মমতার গর্জন, বিজ্ঞাপনেও লিখছে প্রধানমন্ত্রীর রোড শো
৩৬৫ দিন। আগামীকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির রোড শো উত্তর কলকাতায়। নির্বাচন চলাকালীন প্রধানমন্ত্রীর ব্যাচ লাগিয়ে এই রোড শো নিয়ে প্রচার শুরু করেছে ভাজপা। প্রধানমন্ত্রীর ব্যাচ পড়ে নির্বাচনী রোড শো করার কড়া সমালোচনা করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা। অন্যদিকে ঝড়-ঝঞ্ঝা এবং ভোটের কারণে আগামী ১ জুন ইন্ডিয়া জোটের সর্বদলীয় বৈঠকেও যোগ দিতে পারবেন না মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু ইন্ডিয়া জোটকে ক্ষমতায় আনতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন মমতা বলেও জানালেন তিনি। সোমবার বড়বাজারে জনসভা করার পর গান্ধীবন থেকে মানিকতলা পর্যন্ত রোড শো শেষ করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগামী বুধবার আকাশ পথে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্যদিকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যেভাবে লাগাতার কুৎসা করে চলেছে একশ্রেণীর মিডিয়া, জনসভা থেকে তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এদিন মুখ্যমন্ত্রী যা বললেন,
১. প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল রোড শো করবেন করতেই পারেন। আমাদের কোন সমস্যা নেই। বিজেপির সিম্বল লাগিয়ে এই সম্পর্কে বিজ্ঞাপন দেওয়া এটা ঠিক নয়। আপনি বলুন যে দলের সভাপতি হিসেবে, কিংবা দলের লিডার হিসেবে আপনি রোড শো করবেন। আমার গায়ে মুখ্যমন্ত্রী লেখা নেই। কেন এই পদ্ধতি অবলম্বন করছেন? যদি আপনি জিতেই গিয়ে থাকেন তাহলে কেন করছেন? আমি গাড়িতে করে রোড শো করা পছন্দ করি না। আমি যতদিন পারবো হেঁটে হেঁটে পদযাত্রা করব।
২.ইন্ডিয়া জোট তো ১ তারিখে(জুন) মিটিং ডেকেছে। আমি বলেছি ১ তারিখ আমি যেতে পারব না। আমার এখানে ১০ আসনে ভোট আছে। ঐদিন পাঞ্জাবেও ভোট আছে। ঐদিন আরো অন্যান্য জায়গায় ভোট রয়েছে। একদিকে ভোট একদিকে রিলিফ সেন্টার। কিন্তু আমার প্রায়োরিটি হল রিলিফ সেন্টার তৈরি করে দেওয়া।
৩.আমি পরশুদিন যতটা পারবো ওপর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দেখব, কারণ নিচে জল ভরা আছে। যাদের ঘর বাড়ি ভেঙে গেছে ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে আপনাদের চিন্তার কোন কারণ নেই দিদি আছে আপনাদের পাহারাদার। আপনাদের খালি রাস্তায় থাকতে দেবো না, যতটা সাহায্য করবো পারবো।
8.এখনো বিজেপি ভয় দেখায়। ইডি করে দেবো, সিবিআই করে দেবো, ইনকাম ট্যাক্স করে দেব। লড়তে গেলে বাঘের মত লড়াই করো। ভয় পাওয়ার কোন দরকার নেই। এই বাংলা হল রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জায়গা। এখানে আমরা লড়াই করে বেঁচে থাকি।
৫.যদি আপনারা বিজেপি সরকারকে পাল্টাতে চান তাহলে তৃণমূলকে ছেড়ে ইন্ডিয়া জোট জিতবে না। আমরা যদি ৩৪ বছরের সিপিএমকে উৎখাত করতে পারি, বিজেপি কেও পারব।
৬.এই বড়বাজার একটা সম্পূর্ণ হিন্দুস্তান। সকল সম্প্রদায়ের মানুষেরা আপনারা একসঙ্গে থাকেন। আমি শুধু নির্বাচনের সময় নয়, সব সময় আপনাদের পাশে আছি।
৬. রিপাবলিক বাংলা বলে একটা চ্যানেল আছে, সেখানে দেখাচ্ছে আমি বলেছি কোরয়ান, পুরান সব খতম হয়ে যাবে। আমি কেন বলব?আপনাদের ইসলাম ধর্মের সব থেকে পবিত্র হচ্ছে কোরয়ান। আমি কেন তাকে খতম করব। ঈশ্বরকে খতম করার কাজ কি আমার? আল্লাহকে খতম করার কাজ কি আমার? আমার কাজ সাধারণ মানুষের সেবা করা।যারা বিজেপির কথায় আমাকে নিয়ে এই ধরনের ভিডিও বানাচ্ছে বানাবেন না। আপনার টাকার দরকার থাকলে আপনি টাকা নিয়ে নিন। এটা আমার দেখার বিষয় নয় আপনি কার কাছ থেকে টাকা নেবেন, কার থেকে টাকা নেবেন না। আপনি মিথ্যে টিভি দেখে যদি বিজেপিকে ভোট দেন তাহলে দেশের মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে না।
৭. সুদীপদাকে (সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়) নিয়ে ফেক ভিডিও তৈরি করে মারওয়ারি সম্প্রদায়ের লোকেদের দেখানো হচ্ছে। মাড়োয়ারি, বিহারী, রাজস্থানী, সকল সম্প্রদায়ের মানুষেরা আমাদের বন্ধু। আমরা একসঙ্গে মিলেমিশে বাংলায় থাকি। রাজস্থানী লোকেরা এখানে থাকে, ওরা আমাদের ভোট দেবে না কেউ বললে! আমি এটা বিশ্বাস করব না। কারণ ওরা আমাদের থেকেও বেশি বাঙালি। বিহারী লোকেরা যারা এখানে থাকে, যাদের সঙ্গে সারা বছর আমাদের যোগাযোগ রয়েছে, তারা আমাদের ভোট দেবে। ভোটের আগে একদিন ভোট চাইতে এলেই ওদের ভোট দেবেনা। আপনাদের যদি মনে হয় যে দিদি আপনাকে আমাদের পছন্দ না, কংগ্রেস কিংবা সিপিএমকে পছন্দ, বিজেপির কথায় চলবো, আমাকে বলুন তখনো কোন প্রকল্প বন্ধ হবে না।
৮. অন্য কোন রাজ্যে এত কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠাও নি। বাংলায় যা পাঠিয়েছো। তিন মাস ধরে নির্বাচন করার কোন দরকার ছিল না। এখন গরম বেশি, বৃষ্টি বেশি হয়, এই সময় নির্বাচন করা উচিত নয়। মোদিকে এদিক-ওদিক গিয়ে প্রচার করার জন্য, ওকে অ্যাডভান্টেজ দেওয়ার জন্য এতদিন ধরে নির্বাচন হচ্ছে।
৯. পোস্তা বাজারের সঙ্গে কলকাতা বন্দরের একটা ঝামেলা চলছিল জমি সংক্রান্ত বিষয়। সেই জমিও আপনারা অর্থাৎ পোস্তা বাজারের লোকেরা পেয়ে গিয়েছেন।
১০. ঘূর্ণিঝড় হওয়ার কারণে দুদিন ধরে রাতে মনিটরিং করছি। তিনজনের মৃত্যু হয়েছে সাইক্লোনের কারণে। প্রশাসন যা যা উদ্যোগ নেওয়ার কাল থেকেই করছে আগামী দিনেও করবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমি নিজে সার্ভে করব। আমি কালকে সন্ধ্যে ছটা থেকে আজকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত মনিটরিং করছিলাম। ডিজাস্টার টিমের সঙ্গে মনিটরিং করে কাজ করছিলাম।
১১. ঘনরেন্দ্র মোদি সরকারের একটাই কাজ। সরকার ফর দ্যা এজেন্সি, বাই দ্যা এজেন্সি, অফ দ্যা এজেন্সি।