৩৬৫ দিন। আরজিকর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণের ঘটনায় ধৃত সঞ্জয় রায়ের সঙ্গে আরো কেউ যুক্ত ছিল নাকি সে একাই এমন নারকীয় ঘটনা ঘটিয়েছিল? তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার পরে পঞ্চম দিনেও এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। কারণ এখনো পর্যন্ত সিবিআই এর গোয়েন্দারা নিশ্চিত হতে পারেননি ধৃত সঞ্জয় রায় একা ছিল নাকি তার সঙ্গে এক বা একাধিক ব্যক্তি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। তার মধ্যেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে এবারে দাবি তোলা হলো সিবিআই তদন্তভার হাতে নেওয়ার পরে পাঁচ দিন হয়ে গেলেও তদন্তে কোন ব্রেক থ্রু এলোনা কেন?
প্রসঙ্গত, আরজিকর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেপড়ুয়া চিকিৎসককে ধর্ষণ করে হত্যার ঘটনার কথা জানাজানি হওয়ার ১২ ঘন্টার মধ্যেই সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সঞ্জয় রায় নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। কিন্তু তদন্তে বেশি দূর এগোনোর আগেই মৃতার বাবা-মায়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ তদন্তের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এর হাতে তুলে দেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি।
গতকাল সিবিআই এর তদন্তকারীরা গ্রেপ্তার হওয়ার সঞ্জয় রায়ের বাড়িতে যাওয়ার পাশাপাশি তার মায়ের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলে বোঝার চেষ্টা করেন কেন সঞ্জয় এ ধরনের কাণ্ডকারখানা করে থাকতে পারে। পাশাপাশি সিবিআই হেফাজতে থাকা সঞ্জয় কে জিজ্ঞাসাবাদ করে নাকি সঠিক কোন তথ্য এখনো পর্যন্ত সিবিআই আধিকারিকরা হাতে পানি বলেই সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। সেই সঙ্গে সিবিআই এর তদন্তকারীদের ধারণা ধৃত সঞ্জয় মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ না হতে পারেন। তার জন্য দিল্লিতে সিবিআই সদর দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ বা সাইক্রিয়াটিস্ট পাঠানোর জন্য কলকাতার সিবিআই দপ্তর থেকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধেও তথ্য পায়নি সিবিআইআরজিকর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ কে গ্রেফতার করার জন্য বারে বারে আন্দোলনকারী ভাজপা ও সিপিএম দাবি তুললেও কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে বারে বারে জানানো হয়েছিল তদন্তে দোষী সাব্যস্ত যারা হবেন তাদেরকেই গ্রেপ্তার করা হবে। কলকাতা হাইকোর্টে শুভেন্দুর আইনজীবী মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন আরজিকরের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে। কিন্তু কেন্দ্রীয় তদন্তকারীর সংখ্যা সিবিআই তদন্তভার হাতে নিয়ে পরপর দিন দিন সন্দীপ ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও প্রয়োজনীয় নথিপত্র দেখার পরে তাদের বাড়ি ছেড়ে যেতে দিয়েছে। আজ সকালেও সন্দীপ ঘোষকে প্রায় ১৫ মিনিট জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআই আধিকারিকরা।
মমতার দেওয়া ডেডলাইন শেষ আজদুর্ভাগ্যজনক এই ঘটনার সময় মমতা কলকাতায় উপস্থিত না থাকলেও ঝাড়গ্রাম থেকে কলকাতায় ফিরেই নেতার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে ছুটে গিয়েছিলেন সোদপুরের পানিহাটিতে তাদের বাড়িতে। সেখানে গিয়েই গত সোমবার অর্থাৎ ১২ অগাস্ট মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন কলকাতা পুলিশকে রবিবারের মধ্যে সম্পূর্ণ তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে এবং প্রকৃত দোষীকে খুঁজে বের করে ফাঁসিতে ঝোলানোর ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে রাজ্য সরকার নিজেই সিবিআই এর হাতে তদন্তভার তুলে দেবে নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রথমে ভাজপা নেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং তার পরে নেতার বাবা-মা ছুটে যান কলকাতা হাইকোর্টে। দাবি করেন সিবিআই তদন্তের। প্রত্যাশিতভাবেই কলকাতা হাইকোর্ট তৎক্ষণাৎ এই মামলার তদন্তভার তুলে দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এর হাতে। এরপর থেকেই সিবিআই কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে ধৃত সঞ্জয় রায়কে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পাশাপাশি যাবতীয় সিসিটিভি ফুটেজ থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ তদন্তভার তুলে নেয় নিজেদের হাতে। এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন রবিবারের মধ্যে প্রকৃত দোষীকে খুঁজে বের করে ফাঁসি দিতে হবে। বিচারের দাবিতে মমতার নেতৃত্বে মহা মিছিল হয় কলকাতার রাজপথে। তবে মমতার দেওয়া সেই ডেড লাইন আজ হওয়া সত্বেও এখনো পর্যন্ত সিবিআই এর পক্ষ থেকে কাউকে যেমন গ্রেফতার করা হয়নি তেমনভাবেই তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কেও কোন তথ্য জানানো হয়নি সরকারিভাবে।
তদন্তের অগ্রগতি জানাক সিবিআই দাবি তৃণমূলেরআজ তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেব এই প্রসঙ্গ তুলে ধরে তীব্র আক্রমণ করে লিখেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই দাবি করেছিলেন কলকাতা পুলিশকে আগে যে ডেডলাইন দেওয়া হয়েছিল সেই ১৮ অগাস্ট অর্থাৎ আজকের মধ্যেই সিবিআইকে তদন্ত সম্পূর্ণ করতে হবে আর জি করের ঘটনায়। গত ১৪ আগস্ট সিবিআই তদন্তের দায়িত্ব হাতে নেওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো তথ্য জানা যায়নি। এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত একমাত্র যে গ্রেফতার হয়েছে তাও করেছিল কলকাতা পুলিশ। সিবিআই এর তদন্ত এগোচ্ছে না কেন? এই মামলায় গত চার দিনে সিবিআই কতটুকু এগোতে পেরেছে? নারকীয় এই ঘটনায় ভিকটিমের বিচারের দাবিতে যখন সকলে সরব হয়েছে তার প্রেক্ষিতে সিবিআই এর এই কর্মপদ্ধতি মানুষকে ভরসা যোগানোর জন্য একেবারেই যথেষ্ট নয়। জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড। আজকের মধ্যেই সিবিআই এর প্রেস কনফারেন্স ডেকে তদন্তে অগ্রগতি সম্পর্কে বাংলার মানুষকে জানানো উচিত।
সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন কল্যাণেরশ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলছেন, ৯৬ ঘণ্টা হয়ে গেলেও সিবিআই একজনকেও গ্রেফতার করতে পারল না কেন? বাম-রামের এলিট মহিলারা লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ করতে চাইছে। আইএমএ বিজেপি দ্বারা পরিচালিত। সিবিআই সিপিএম বিজেপির দালালি করবে। বিচার বিলম্বিত হবে। কারন ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্টে হবে না সিবিআই কোর্টে হবে।