৩৬৫ দিন। প্রত্যাশিতভাবেই গণঅভ্যুত্থানের জেরে পতন হলো বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকারের। বাংলাদেশ জুড়ে পিপুল গণঅভ্যুত্থান এবং গণবীক্ষণের জেরে আজ দুপুরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। এরপরে সেনাবাহিনীর মধ্যস্থতায় সেনাবাহিনীর বিশেষ বিমানে বাংলাদেশ থেকে অজ্ঞাত গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হন হাসিনা। সূত্র মার পথে জানা গিয়েছে দেশ ছেড়ে পালানোর সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন তার বোন শেখ রেহানা এবং পরিবারের অন্তত আরো একজন সদস্য। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘোষণা করেন, আমরা বাংলাদেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ইন্টেরিম গভর্মেন্ট বা অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করবো। সাধারণ মানুষের কাছে অনুরোধ আপনারা শান্তি বজায় রাখুন।
বাংলাদেশের ঘটনাক্রমস্কুল কলেজে ভর্তি এবং সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনমনীয় মনোভাবের জন্য তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে। গত কয়েকদিন ধরেই ছাত্রদের আন্দোলন থামানোর জন্য গঠনমূলক আলোচনার পরিবর্তে পুলিশকে শুট অ্যাট সাইট অর্ডার দিয়েছিলেন হাসিনা। যার ফলে গত ১০ দিনের মধ্যেই বাংলাদেশে নিহত হয়েছে অন্তত ৭০০ ছাত্র ছাত্রী। এই পরিস্থিতিতে গতকাল আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীরা সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় গণভবন অভিযানের ডাক দেয়।
বাংলাদেশে ইন্টারনেট এবং মোবাইল পরিষেবা বন্ধ থাকায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাক্রমে কিছু হেরফের হয়ে থাকতে পারে। আমাদের নিজস্ব সূত্র এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, গণভবন অভিযানের ডাক দেওয়ার পরেই গতকাল রাতে যখন একদিনের মধ্যে শতাধিক আন্দোলনকারী নিহত হয়ে গিয়েছেন এবং বেশ কয়েকজন পুলিশের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, সেই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেন, আন্দোলনকারীরা যেভাবে গণভবন অভিযানের ডাক দিয়েছে তাতে আগামীকাল সকাল থেকে গণভবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। আপনি সেনাবাহিনী মোতায়েন করে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলেও তা মোটেই যুক্তিযুক্ত হবে না বলে মনে হয়। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। কিন্তু সেনাপ্রধানের বক্তব্য উড়িয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে রাজি হননি। উল্টে তিনি সেনাবাহিনীকে অনুরোধ করেন আরো কয়েকদিন যেন তাকে সেনা নিরাপত্তায় রাখার ব্যবস্থা করা হয়। অন্তর্বর্তীভাবে সেনাবাহিনী দেশে শান্তি ফেরানোর চেষ্টা করুক কিন্তু সরকার ভাঙ্গবো না। পাশাপাশি গতকাল রাত বারোটার কিছু পরে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা ঢাকার বিশিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে মধ্যস্থতার জন্য নিয়ে এসে সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনায় বসায় বলেও জানা গিয়েছে। তাদের প্রত্যেকের পক্ষ থেকে রফাসূত্র দেওয়া হয় অন্তর্বর্তীভাবে সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা দিলেও শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন না। কারণ হিসেবে তারা বলেন এটা পুরোটাই পাকিস্তানের মদতে রাজাকারদের আন্দোলন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসরে নামেন সেনাপ্রধানপ্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়তে শেখ হাসিনা রাজি না হওয়ায় গতকাল গভীর রাত থেকেই বাংলাদেশের সেনাপ্রধান দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যার মধ্যে ছিল শেখ হাসিনার নিষিদ্ধ করা জামাত এবং আন্দোলনকারী ছাত্রদের সংগঠনগুলিও। এরপরে আজ গতকাল রাতেই সেনাপ্রধান বৈঠকে বসেন বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি, জাতীয় পার্টি এবং জামায়েত ইসলামীর সঙ্গে। উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অধ্যাপক নজরুল এবং জোনায়েদ শাকি। বাংলাদেশের আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদের মধ্যেও অধ্যাপক নজরুলের প্রতি শ্রদ্ধার বিষয়টি মাথায় রেখেই তার নেতৃত্বে সর্বদলীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যদিও এই বৈঠকে যোগ দেয় নি শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ।
৪৫ মিনিটের নোটিশে দেশ ছাড়লেন হাসিনাআজ সকালে গোটা দেশ থেকে যখন আন্দোলনকারীরা গণভবনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় তখন অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির আঁচ করে দুপুর ১টা নাগাদ প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করতে রাজি হন হাসিনা। বিবিসি বাংলার রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশ ছাড়ার আগে জাতির উদ্দেশে শেষ একটি বার্তা রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তবে সেনা নাকি সেই বার্তা রেকর্ড করতে দেয়নি। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর তরফে প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে সময় বেঁধে দেওয়া হয় ইস্তফা দেওয়ার জন্য। ৪৫ মিনিট সময় তাঁকে দেওয়া হয়েছিল বলে খবর।
দেশজুড়ে ভাঙচুর বঙ্গবন্ধুর মূর্তিশেখ হাসিনা দেশ ছাড়তেই বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের একের পর এক মূর্তি ভাঙচুর করতে শুরু করে আন্দোলনকারীরা। বঙ্গবন্ধুর মূর্তির উপরে উঠে হাতুড়ির মেরে মূর্তি ভাঙছেন বিক্ষোভকারীরা। ঢাকা জুড়ে শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট। যদিও যে কোন দেশে গণঅভ্যুত্থানের ঘটনায় এগুলি খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।
হাসিনা এখন কোথায়সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, দুপুর আড়াইটা নাগাদ ঢাকায় নিজের বাসভবন থেকে বেরিয়ে গোপন পথে ঢাকায় সেনাবাহিনীর ক্যান্টনমেন্ট এর ভেতর দিয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিশেষ সি-130 বিমানে বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের বায়ু সীমা অতিক্রম করেন হাসিনা। খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গিয়েছে উত্তরপ্রদেশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হিন্দোন এয়ারবেসে ভারতীয় বায়ু সেনার সি 17 এবং সি ১৩০ জে সুপার হারকিউলিস এয়ারক্রাপ্টের হ্যাঙ্গারে রাখা হয়েছে তাঁর বিশেষ বিমান। ভারতীয় বায়ুসীমার মধ্যে প্রবেশ করার পর থেকেই শেখ হাসিনার বিশেষ বিমানের উপরে কঠোর নজরদারি রেখেছে ভারতীয় বায়ু সেনা এবং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি।