৩৬৫ দিন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আরজিকর হাসপাতালের ডাক্তারি ছাত্রীকে যৌন-নিগ্রহ করে হত্যার ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশ। গতকাল সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ আরজি করের ডাক্তারি পড়ুয়া ছাত্রের মৃতদেহ উদ্ধারের পরেই রীতিমতো যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তদন্তে নেমেছিল কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা দপ্তর। হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসক ও ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ছোট্ট একটি ক্লু থেকেই মূল অভিযুক্ত সঞ্জয়কে গ্রেফতার করে পুলিশ।
কোন ক্লু ধরে সাফল্যপুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত ২.৩০ থেকে ৩টে নাগাদ দোতলা , তিনতলার করিডরের সিসিটিভি-তে দেখা গেছে সঞ্জয় রায়কে। চেস্ট বিভাগের কাছের সিসিটিভিতেও দেখা যায়। সেখানে আর কারও গতিবিধির ছবি পাওয়া যায়নি। সিসিটিভি-র ছবি হাসপাতালের নার্স ও অন্যান্য কর্মীদের দেখানো হয়। তাঁরা সঞ্জয় রায়কে চিনতে পারে। অন্যদিকে মৃতদেহের পাশ থেকে ব্লুটুথ হেডফোনের ছেঁড়া তার তথ্য হিসেবে হাতে উঠে আসে পুলিশের। সিসিটিভি ফুটেজে পুলিশ দেখে আরজি কর হাসপাতালে ঢোকার সময় ধৃত সঞ্জয়ের গলায় ছিল ওই ব্লুটুথ হেডফোন। কিন্তু হাসপাতাল থেকে বেরনোর সময় ওই হেডফোন তাঁর গলায় নেই। বরং চারতলার সেমিনার রুমে পড়েছিল একটি ব্লু-টুথ হেডফোনের ছেঁড়া তারের অংশ। তদন্তে নেমে দেখা যায় সেটি কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের।
কি জানিয়েছেন সিপিআজ আর জি করের ঘটনায় গ্রেপ্তারের বিষয়টি সরকারিভাবে নিশ্চিত করে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল বলেন, গতকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ টালা থানায় খবর আসে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ এবং হোমিসাইড পৌঁছয়। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সাক্ষী এবং বাবা মায়ের উপস্থিতিতে ইনকুয়েস্ট করা হয়। তারপর ময়না তদন্ত করা হয়, ভিডিয়োগ্রাফি করা করা হয়েছে। গতকাল রাতভর তদন্ত হয়েছে। তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা একজনকে গ্রেফতারও করেছি। তদন্ত চলছে। যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে আদালতে পেশ করা হয়েছে। আমরা এই ঘটনায় দুঃখিত। তবে ইতিমধ্যেই আরজিকরের ডাক্তার এবং ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে যেভাবে নিরপেক্ষ কোন এজেন্সিকে দিয়ে তদন্তের দাবি উঠেছে, তার বিন্দুমাত্র বিরোধিতা না করেই কলকাতার সিপি বলেন, যদিও ওদের কোনও দাবি থাকে, পরিবার চাইলে তারা অন্য কোনও এজেন্সি দিয়ে তদন্ত করাতে পারে। আমাদের তরফে কোনও আপত্তি নেই। দোষী সর্বোচ্চ অপরাধী। আমরা দেখব যাতে সর্বোচ্চ শাস্তি হয়। সেইসঙ্গে কিছু রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে যেভাবে অভিযোগ তোলা হয়েছে নিহত ছাত্রীর দেহ হাসপাতাল চত্বর থেকে বের করার সময় তার পরিবারকে কিছু জানানো হয়নি বলে তার সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়ে পুলিশ কমিশনার জানান, আপনারা সকলে দেখেছেন পরিবার সেখানে ছিল। ইনকুয়েস্ট থেকে শুরু করে ডাক্তার, জুনিয়র ডাক্তার, পিজি স্টুডেন্ট, পরিবার সকলে ছিল। অন্যদিকে পুলিশ কমিশনারের পাশাপাশি কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলীধর জানান, প্রাথমিক তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও খুনের মামলা শুরু হয়েছে। অন্যদিকে আরজিকরের ঘটনায় ধৃত মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় পেশায় সিভিক ভলেন্টিয়ার বলে যে অভিযোগ উঠেছে তার প্রেক্ষিতে পুলিশ কমিশনার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, আমাদের চোখে উনি একজন অপরাধী। যাই হোন তিনি একজন অপরাধী। ঘৃণ্য অপরাধে যুক্ত তিনি। সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। জিজ্ঞাসাবাদ এবং পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে ধৃত অভিযুক্ত ঘটনার রাতে আরজিকর হাসপাতাল চত্বরেই ছিল।
কঠোর শাস্তির দাবি মুখ্যমন্ত্রীরআরজি করের ঘটনা প্রসঙ্গে মমতা বলেন, আরজি কর হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকের মৃত্যু ন্যক্কারজনক এবং অমানবিক। আমার মনে হচ্ছে, যেন নিজের পরিবারের কাউকে হারিয়ে ফেলেছি। এই ঘটনাকে কখনওই সমর্থন করা যায় না। জুনিয়র চিকিৎসকেরা যে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তা সঙ্গত বলেই আমি মনে করি। আমি ওদের দাবির সঙ্গে একমত। আমি কাল ঝাড়গ্রামে ছিলাম। রাস্তা থেকে খবর নিচ্ছিলাম। মেয়েটির বাবা এবং মায়ের সঙ্গেও আমি কথা বলেছি। আমি আমার প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি, দোষীদের চিহ্নিত করে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে ফাস্টট্র্যাক আদালতে এই মামলা তুলতে এবং প্রয়োজনে ফাঁসির আবেদন জানাতে। এই অপরাধের কোনও ক্ষমা নেই। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ফাঁসির বিরোধী। কিন্তু কিছু কিছু ঘটনায় এই ধরনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রয়োজন আছে। যাতে আর কেউ ভবিষ্যতে এর সাহস না পায়। হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, সেই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ডাক্তারদের গায়ে যাতে কেউ হাত না দেয়, তার জন্য আমরা প্রত্যেক হাসপাতালে পুলিশ ক্যাম্প করেছি। আমরা যেমন দেখব, হাসপাতালের সুপার, প্রিন্সিপ্যালদেরও নিরাপত্তার বিষয়টা দেখতে হবে। তাদের দিক থেকে কোনও গাফিলতি ছিল না,সেটা আমরা তলিয়ে দেখব। হাসপাতালে সিসিটিভি আছে। বুঝতে পারছি না এত সাহস হল কী করে। যাকে ধরা হয়েছে, তার ওখানে যাতায়াত ছিল। যারা বিভিন্ন কাজে যাতায়াত করে তাদের মধ্য়েই কেউ করেছে। দরকার হলে পুলিশ কমিশনারকে আবারও পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্য সরকারের প্রতি আস্থা না থাকলে, যে কোনও এজেন্সির কাছে তদন্তের জন্য যাওয়া যেতে পারে। এমনটাই বলেছেন মমতা। সিবিআই তদন্ত হলেও কোনও আপত্তি নেই তাঁর। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সিবিআই তদন্তেও আপত্তি নেই, কারণ আমাদের কোনও কিছু লুকনোর নেই। আমরা চাই সঠিক তদন্ত হোক।