৩৬৫ দিন। রাখিবন্ধন উৎসব। কথার মধ্যেই রয়েছে বন্ধন বা সম্পর্কের ছোঁয়া। বোন তাঁর ভাইকে এই রাখি পরিয়ে থাকে। তবে রাখি বন্ধন উৎসবের সঙ্গে বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। আর বাঙালির এই রাখি বন্ধনের প্রসঙ্গে উঠে আসবেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম। কারণ, বঙ্গভঙ্গ আইনে যখন ভাগ হচ্ছে দুই বাংলা, সেই অশান্ত মূহুর্তকে রাখি পরিয়ে সম্প্রীতির বন্ধনে বেঁধেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রতিবছরই রাজ্য সরকারের উদ্যোগে রাখিবন্ধন উৎসব পালন করা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এই দিনটিকে সংস্কৃতি দিবস হিসেবে পালন করা হয় রাজ্যজুড়ে।
নেতাজি ইন্ডোরে রাখিবন্ধন উৎসববাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতার উদ্যোগে এই দিনটিকে সম্প্রীতি দিবস হিসেবে গোটা রাজ্যে পালন করা হয়। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে সোমবার নেতাজি ইন্ডোরে সংস্কৃতি দিবস উপলক্ষে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করা হবে। এই অনুষ্ঠান সভাপতিত্ব করবেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। উপস্থিত থাকবেন সমাজের সকল স্তরের বিশিষ্টজনেরা। শুধু তাই নয় রাজ্যের ৩৪৫টি ব্লক, ১১৯টি পুরসভা এবং ৭টি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন, এছাড়াও কলকতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ড এবং জেলা সদর এবং জিটি রোড নিয়ে মোট ৬৩৯টি ইউনিটে সংস্কৃতি দিবস এর অন্যতম কর্মসূচি
শ্যুটিং ফ্লোরে রাখি উৎসব আরজিকরের নৃশংস ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজ্য সরকার। ১২ ঘণ্টার মধ্যে মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে বাংলার পুলিশ। এরপর আদালতের নির্দেশে বর্তমানে সিবিআই এই ঘটনায় তদন্ত করছে। এর সঙ্গে যুক্ত দোষীদের কঠোরতম শাস্তি অর্থাৎ ফাঁসির দাবি জানানো হয়েছে রাজ্য প্রশাসনের তরফে, যাতে এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে না ঘটে। 'রাত্তিরের সাথী' নামক এক ঐতিহাসিক প্রকল্প বাস্তবে রূপায়িত করার পথে রাজ্য প্রশাসন, যার ফলে কর্মস্থলে নারীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে ১০০ শতাংশ। এদিকে রাখিবন্ধনের উৎসবকে মাথায় রেখে ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ান এবং অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া তরফে শিল্পী এবং কলাকুশলী বোনদের সুরক্ষার নিশ্চিত করা হবে সোমবার রাখি বন্ধন উৎসবের দিন। ফেডারেশনের তরফে জানানো হয়েছে, কলকাতা সংলগ্ন প্রত্যেকটি স্টুডিওর প্রত্যেকটি শ্যুটিং ফ্লোরে রাখি বন্ধন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।আরও জানানো হয়েছে, ফেডারেশনের ওয়ার্কিং কমিটি ও এক্সিকিউটিভ কমিটির ৬১ জন সদস্য সকাল ১১টায় বিভিন্ন স্টুডিওর ফ্লোরে সারাদিনব্যাপী এই অনুষ্ঠান হবে। ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ
বিশ্বাস সহ সকল কলাকুশলীরা সোমবার রাখি বন্ধন উৎসবে অংশগ্রহণ করবেন।প্রসঙ্গত, ১৯০৫ সালের জুন মাস। লর্ড কার্জন তখন ভাইসরয়। সেইসময় তিনি বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব ঘোষণা করেন। ওই বছরেরই অগাস্ট মাসে বঙ্গভঙ্গ জন্য আইন পাশ হয়। জানানো হয়,এই আইন কার্যকরীর হবে ১৯০৫-এরই ১৬ অক্টোবর, বাংলায় ৩০ আশ্বিন। সেই সময়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতায় মানুষ সামিল হয়। ঠিক হয়, ওই দিন বাংলার মানুষ পরস্পরের হাতে বেঁধে দেবেন হলুদ সূতো বাঁধবেন। এই দিনকে মিলন দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই দিনটিকে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করার ডাক দেন। বাংলায় হিন্দু ও মুসলিমানদের মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌভ্রাতৃত্বকে ফুটিয়ে তুলতেই এই উদ্যোগ নেন রবীন্দ্রনাথ। বাংলায় মা মাটি মানুষের সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতার উদ্যোগে প্রতিবছর সৌভ্রাতৃত্বের এই রাখি বন্ধন উৎসব পালন করা হয়। রাজ্যজুড়ে রাখি বন্ধন উৎসব পালনের মধ্যে দিয়ে সম্প্রীতি ও মেলবন্ধনের যে বার্তা তুলে ধরে বাংলা তা আর অন্য কোন রাজ্যে দেখা যায় না। দেশের মধ্যে একমাত্র বাংলাই এমন রাজ্য যেখানে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান সহ অন্যান্য সকল ধর্মের মানুষকে নিয়ে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করা হয় রাজ্যজুড়ে।