৩৬৫ দিন। নেটফিলক্সে পরিচালক অনুভব সিনহার আইসি ৮১৪, কন্দহার হাইজ্যাক ছবিটি নিয়ে বিতর্ক এবার অন্য মাত্রা নিল। ছবিটি মূল ঘটনা থেকে বিচ্যুত এবং দেশের মর্যাদা রক্ষায় ব্যর্থ,একই সঙ্গে ভুল তথ্যে অতিরঞ্জিত এই অভিযোগে কেন্দ্র কড়া অবস্থান নিল। মূলত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে ওটিটি মাধ্যমের শীর্ষকর্তা মণিকা শেরগিল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের সেক্রেটারি সঞ্জয় জাজুর সঙ্গে দেখা করেন। দীর্ঘ ৪০ মিনিটের বৈঠক হয়। পরে এই বৈঠকে ডাকা হয় পরিচালক অনুভব এবং তার ক্রিয়েটিভ ও রিসার্চ ডাইরেক্টরকে। গতকাল থেকেই কেন্দ্র সরকারের আপত্তির জেরে ওটিটি মঞ্চের কর্তা আইসি এইট ওয়ান ফোর— দ্য কান্দাহার হাইজ্যাক ওয়েব সিরিজ়ের বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণে কিছু রদবদল করেছেন।১৯৯৯ সালে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান অপহরণকে কেন্দ্র করে তৈরি সিরিজ়টি গত সপ্তাহে ওটিটিতে মুক্তি পেয়েছে। এই সিরিজ়ে কয়েক জন অপহরণকারীর যে নাম ব্যবহার করা হয়েছে, তা নিয়ে আপত্তি উঠেছে।
স্বরাষ্ট্র দফতরের নির্দেশে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের তরফে ব্যখ্যা চাওয়া হয়। নেটফ্লিক্সের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়, ১৯৯৯ সালের কান্দাহার হাইজ্যাকের সঙ্গে যাঁরা অবগত নন, সেই দর্শকের কথা মাথায় রেখেই ডিসক্লেমারে অপহরণকারীদের আসল এবং ছদ্মনামও রাখা হয়েছে। ২০০০ সালের ৬ জানুয়ারি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের তরফে প্রকাশিত একটি বিবিৃতি অনুসারে বিমানটির পাঁচ জন অপহরণকারীই ছিলেন মুসলমান জঙ্গি । তারা বিনা বাধায় মিশন সফল করতে হিন্দু ছদ্মনাম ব্যবহার করেছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিল,পাঁচ জন অপহরণকারী একে অপরকেচিফ, ডক্টর, বার্গার,ভোলা,শঙ্কর বলে ডাকছিল।হ্যাইজ্যাকারদের নাম শঙ্কর, ভোল। এতেই তীব্র আপত্তি ওঠে দেশজুড়ে। কট্টর পাক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন লস্কর ই তৈবার মত জঙ্গি সংগঠনের সন্ত্রাসবাদীদের নাম কেন ভারতের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আরাধ্য দেবতার নামে রাখা হবে। এই অভিযোগে হ্যাশট্যাগ বয়কট নেটফ্লিস্ক প্রতিবাদ কিছুদিন আগেই শুরু হতে গিয়েছিল। কেন্দ্রের তরফ থেকে বলা হয়, যদিও বা জঙ্গিরা নিজেদের মিশনের স্বার্থে ওই হিন্দু কোড নামে একে অপরকে ডাকছিল,কিন্তু এত বছর পর ছবি নির্মাণ করতে গিয়ে,এটি ব্যবহার করার কোনও মানে নেই। অনায়াসে তাদের আসল নাম রাখা যেত। এই হিন্দু নাম ব্যবহার কোটি কোটি মানুষের কাছে ভুল বার্তা দেবে। এই প্রজন্মের যারা অতীতের ইতিহাস জানে না,তারা ভুল বুঝবে। একই সঙ্গে কোটি কোটি হিন্দুর ভাবাবেগে আঘাত লেগেছে,যার দায় নেটফ্লিক্স বা পরিচালক এড়াতে পারেন না।
১৯৯৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর পাঁচ হরকত উল মুজাহিদিন সংঘটনের জঙ্গিরা ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের আইসি -৮১৪ বিমান হাইজ্যাক করেছিল। নেপাল, পাকিস্থান হয়ে আফগানিস্থানের কন্দহর বিমানবন্দরে নেমেছিল সেই বিমান। বিমানটিতে ১৯০জন যাত্রী ছিল যার মধ্যে ক্যাপ্টেন দেবী শরণ, ফার্স্ট অফিসার রাজিন্দর কুমার এবং ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার অনিল কুমার জাগিয়া সহ ১৭৯ জন যাত্রী এবং ১১ জন ক্রু সদস্য ছিলেন। দেশের পক্ষে অত্যন্ত যন্ত্রণার এই অপহরণ। কারণ যাত্রীদের প্রাণের বিনিময়ে লস্কর ই তৈবার প্রতিষ্ঠাতা মাসুদ আজাহার সহ তিন কট্টর জঙ্গি নেতা মুক্তি পেয়েছিল। তার পরবর্তী ১৩ বছর ভারতের বুকে একের পর এক জঙ্গি হানা,সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ ও ধ্বংসলীলা চলেছে। ফলে স্পর্শকাতর এই বিষয় নিয়ে পরিচালকের আরও গভীর ভাবনার প্রয়োজন ছিল বলেই মনে করছেন চলচ্চিত্র বিশেষজ ্ঞরা।
যদিও তুম বিন, আর্টিকেল ১৫, রা ওয়ান, মুল্ক, আফোয়ার মত ছবির পরিচালক অনুভব রিসার্চ এর ওপর ভিত্তি করেই ছবি নির্মাণ করেন। কিন্তু তিনি এই ক্ষেত্রে মারাত্নক ভুল করে ফেলেছেন বলা যায়। পঙ্কজ কাপুর, কানোয়ালজিৎ, অরবিন্দ স্বামী,বিজয় বর্মা এবং নাসিরুদ্দিন শাহ, দিয়া মির্জা অভিনীত এই সিরিজ নেটফ্লিক্স থেকে উঠে যেতে পারে বলেও অনেকের মত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে,তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের উপস্থিতিতে ডেকে কড়া বার্তা দেওয়া হল ছবির পরিচালক অনুভব সিনহা,ছবির ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর এবং ছবির প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্স ইন্ডিয়াকে। শুধু ডিসক্লেমার দিলে হবে না কাজ। নেটফ্লিক্স প্ল্যাটফর্ম থেকে সম্ভবত তুলে নেওয়া হবে এই ছবি। এর মধ্যেই টপ সিক্স ট্রেন্ডিং তালিকা থেকে সরে গিয়েছে ছবি। ফলে ওটিটি থেকে উঠিয়ে নেওয়ার প্রাথমিক কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।