৩৬৫ দিন। কুৎসা-অপপ্রচার উড়িয়ে বাংলাকে সম্প্রীতির বাঁধনে বেঁধে রাখতে বদ্ধপরিকর রাজ্য প্রশাসন। সোমবার রাজ্য সরকারের উদ্যোগে রাখি পূর্ণিমাতে সম্প্রীতি দিবস উপলক্ষে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করা হয় গোটা রাজ্যজুড়ে। অন্যদিকে রবীন্দ্র ভাবাদর্শে রাখি বন্ধন সম্পর্ক অটুট রাখতে উদ্যোগ নিল ফেডারেশন অফ সিনে টেকনেশিয়ান এবং এন্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া। আরজিকরের ঘটনা দোষীদের শাস্তির জন্য প্রতিবাদ করেছে ফেডারেশন। তবে রাখি বন্ধনের মাধ্যমে শিল্পী ও কলাকুশলীদের সম্পর্ক অটুট রাখতেই সোমবার শহরের সমস্ত শ্যুটিং ফ্লোরে রাখি পড়ানো হয়। শুধু ভাই নয় বোনেদেরও রাখি পড়ানো হয়। উদ্দেশ্য একটাই? শিল্পী এবং কলাকুশলীদের মধ্যে সম্পর্ক আরও গাঢ় করতে। শ্যুটিং ফ্লোরে জাত-ধর্ম, ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে কাজ হয়। সেই সম্পর্কই অটুট রাখার বার্তা দিতেই এই প্রথমবার শ্যুটিং ফ্লোরে হল রাখি উৎসব। এই বিষয়ে ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস জানিয়েছেন, আরজিকরের ঘটনায় আমরা মর্মাহত। দোষীদের কঠিন সাজা চাই। তবে শ্যুটিং ফ্লোরে আমরা সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করি। সেই সম্পর্ককে অটুট রাখ তেই এই রাখি বন্ধন পালন করলাম আমরা। এদিন ২২টি স্টুডিও, ৭০টি ফ্লোরে ৬১জন ফেডারেশনের পদাধিকারি এবং ৮০০০ কলাকুশলী ও শিল্পীরা রাখি বন্ধন উৎসব পালন করেন। এই রাখি বন্ধন উৎসবে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক গৌতম ঘোষ, উদ্যোক্তা ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস, ইমপা-র সভাপতি প্রিয়া সেনগুপ্ত, ও অভিনেতা অভিনেত্রী বনি ও কৌশানি। প্রসঙ্গত, ১৯০৫ সালের জুন মাস। লর্ড কার্জন তখন ভাইসরয়। সেইসময় তিনি বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব ঘোষণা করলেন। ওই বছরেরই অগাস্ট মাসে বঙ্গভঙ্গ জন্য আইন পাশ হয়। জানানো হয়, এই আইন কার্যকরীর হবে ১৯০৫-এরই ১৬ অক্টোবর, বাংলায় ৩০ আশ্বিন। সেই সময়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতায় মানুষ সামিল হয়। ঠিক হয়, ওই দিন বাংলার মানুষ পরস্পরের হাতে বেঁধে দেবেন হলুদ সূতো বাঁধবেন। এই দিনকে মিলন দিবস হিসেবে পালন করা হয়। কবিগুরু এই দিনটিকে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করার ডাক দেন। বাংলায় হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌভ্রাতৃত্বকে ফুটিয়ে তুলতেই এই উদ্যোগ নেন রবীন্দ্রনাথ।
রাজ্যের উদ্যোগে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে রাখি বন্ধন উৎসব পালন রাজ্য সরকারের উদ্যোগে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করা হল সোমবার। রাখি বন্ধন উৎসবকে রাজ্য সরকার সম্প্রীতি দিবস হিসেবে পালন করে থাকে প্রতিবছর। রাজ্য সরকারের যুব কল্যাণ ও ক্রীড়া দপ্তরের উদ্যোগে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত হয় রাখি বন্ধন উৎসব। রাখি বন্ধন অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে একে অপরের পাশে থেকে রক্ষা করা শপথ নেওয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। দপ্তরের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিশিষ্ট জনেরা। উল্লেখ্য, সম্প্রীতির ও সংহতির মেলবন্ধন রাখি বন্ধন উৎসব। এদিন সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে একে অপরের হাতে রাখি পরিয়ে উৎসবে শামিল হন সকলে। উল্লেখ্য, কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে যুবসমাজ হাজির হয়েছিল এদিনের অনুষ্ঠানে। এদিন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ শতাব্দী রায়, ক্রীড়া দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি সহ বিশিষ্ট জনেরা। সম্প্রীতি আরজি করের ঘটনা নিয়ে অপরাধীর দ্রুত কঠোরতম শাস্তি মৃত্যুদণ্ড যাতে হয় সেই দাবি তোলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম ছাড়াও রাজ্যের সকল ব্লকে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে সম্প্রীতি দিবস উপলক্ষে রাখি পূর্ণিমাতে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করা হয়। রাজ্যের সর্বত্র রাখি বন্ধন উৎসবের মধ্যে দিয়ে বাংলায় সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দে ওয়া হয়।