শিলিগুড়ি। পাহাড়ে লাগাতার অতি ভারী বৃষ্টিতে রুদ্ররূপে তিস্তার কবলে জাতীয় সড়ক।১৫দিন ধরে বিপর্যস্ত জাতীয় সড়ক একই দশায়। তিস্তার গ্রাসে কালিম্পঙ জেলার সেলফিদাঁড়া। দার্জিলিং এর মাঝে সংযোগকারী পেশক পকেট রুটের মুখ্য রাস্তা তিস্তার গ্রাসে তলিয়ে গিয়েছে। জলের তলে জাতীয় সড়কের বড় অংশ।কালিম্পঙ একাধিক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গিয়েছে।জেলা প্রশাসনের তৎপরতায় সরকারি ভবনে নিরাপদ আশ্রয়ে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। যোগযোগ বিচ্ছিন্ন,সহায় সম্বল নিঃস্ব হয়ে নিদ্রাহীন রাত কাটাচ্ছেন তিস্তা বাজার, সেতিঝোড়ার কয়েকশো পরিবার।
আর্থিকভাবে সম্পন্ন মানুষেরা সমতল ভাগে নেমে আসছে। লাগাতার ভারী বৃষ্টিপাতের ধসের মুখে বেহাল পাহাড়, বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের সমতল ভাগও। কার্শিয়াংয়ে বর্ষার মরশুমে নতুন করে নির্মাণ কাজে হাত না দেওয়ার ঘোষণা কার্শিয়াং পুরসভার বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের।সেতিঝোড়া থেকে ছিত্রে ১৯মাইল জাতীয় সড়কের ধসে টানা ১৫দিন ধরে শিলিগুড়ি তথা, সমতল থেকে সরাসরি পাহাড়ে যোগাযোগী একমাত্র রাস্তা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কালিম্পিঙ জেলার রাবিঝরা থেকে তিস্তা বাজার সম্পূর্ণ রুদ্ররূপী তিস্তার গ্রাসে। শিলিগুড়ি ও কালিম্পিঙ- এর মাঝে পংবু রোড এখনও পর্যন্ত খোলা সম্ভব হয়নি। রংপুর থেকে লাভা হয়ে মংপো পর্যন্ত বিকল্প রাস্তা খোলা রয়েছে।জাতীয় সড়ক ৭১৭এ অস্থায়ী রূপে বন্ধ। এদিকে বিপর্যস্ত সমতল ভাগও। রাজ্যের পূর্ত দফতরে রক্ষণাবেক্ষনে থাকা ন্যাশনাল হাইওয়ে ডিভিশন রংপো থেকে ৫২ কিলোমিটার পর্যন্ত অংশে ধসে রাস্তার ২০-৩০টি এলাকা ক্ষত তৈরি হয়েছে।ধাক্কা হিল কুইন দার্জিলিংয়েও। একাধিক জায়গায় ধসে বিধ্বস্ত পরিস্থিতি। পাহাড়ে টানা ভারী বৃষ্টিপাতের কারনে দার্জিলিঙ ও কালিম্পঙ জেলায় পরপর ধসে বিপর্যস্ত।ইতিমধ্যেই জি টি এর তরফে বর্ষা শেষ হলেই রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতির জন্য কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ১৭টি নতুন প্রকল্প নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সংস্কারে নাম বে
জিটিএ। দার্জিলিং জেলার লেবঙ কার্ট রোড জেলাশাসক দপ্তরের সামনের অংশে ধস নামে। রাস্তার ওপর দার্জিলিং ষ্টেশনের সামনে ধসে গিয়েছে। ১২নাম্বার ওয়ার্ডে ধস নামে রাস্তার ওপর দার্জিলিং স্টেশনের সংলগ্ন এলাকায়। পাথরের চাই নেমে আসে। সুখিয়া মুখী যাওয়ার রাস্তায় ধস নামে। তাগদা লোয়ার হোম বস্তিতে ধসের জেরে বাড়ি বিপর্যস্ত। দার্জিলিং সদরের ১৭নাম্বার ওয়ার্ডে একটি বাড়ি ধস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে বাড়িতে থাকা পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। দার্জিলিং পুরসভার তরফে শুকনো খাবার ও ত্রান তহবিল তুলে দেওয়া হয়েছে। সেখানে চারজন সদস্য রয়েছেন। দার্জিলিং পুলবাজার দাওয়াইপানিতে ধস পড়ে রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে। যার