যের সমস্ত আদালতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে। দিনটিকে কালা দিবস হিসেবে পালন করবে কাউন্সিল। তাই আইনজীবীদের ওই দিন আদালতে বিচার প্রক্রিয়ায় যোগদানে বিরত থাকতে বলেছে কাউন্সিল।