অন্যের রান্নাঘরে আগুন দিতে গিয়ে
৩৬৫ দিন। আরজি করের আগুন এবার ছড়িয়ে পড়ল ভাজপার রান্না ঘরেও। গত প্রায় দেড় বছর ধরে ভাজপাশাসিত মণিপুরে অরাজক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ভাজপা নেতাদের প্রত্যক্ষ মদতে আদিবাসী মহিলাদের নগ্ন করে প্রকাশ্য রাস্তায় প্যারেড করানোর পাশাপাশি গণধর্ষণের ঘটনা নিয়ে দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছিল। মনিপুরের সেই ব্যর্থতাকে দেশবাসীর চোখের সামনে থেকে আড়াল করার তাগিদে বাংলায় আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠামাত্র রাজনীতির তাস বানিয়ে জুয়ার আসরে নেমে পড়েছিল ভাজপা। যার সঙ্গে বাংলায় নিজেদের শাসনকালে ঘটে যাওয়া অসংখ্য গণধর্ষণ এবং গণহত্যার ঘটনাকে ঢাকা দেওয়ার তাগিদে মমতার বিরুদ্ধে ভাজপাকে যোগ্য সঙ্গত দিতে নেমে পড়েছিল বাংলার সিপিএম। কিন্তু বাংলায় একটি ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে যখন মমতার সরকারকে ফেলে দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি অথবা মমতাকে নবান্ন থেকে উৎখাত করার জন্য হিংসাত্মক আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিতে শুরু করেছে ভাজপা, সেই সময় বাংলা সহ দেশের বিরোধী শাসিত রাজ্য গুলিতে কুৎসা করার জন্য যেখানে ষড়যন্ত্রের কারখানা ভাজপার সেই রান্নাঘরেই এবারে আগুন জ্বলে উঠলো। মনিপুরের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে গোটা মহারাষ্ট্র জুড়ে। সেখান থেকে মধ্যপ্রদেশ, যোগী আদিত্যনাথ এর উত্তর প্রদেশ, বিহার, রাজস্থান - ভাজপার ডাবল ইঞ্জিন মডেলে চলা দেশের প্রত্যেকটি ভাজপা শাসিত রাজ্যে কিভাবে নারী নির্যাতন এবং রেকর্ড হারে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে তার বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে তীব্র আন্দোলন।
হাইকোর্ট না বললে ধর্ষণে অভিযোগ নয় মহারাষ্ট্রেবাংলায় বা স্পষ্ট করে বলতে গেলে আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার 12 ঘণ্টার মধ্যে কলকাতা পুলিশ অন্যতম অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় কে গ্রেফতার করা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে বাংলা অচল করে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি তুলেছে ভাজপা। অথচ ভাজপা শাসিত মহারাষ্ট্রে আজ পা নেতার মালিকানাধীন প্রাইভেট স্কুলে নার্সারীর দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও বোম্বে হাইকোর্ট যতক্ষণ না মহারাষ্ট্রের ভাজপা সরকারকে ভর্ৎসনা করেছে, তার আগে পর্যন্ত মূল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোন লিখিত অভিযোগই নেয় নি ভাজপা সরকার। এফ আই আর তো বহু দূরের কথা! যার প্রেক্ষিতে বোম্বে হাইকোর্ট মহারাষ্ট্রের ভাজপা সরকারকে বলে, মহারাষ্ট্র তো নিয়ম হয়ে গিয়েছে, যতক্ষণ না হাইকোর্ট নির্দেশ জারি করছে ততক্ষণ যত খুশি মহিলা ধর্ষিতা হন বা যৌন নিগৃহীত হন আপনাদের সরকার বা আপনার পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেবেনা এবং অভিযোগ দায়ের করবে না। মহারাষ্ট্র মহিলাদের জন্য কতখানি সুরক্ষিত তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। প্রত্যেক সময় তো আদালতের পক্ষে নির্দেশ দেওয়া সম্ভব নয় যে তারপরে আপনারা অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত শুরু করবেন! কয়েকদিন পরেই যেখানে মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচন, এই পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রের প্রত্যেক দিন যেখানে ধর্ষণের সংখ্যা দেশের মধ্যে শীর্ষস্থান দখলের লড়াইতে নেমেছে, অক্সিজেন যুগিয়েছে মহারাষ্ট্রে ভাজপা বিরোধী ইন্ডিয়া জোট শরিক দলগুলিকে। বিরোধীরা ডাক দিয়েছে মহারাষ্ট্র ধর্মঘটের।
বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে মণিপুরভাজপা শাসিত মণিপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তার উপরের নগ্ন করে প্যারেড করানোর পাশাপাশি সেখানকার আদিবাসী মহিলাদের যেভাবে গণধর্ষণ করেও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ভাজপা নেতা এবং দুষ্কৃতীরা তারপরে সেই সমস্ত ধর্ষকদের পক্ষ নিয়েই মাঠে নেমে ধর্ষকদের বাঁচাতে মরিয়া চেষ্টা করছেন ভাজপার মুখ্যমন্ত্রী। বাংলায় একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটা মাত্র 12 ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার হওয়া সত্ত্বেও ভাজপা যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে সেখানে দেড় বছর ধরেও মনিপুরের ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার করা তো দূরের কথা তাদের পক্ষে ওকালতি করতে নামা মুখ্যমন্ত্রীকে এবারে ঘাড় ধরে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য শুরু হয়েছে কোন আন্দোলন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড তথ্য থেকে শুরু করে গত দুই দশকে ভারতের ক্রাইম রেকর্ডস বলে দেশের ভাজপা শাসিত রাজ্য গুলিতেই সবথেকে বেশি ধর্ষণের রমরমা এবং ধর্ষকদের বাঁচানোর জন্য বরাবর বরাভয় নিয়ে এগিয়ে এসেছে ভাজপা সরকার। যে তালিকায় রয়েছে উত্তরপ্রদেশের উন্নাও, হাথরাস, প্রয়াগরাজ। গুজরাটে বিলকিস বানো গণধর্ষণে প্রমাণিত অপরাধীদের যাবজ্জীবন সাজা রদ করে মুক্তি দেওয়ার পরে তাদের গলায় মালা পরিয়ে সসম্মানে সমাজে প্রতিষ্ঠা করার মত ঘটনাও রয়েছে মোদির নিজের রাজ্যে। কিন্তু এবারে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে ভাজপার এই দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন।