এবার ঘোমটার আড়ালে ভাজপার খ্যামটা নাচ,নিউজ মিডিয়া ছেড়ে সোশাল মিডিয়ায় বিপুল টাকা ঢেলে
৩৬৫ দিন। মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়! তার জেরে জাতীয় নির্বাচন কমিশন বা কলকাতা হাইকোর্ট - এমনকি সুপ্রিমকোর্টকেও থোড়াই কেয়ার ভাজপার। তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে উগ্র সম্প্রদায়িক মিথ্যা তথ্য সম্বলিত বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য ভাজপাকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ, যে বিজ্ঞাপন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ার পরেও ভাজপার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় জাতীয় নির্বাচন কমিশনকেও ভর্ৎসনা করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট - কলকাতায় নরেন্দ্র মোদির রোড শো করার দিনেই সেই বিজ্ঞাপন আবার প্রকাশ করল বাংলার ভাজপা। অথচ মাত্র 24 ঘন্টা আগেই দেশের সর্বোচ্চ আদালত অত্যন্ত কড়া ভাষায় ভারতীয় জনতা পার্টিকে ধিক্কার জানিয়েছিল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে জব্দ করার জন্য এমন অশালীন নিন্দনীয় ভাষায় কুরুচিকর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করার জন্য।
কোন বিজ্ঞাপন ভাজপারসনাতন বিরোধী তৃণমূল শীর্ষক একটি বিজ্ঞাপন চলতি মাসেই কয়েকটি সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠা জুড়ে দিয়েছিল ভাজপা। যেখানে একের পর এক দাবি করা হয়েছে বাংলায় নাকি সরস্বতী পুজো হয় না, বাংলায় নাকি দুর্গাপুজো হয় না। অথবা বাংলায় নাকি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বৈষ্ণব ধর্মকে বাধা দেওয়া হয়। এমন একের পর এক চূড়ান্ত মিথ্যে সম্বলিত তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য তৃণমূলের বিরুদ্ধে উগ্র সম্প্রদায়িক প্রচারের বিজ্ঞাপন বানিয়েছিল বাংলার ভাজপা। যার বিরুদ্ধে প্রথমে একাধিকবার লিখিতভাবে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানায় তৃণমূল। কিন্তু ভাজপার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনা কর্তার ইচ্ছায় কর্ম কমিশন। তাই বাধ্য হয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের মামলা দায়ের করেছিল তৃণমূল।
সেই মামলা দায়ের হওয়ার পরেই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য প্রথমেই যেকোনো ধরনের সংবাদপত্রে বা সংবাদমাধ্যমে এমন বিজ্ঞাপন প্রকাশ করার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে জাতীয় নির্বাচন কমিশন ঘুমোচ্ছে কিনা প্রশ্ন তুলে দিয়ে তীব্র ভর্ৎসনা করেছিলেন। বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের পর্যবেক্ষণ ছিল, কমিশন চাইলে আগেই এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারত। তবে ভাজপার দাবি ছিল, বিজ্ঞাপন কাণ্ডে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে শোকজ করেছিল কমিশন। তাই আদর্শ আচরণবিধি থাকাকালীন কী ভাবে আদালত কমিশনের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারে, সেই প্রশ্ন তুলেছিল ভাজপা। যদিও সিঙ্গল বেঞ্চের পর হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েও তারা ধাক্কা খায়। সেই রায়ের পালটা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করে ভাজপা। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চও সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয়নি। উলটে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম মামলাকারীকেই ভর্ৎসনা করেন। তাঁর কড়া মন্তব্য, যে কোনও বিজ্ঞাপনের একটা লক্ষ্মণরেখা থাকা উচিত। এর পর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় ভাজপা।
প্রিম কোর্ট এই মামলায় জানিয়েছে, কলকাতা হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে তাতে তারা কোনও ভাবেই হস্তক্ষেপ করবে না। একই সঙ্গে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল ভাজপা, তা অপমানজনক বলে মনে করছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি জে কে মাহেশ্বরী এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের অবসরকালীন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ এমনই। কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছিল, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তৃণমূলের বিরুদ্ধে এইরকম কোনও বিজ্ঞাপন আর প্রকাশ করতে পারবে না ভাজপা। সেই রায়ও বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। দুই বিচারপতি এই রায় দিয়ে বলেছেন, বিজ্ঞাপনগুলি দেখা হয়েছে এবং তা দেখে বলাই যায় সেগুলি অপমানজনক। তাই যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তা বহাল রাখা হচ্ছে।
পতকাল অর্থাৎ সোমবার সুপ্রিম কোর্টের অবসরকালীন বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য উঠলে বিচারপতিরা তা শুনতেই রাজি হলেন না। ভাজপার উদ্দেশে তাঁদের মন্তব্য, এসব বিজ্ঞাপন অন্যকে খাটো করে দেখানো, এতে আপনাদেরই শুধু লাভ হয়। যাদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন তারা আপনাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হতে পারে কিন্তু তাদেরকে শত্রু বলে গণ্য করে নিজেদের নিম্ন রুচির পরিচয় দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু অদ্ভুতভাবে হাইকোর্ট এবং সর্বোপরি সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞার পরেও মোদির কলকাতা সফরের দিনে ফের সেই একই বিজ্ঞাপন বিন্দুমাত্র পরিবর্তন না করেই নিজেদের অফিশিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল থেকে প্রকাশ করল ভাজপা।
প্রসঙ্গত গতকাল সুপ্রিম কোর্টে ভাজপাকে তীব্র ভর্ৎসনা করার পরে তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সাকেত গোখলে বলেন, ভাজপাকে আরও একটি থাপ্পড় মারল সুপ্রিম কোর্ট। তৃণমূলকে নিশানা করে বিজেপিকে যে মিথ্যা এবং বিদ্বেষপরায়ণ বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতে নিষিদ্ধ করেছিল, সেটার বিরুদ্ধে বিজেপি যে আবেদন করেছিল, তা শুনতে রাজি হয়নি সুপ্রিম কোর্ট। এখানে সবথেকে লজ্জার বিষয়টা কী, জানেন? হাইকোর্ট নিষিদ্ধ করেছিল। সেটাই বজায় রাখল সুপ্রিম কোর্ট। অথচ মোদীর সহযোগী জাতীয় নির্বাচন কমিশন কোনও পদক্ষেপ করেনি।