জেরে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। দার্জিলিং পুরসভা ও জেলা প্রশাসনের তরফে ধসে বিপর্যস্ত এলাকায় ত্রাণ বিলি করা হয়েছে। কার্শিয়াং-এ ধসে ক্ষতিগ্রস্ত চারটে বাড়ি। পাহাড়ের উঁচু অংশ থেকে পাথরের চাই নেমে পড়ে ওই চারটি বাড়িতে। যার জেরে বাড়ি গুলি ধসের জেরে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তবে হতাহতের কোনো খবর না থাকায় কিছুটা স্বস্তি। ওই চারটি পরিবারকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
দার্জিলিং ও কার্শিয়াংয়ে একাধিক হোটেলের সামনের অংশে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে জল জমায়েত হয়ে পড়েছে। কার্শিয়াঙ পাহাড়ে জলমগ্ন পরিস্থিতিতে চারটে বাড়ি ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরেই কার্শিয়াং বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর সুভাষ প্রধান জানান নতুন করে নির্মাণ কাজে ওপর নিয়ন্ত্রণ টানার ঘোষনা করেছেন। তিনি শহরবাসীর কাছে বর্ষার এই সময়টা কোনভাবেই নতুন করে নির্মাণ কাজে হাত না দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। কারন বৃষ্টির জলে বিভিন্ন জায়গায় নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখা হয়। এতে নালা ও জোড়ার মুখগুলি আটকে যাওয়ায় ধসের প্রবণতা বাড়ছে। এদিকে কালিম্পিঙ জেলার জাতীয় সড়ক বিরিক দাড়া সেলফি পয়েন্টের কাছে শুক্রবার ভোরে ধসের জেরে জাতীয় সড়কের বড় অংশ ক্ষয়ে তিস্তায় তলিয়ে গিয়েছে। শনিবার নতুন করে সেলফি দাঁড়ায় পাহাড় কেটে রাস্তা সম্প্রসারণ এর কাজ যে নেমে পড়েছে পূর্ত দপ্তর জেলা প্রশাসনের তরফে এমনটাই জানানো হয়েছে। তবে জাতীয় সড়কের নামে পর্যটন সংস্থার বেশ কিছু ছবি ঘিরে সংশয় তৈরি হয়েছে।পেশকের মুখ্য সড়ক তলিয়ে যাওয়ার ছবি সামনে এসেছে তা আদেও জাতীয় সড়ক নয় বলে জানিয়েছে কালিম্পঙ জেলা প্রশাসন। এদিকে শিলিগুড়ির অদূরে জলপাইগুড়ি জেলার অধীনে ডাবগ্রাম ফুলবাড়ী এলাকায় রুদ্ররুপী তিস্তা গোগ্রাসে গিলেছে নদী তীরবর্তী বনবস্তি লালটঙ-কে। একদিকে তিস্তা ও অন্যদিকে চমকডাঙি মাঝ বরাবর তিস্তা নদী বয়ে গিয়েছে দুটি ভাগে। লালটঙ এলাকা বনবস্তি বাড়ি ঘর ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে তিস্তার। নদীর গ্রাসে নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখে লালটং বনবস্তি। সেখানে থাকা প্রায় ৭৬টি পরিবারকে পার্শ্ববর্তী সরকারি স্কুলের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চমকডাঙি বিক্ষিপ্ত দ্বীপ সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে। ক্রমশ প্রতিটি মুহূর্তে তিস্তার আগ্রাসনে একটু একটু করে হয়ে যাচ্ছে নদী পার। ভাঙনের মুখে আতঙ্কে নিদ্রাহীন রাত্রি যাপন করছেন চমকডাঙির বাসিন্দারা। চমকডাঙি ও লালটঙ বনবস্তির ১০০০-১২০০ মানুষ গৃহহীন। সরকারি আশ্রয়ে ব্লক প্রশাসনের ত্রাণ সামগ্রী ও শুকনো খাবার ওষুধের ভরসাতেই কাটছে দিন। এদিকে টানা পাহাড় ও সমতলে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে মহানন্দা তীরবর্তী তড়িবাড়ি এলাকাতেও ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।