কেন্দ্রের ভাজপা সরকার সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছিল, ইভিএম হ্যাক করা যায় না। অথচ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু, জাস্টিস গাঙ্গুলি ছোটাছুটি করছেন
৩৬৫ দিন। দিন কয়েক আগেই কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের ভোটগ্রহণের প্রায় 36 ঘন্টা পরে শুভেন্দু অধিকারী তথা কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের ভাজপা প্রার্থী শুভেন্দুর ভাই সৌমেন্দু অধিকারীর বাসভবন শান্তি কুঞ্জের লাগোয়া প্রভাতকুমার কলেজের স্ট্রংরুমে ইভিএম-এ কারচুপি করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল সৌমেন্দুর ২ পোলিং এজেন্ট। ভাজপা নিয়ন্ত্রিত কর্তার ইচ্ছায় কর্ম কমিশনের দৌলতে তাদের বিরুদ্ধে কোনরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামের গণনা হয়ে যাওয়ার পরেও প্রথমে মমতাকে বিজয়ী ঘোষণার পরে আচমকা লোডশেডিং এবং তারপরেই বিজয়ের নাম বদলে হয়ে গিয়েছিল শুভেন্দু অধিকারী। সেই মামলা আজও বিচারাধীন। ভাজপার তৈরি নির্বাচন কমিশন ভাজপার নিয়ন্ত্রণে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনী ভাজপার ঠিক করা বা মনোনীত পুলিশ অবজার্ভার থাকা সত্ত্বেও এবারে কিন্তু আর একুশের ভোটের মতো আত্মবিশ্বাসী হতে পারছেন না শুভেন্দু অধিকারী নিজেও।
আসলে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ডিপ্লোম্যাটিক প্রটোকল তৈরি হয়ে গিয়েছিল যখনই কোন বিদেশি রাষ্ট্রনায়করা ভারতে আসেন কোন সরকারি বৈঠকে রাগে তারা শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করতেন মহাত্মা গান্ধীর সমাধিস্থলে। কারণ গোটা বিশ্বের কাছে ভারতীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে সবার প্রথমে যে নামটি আছে তা হল মহাত্মা গান্ধীর নাম।।
প্রবল হারাতঙ্কে রাতের ঘুম উড়েছে ভাজপার। এবারের লোকসভার নির্বাচনের তৃতীয় দফা ভোটগ্রহণের পর থেকেই গোটা দেশে যেভাবে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে এবং বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে আসছে ভাজপার পরাজয়ের সম্ভাবনা প্রবল ততই যেন উন্মত্ত প্রায় হয়ে উঠেছেন ভাতপা নেতারা। মূলত ষষ্ঠ দফা ভোট গ্রহণের পর থেকেই রাতে ঘুমানো বন্ধ হয়ে গিয়েছে বাংলার ভাজপা নেতাদের। কারণ এতকাল মোদি সরকারের আমলে দেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে ভাঁজ বা ইভিএম হ্যাক করতে পারে বা ভাঁজ বা স্ট্রংরুমে রাখা ইভিএমএ কারচুপি করতে পারে বলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি দেশজুড়ে বারে বারে প্রতিবাদ করেছে। শুধুমাত্র প্রতিবাদ বা মৌখিক অভিযোগ নয় সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়েছেও বারে বারে। কিন্তু প্রত্যেকবারে মোদি সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে ইভিএম হ্যাক করা সম্ভব নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছেন তার নিয়ন্ত্রণে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনী যতক্ষণ ট্রংরুমের পাহারার দায়িত্বে থাকবে স্ট্রংরুমে ঢুকে ইভিএমএ কারচুপি করাও কারো পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী অথবা অমিত শাহের আশ্বাসে আর নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না বাংলার ভাজপা নেতা শুভেন্দু অধিকারী অথবা সুকান্ত মজুমদার বা অভিজিৎ গাঙ্গুলীরা। তাই রাতে না ঘুমিয়ে জেগে বসে থাকতে হচ্ছে তাদের ইভিএম পাহারা দেওয়ার জন্য।
তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের ইভিএম রাখার জন্য স্ট্রং রুম করা হয়েছে কোলাঘাট কেটিপিপি হাইস্কুলে। আর সেই স্কুলের পিছনের চত্বর মেসাড়া গ্রাম। গতকাল গভীর রাতে হঠাৎ করেই এলাকার ভাজপা নেতারা অভিযোগ তোলেন, যে গাড়িতে করে কয়েকজন দুষ্কৃতীরা হাতে ওয়াকি টকি নিয়ে ঘোরাফেরা করছে। আর তারপরেই ভাজপা কর্মী সমর্থকরা ওই কর্মীদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখায়। ঘটনাস্থলে যায় কোলাঘাট থানার বিশাল বাহিনী। যদিও সেখানে কাউকেই খুঁজে পায়নি পুলিশ। কিন্তু ইভিএম বদলে ফেলে তাকে হারিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে অভিযোগ তুলে গণনার আগেই কাঁদুনি গাইতে দুহাত-পা ছড়িয়ে বসে পড়েন তমলুকের ভাজপা প্রার্থী অভিজিৎ গাঙ্গুলী। অভিজিৎ গাঙ্গুলির অভিযোগ, ইভিএম চেঞ্জ করার জন্য তৃণমূল আর আইপ্যাক-এর ছেলেরা এসেছিল। তবে আমরা প্রতিরোধ করার পর পুলিশের সাহায্য নিয়ে বেরিয়ে চলে যায়। গত সপ্তাহেই ভাজপা নেতা সৌমিত্র খাঁ, লকেট চট্টোপাধ্যায়, বাংলায় ভাজপা রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দাবি করেছিলেন, ইভিএমে কারচুপি করা হতে পারে। সুকান্ত মজুমদার বলেছিলেন, আমরা আমাদের কর্মীদের সব জায়গাতেই সতর্ক থাকতে বলেছি। কারণ ছলের দুর্বুদ্ধির অভাব হয় না। দোসর আই প্যাক। চেষ্টা করতে পারে যদি ইভিএম গুলোকে কিছু করা যেতে পারে।
৪-এ গণনা, ভাজপার ঘুমোতে মানাএকুশের বিধানসভা নির্বাচনের পরে মমতা তৃণমূলের সমস্ত নেতাকর্মীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন রাত জেগে স্ট্রংরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে ইভিএম পাহারা দিতে। এবার মমতার ফর্মুলায় আগামী চার জুন পর্যন্ত বাজপা নেতাকর্মীদের ঘুমোতে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন শুভেন্দু অধিকারী। সপ্তম দফা ভোট গ্রহণের আগে ভাজপা নেতাকর্মীদের জন্য শুভেন্দুর নিদান, গণনায় কারচুপির চেষ্টা হবে। কমিশনকে সজাগ থাকতে বলেছি। কোনওরকম এদিক ওদিক বরদাস্ত করা হবে না। একুশের ভোটে গণনা কেন্দ্রে ঢুকে পড়েছিল আই-প্যাকের টিম। তারা অন্তত ৪০-৫০ আসনে গণনায় কারচুপি করেছিল। এবার কাউন্টিং সেন্টারে আইপ্যাকের থেকে কেউ ঢুকলে ধোলাই দেওয়া হবে। আপনাদের আজকের রাতটা কোনরকমে কাটাতে হবে। কালকেও সতর্ক থাকতে হবে। আমি জেগে আছি, নো প্রবলেম।
১০ বছর ভাজপা ক্ষমতায় থাকার পরে ইভিএম কখনো হ্যাক করা সম্ভব নয় বলে বারে বারে লোকসভা রাজ্যসভা অথবা সুপ্রিম কোর্টে রীতিমতো হলফনামা দিয়ে দাবি করেছে তারা। নিজেদের নিয়ন্ত্রণে ভোটের পরে ইভিএম থাকা সত্ত্বেও তা হ্যাকের আশঙ্কা করে রাত জাগা তাহলে কেন? তাহলে কি এখন থেকেই ভোটে হেরে যাওয়ার পরের অজুহাত তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন শুভেন্দু সুকান্তরা? প্রশ্ন তৃণমূলের।