৭ দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে দ্বিতীয় চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর
৩৬৫ দিন। ধর্ষণ এবং ধর্ষণ করে হত্যার মতো ন্যক্কারজনক ঘৃণ্য অপরাধের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়ার সম্পন্ন করে কঠোরতম শাস্তির বিধান চালু করুক কেন্দ্রীয় সরকার। দেশজুড়ে অবিলম্বে এমন আইন প্রণয়নের ভীষণ প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে। এমন দাবি জানিয়ে সাত দিনের মধ্যে দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে চিঠি পাঠালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে মমতা প্রথমেই মনে করিয়ে দিয়েছেন এই একই দাবি তুলে গত ২২ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে চিঠি দিয়েছিলেন তিনি।
কি ছিল ২২ তারিখের চিঠিতেগত ২২ তারিখের সেই চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছিলেন, গোটা দেশ জুড়ে যেভাবে ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির ঘটছে তা নিয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিদিন দেশে গড়ে ৯০ জন মহিলার ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এতে দেশ ও সমাজের আত্মবিশ্বাস টলে যাচ্ছে। তাই এর অবসান ঘটানো জরুরি। এজন্য একটি কেন্দ্রীয় আইন প্রনয়ন করা উচিত। যাতে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়। এই সব ঘটনার শুনানির জন্য ফাস্ট ট্র্যাক আদালত গড়ে তোলা দরকার। যাতে ১৫ দিনের মধ্যে শুনানি শেষ করা যায়। মমতার অমত, উত্তর না দিয়ে বিষয়টিকে লঘু করে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
দায়সারা উত্তর কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর২২ তারিখের চিঠির উত্তর মোদি নিজে না দিয়ে যেভাবে কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রীর মাধ্যমে দিয়েছেন, তা অত্যন্ত দায়সারা গোছের বলে অভিযোগ তুলেছেন মমতা। মমতার চিঠির প্রসঙ্গ তুলে ধরে গত ২৬ তারিখে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবী মমতার চিঠির জবাব দিয়েছিলেন। সেখানে বলা হয়েছিল, মহিলা ও কন্যাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার ব্যর্থ। কেন্দ্রের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবী আরও বলেন, রাজ্যে বাকি পড়ে থাকা ১১ ফাস্ট ট্র্যাক বিশেষ আদালত গড়তে ব্যর্থ। যেখানে ৪৮৬০০ ধর্ষণ ও পকসো মামলা বকেয়া পড়ে আছে।
আজ কি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রীপ্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে মমতা লিখেছেন, ধর্ষণের ঘটনায় কেন্দ্রীয় আইন প্রণয়ন এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে গত ২২ আগস্ট আমার চিঠিটি ভুলে যাবেন না। এটি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। অথচ আপনার পক্ষ থেকে কোনও জবাব পাওয়া যায়নি। এরপরেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী রাজ্যে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট তৈরি নিয়ে বাংলার ব্যর্থতা নিয়ে যে সমস্ত অভিযোগ করেছিলেন, তা সম্পূর্ণ অবান্তর অজুহাত মাত্র বলে রীতিমতো তথ্য তুলে ধরে লিখেছেন মমতা। এই চিঠিতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের সংখ্যা তুলে ধরেছেন। কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রীর বক্তব্য যে ভিত্তিহীন, তার সপক্ষে মমতা লিখেছেন, আমি এই বিষয়ে কিছু উদ্যোগের কথাও উল্লেখ করব যা আমাদের রাজ্য ইতিমধ্যেই নিয়েছে যা উত্তরে উপেক্ষা করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ফাস্ট ট্র্যাক স্পেশাল কোর্ট সম্পর্কে, ১০ বিশেষ পকসো আদালত রাজ্য সরকার অনুমোদিত হয়েছে। এর পাশাপাশি, ৮৮ ফাস্ট ট্র্যাক এবং ৬২ পকসো মনোনীত আদালত রাজ্য সরকারের তহবিলে রাজ্য জুড়ে সম্পূর্ণ ভাবে কাজ করছে, মামলার পর্যবেক্ষণ এবং নিষ্পত্তি সম্পূর্ণভাবে আদালতের হাতে রয়েছে। এছাড়াও, হেল্পলাইন নম্বর ১১২ এবং ১০৯৮ রাজ্যে সন্তোষজনকভাবে কাজ করছে। এছাড়াও, জরুরি পরিস্থিতিতে ডায়াল ১০০ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বাকি কোর্টগুলি কেন চালু করা যায়নি তার কারণ জানিয়ে তিনি লিখেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা অনুসারে, শুধুমাত্র অবসরপ্রাপ্ত বিচার বিভাগীয় অফিসারদের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে প্রিসাইডিং অফিসার হিসাবে নিয়োগ করা যেতে পারে তবে মাননীয় হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণ করেছেন যে মামলাগুলির তীব্রতার পরিপ্রেক্ষিতে, স্থায়ী বিচার বিভাগীয় অফিসারদের নিয়োগ করা প্রয়োজন। এর জন্য ভারত সরকারের স্তরে পরীক্ষা এবং তারপরে উপযুক্ত পদক্ষেপের প্রয়োজন, যার জন্য আপনার হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।