৩৬৫ দিন। ঢাকা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে দিয়ে নয়, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের ইতিহাসকে সঙ্গে নিয়েই নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মন্ডলী। আজ বৃষ্টিভেজা সকালে সাভারে বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্ত অবক্ষ ক দিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা অর্পণ করলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মন্ডলীর প্রধান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.মহম্মদ ইউনুস। ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের নবগঠিত যে উপদেষ্টা মন্ডলী গতকাল রাতে শপথ গ্রহণ করেছেন, তাদের নেতৃত্বে নাকি বাংলাদেশে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মুছে ফেলা হবে বলে দাবি করা হচ্ছিল দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। দাবি করা হচ্ছিল ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ পশ্চিম পাকিস্তানের কমল মুক্ত হয়ে যে স্বাধীনতা লাভ করেছিল তাকে অস্বীকার করে শেখ হাসিনার পলায়নের দিনটিকেই নাকি বাংলাদেশের নতুন স্বাধীনতা দিবস হিসেবে মান্যতা দেওয়া হবে। এমনকি এমনও অভিযোগ করা হচ্ছিল নাকি পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে চলবে মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টামন্ডলী। যার ফলে বাংলাদেশ থেকে নাকি আবার লক্ষ লক্ষ হিন্দু নাগরিককে বিতাড়ন করা হবে! কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতের শপথ গ্রহণের পরে ১২ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই আজ সকালে সাভারে বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক সহ শ্রদ্ধা জানিয়ে নতুন বাংলাদেশ গঠনের যে স্বপ্ন ইউনুস দেখালেন সেখানে নেই মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকারের কোন প্রচেষ্টা অথবা বাংলাদেশ থেকে হিন্দু বা সংখ্যালঘু বিতাড়ন অথবা পাকিস্তানের অঙ্গুলি হেলনে দেশ চালানোর কোন পরিকল্পনা।
গতকাল রাতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান হিসেবে শপথ গ্রহণের পরে আজ সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটের দিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনুস। তার সঙ্গে ছিলেন অন্য উপদেষ্টারাও। সাভারে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে তৈরি হওয়া স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের ঠিক আগেই নামে বৃষ্টি। বৃষ্টির মধ্যেই শ্রদ্ধা জানান ড. ইউনূস। তাঁর পরেই আরও ১৩ জন উপদেষ্টা শ্রদ্ধা জানান। বৃষ্টিতে ভিজেই তাঁরা শ্রদ্ধা জানান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এ সময় ছাতা নিয়ে আসেন। কিন্তু তাদের নিষেধ করেন ইউনুস। শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে সাভার থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা আবার ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।
শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের পতনের জন্য বাংলাদেশের ছাত্র যুব সমাজকে আন্দোলনে নেমেছিল তার সফল রূপায়ণের জন্য সমস্ত রকম প্রচেষ্টা চালাবেন বলে দেশের ছাত্র যুব সমাজের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস। আর সেই কারণেই দেশের অন্তর্ভুক্তির সরকারের যে উপদেষ্টামন্ডলী তার নেতৃত্বে তৈরি হয়েছে সেখানে রয়েছে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞ আন্দোলনকারী ছাত্র যুবদের প্রতিনিধিরাও।প্রসঙ্গত, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নতুন সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত হয়েছেন, যা দেশের ইতিহাসে প্রথম। দেশ চালানোর ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞ ছাত্র যুবরা উপদেষ্টা হিসেবে কিভাবে কাজ করবেন সেই প্রশ্নের উত্তরে গতকালই ইউনুস জানিয়েছিলেন, যে বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন বিজয় দিবস সৃষ্টি করল তরুণেরা সেটাকে সামনে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। যারা এটা সম্ভব করেছে, যে তরুণ সমাজ এটা করেছে; তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তারা বাংলাদেশকে রক্ষা করেছে। নতুন করে পুনর্জন্ম দিয়েছে দেশ কে।
রংপুরে আবু সাঈদের বাড়িতে যাবেন ইউনূসগতকাল রাতে শপথ গ্রহণের পরেই ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ড. ইউনূস বলেন, আজকের এই দিনে প্রথমেই আবু সাঈদকে স্মরণ করতে চাই। তার সেই ছবি সবার মনে গেঁথে আছে। কী অবিশ্বাস্য একটা সাহসী যুবক বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে এবং তার পর থেকে আর কোনো যুবক, কোনো যুবতী হার মানেনি। সামনে এগিয়ে গেছে এবং বলেছে, যত গুলি মারো, মারতে পারো। আমরা আছি। আগামীকাল সকালেই রংপুরে এবারের কোটা আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের বাড়িতে যাবেন বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদ ইউনূস।